ডেস্ক নিউজ:
সরকারের বিভিন্ন খাতে বিনামূল্যে সেবা দিতে সোনালী ব্যাংকের বছরে ক্ষতি হচ্ছে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা। আর এ ক্ষতির কারণে ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতির মুখে পড়ছে। এমনি পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকারি সেবায় বাজারমূল্যের কাছাকাছি ফি নির্ধারণের অনুরোধ করেছেন সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো সোনালী ব্যাংকের একটি চিঠিতে ব্যাংকটির এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ঋণের বিপরীতে ফি ও কমিশন এবং বিনিময়মূল্য না পাওয়ায়, প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে যথাযথভাবে সুদ না পাওয়া এবং ঋণ পরিশোধ না করে সরকার দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ইস্যু করায় সোনালী ব্যাংকের বছরে প্রায় ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। ব্যাংকের খরচের তুলনায় আয় কম হওয়ায় ব্যাংকটির আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বলা হচ্ছে। বিনামূল্যে বিভিন্ন সেবা দিতেই সোনালী ব্যাংকের জনবলের একটি বড় অংশকে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে দেশের অন্য ব্যাংকগুলো যেমন বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সেবা বাজারজাত করে মুনাফা করছে, সেখানে সোনালী ব্যাংককে লোকসান দিতে হচ্ছে। এতে অন্য ব্যাংকগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। বার বার মূলধন ঘাটতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এতে দেশে বিদেশে ব্যাংকটির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যব্যয়। এ পরিস্থিতির উত্তরণ হওয়া জরুরি। অন্যথায় লোকসানের ঘানি টানতে টানতে অতীতের অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো সোনালী ব্যাংককেও একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।
সোনালী ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক সরকারি খাতে বিনামূল্যে ও নামমাত্র মূল্যে ৫১ ধরনের সেবা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বিনামূল্যে ৩৭ ধরনের সেবা দিচ্ছে। আর নামমাত্র মূল্যে দিচ্ছে আরো ১৪ ধরনের সেবা। এর মধ্যে আছে, শিাবৃত্তি, মুক্তিযোদ্ধাভাতা, বয়স্কভাতা, অতি দারিদ্র্যভাতা, ভিুকভাতা, চিকিৎসাভাতা, অবসরভোগীদের পেনশন ভাতা, বিভিন্ন বন্ড বিক্রি, সঞ্চয়পত্র বিক্রি, বিভিন্ন উৎসব ভাতা এসব সেবা বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও সরকারি নির্দেশে কম সুদে ঋণ বিতরণ, সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ দেয়া, পরে এসব ঋণের অর্থ দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে রূপান্তর করা হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের এলসি খোলার েেত্র কমিশনের হার দেয়া হচ্ছে অনেক কম।
সোনালী ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিনামূল্যে ৩৭ ধরনের সেবার বিপরীতে কিছু ফি দিলেও ব্যাংকের আয় বেড়ে যেত। এতে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হতো না।
বিভিন্ন সেবায় ফি বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে লেখা সোনালী ব্যাংকের একটি চিঠিতে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের এলসি খোলার েেত্র কমিশনের হার শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ (৪০ পয়সা হারে)। কিন্তু ব্যাংক পাচ্ছে এর চেয়ে অনেক কম। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের ৯৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার এলসির বিপরীতে মেয়াদকালীন কমিশনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু ব্যাংককে দেয়া হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা।
একই সাথে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে মোটা অঙ্কের ঋণ দিচ্ছে ব্যাংক। কিন্তু ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে না। একটি পর্যায়ে সুদ পরিশোধ না করে ঋণ দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে রূপান্তর করা হচ্ছে। এতে ব্যাংক সুদ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ দিকে, বেসরকারি ব্যাংক থেকে সরকারি সংস্থা ঋণ নিলে বাণিজ্যিকভাবে সুদ দিতে হচ্ছে। একই সাথে এলসি খোলার েেত্র ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ হারে কমিশনসহ অন্যান্য ফি দিতে হচ্ছে। অথচ সোনালী ব্যাংকের েেত্র এসব কিছুই দেয়া হচ্ছে না। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে সোনালী ব্যাংককে। সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি খাতে বিনামূল্যে দেয়া বিভিন্ন সেবার বিপরীতে ফি আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সাথে ব্যাংক থেকে নামমাত্র মূল্যে যেসব সেবা দেয়া হচ্ছে সেগুলোর বিপরীতে বাজারমূল্যের কাছাকাছি হারে ফি নির্ধারণের তাগিদ দিয়েছে সোনালী ব্যাংক।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।