মো: গোলাম মোস্তফা ( দুঃখু ) ১. এই আমাকে এটা দিবা দাও দাও বলছি না হলে কিন্তু আমি আব্বাকে ডাকবো। দেখ পাগলী সূচনা তুই দোকানের সামনে থেকে যাবি, তোর জন্য দোকানে মানুষ আসতে পারছে না। আমি যাবো না আমায় কেনপাগলী সূচনা বলছো , আমি তো পাগলী না আমি ছোট সূচনা বুঝেছো কালামিয়া পাগলীর আবার বুদ্ধি আছে দেখা যায়। আইচ্ছা তুই ছোট সূচনা এবার আমার দোকানের সামনে থেকে যা, ছোট সূচনা – ছোট সূচনাকোথায় তুই। আব্বা আমি আইতেছি কিরে বাড়ী থেকে আবার কোথায় গিয়েছিলি ? আব্বা আমি কালামিয়ার দোকানের সামনে গিয়েছিলাম চকলেট খেতে, মা আমার তুই অনেক বড় হয়েছিস এইভাবে দোকানেযেতে নেই লোকে খারাপ খারাপ কথা বলে রাস্তা ঘাটে আমায়। আব্বা তুমি তো আমায় সবসময় ছোট সূচনা বলে ডাকো ? তাহলে তুমি আবার বলতেছো আমি বড় হয়ে গিয়েছি, আচ্ছা আব্বা তুমি সবসময় রাতেকান্না করো কেন? তোমার কি আম্মার কথা মনে পরে ? আব্বা আমি যখন বড় হবো তুমি আমাকে সাথে নিয়ে আম্মার আব্বার বাড়ীতে নিয়ে যাবা । ঠিক আছে আমার পাগলী মা, তুমি এবার হাত মুখ পরিষ্কারকরে এসো বাপ মেয়ে এক সাথে খাবো – আইচ্ছা আব্বা আমি যাবো আর আসবো। ২. ওখানে এক আম তলা, এইখানে তে আমি। তুমি থাকো গাছের পাতায়, সেইখানে তে আমি। আমের রং কালো, আমি হলাম সাদা। এই মেয়ে তুমি কি বলছো ? আমের রং কালো হবে কেন? আমের রং তো সবুজ, আইচ্ছা আপনে কে? আমের রং কালো হোক, সাদা হোক, আমার যা মন চাইচ্ছে তাই বলবো। আমার নাম ” মেঘ ” আমার বাড়ী চূরখাই গ্রামে, এবার বলো দেখি তোমার কি পরিচয় ? রাস্তায় বসে বসে আমেররং কালো বলছো ? আমি কিন্তু আব্বা কে ডাকবো আমাকে বেশি কথা শুনালে, আব্বা আব্বা, আচ্ছা আচ্ছা তোমাকে আর বলতে হবে না আমি যাচ্ছি। ৩. সূচনা তুই এখানে কি করিস ? আমি এখানে বসে বসে থাক আর বলবো না, মিলা আপা তুমি কোথায় যাইতেছিলা। আমি তোর আব্বার কাছে আসছিলাম একটা কাজের জন্য আব্বা তো বাড়ীতে নাই বাজারেগেছে, আচ্ছা আসলে বলিস আমি আসছিলাম ঠিক আছে মিলা আপা। আমার আজকে শরীরটা ভালো লাগছে না কেন জানি, আমি শুয়ে থাকি আব্বা আসলে আমায় ডাক দিলে দরজা খুলে দিবো। ৪. এই ছেলে, এই ছেলে… কি হয়েছে? আমায় ডাকছো কেন? আরে আমায় চিনতে পারছেন না? আমি সূচনা? তোমার নাম যে সূচনা তা জানতাম তবে তোমায় আমি চিনি ” তোমাকে সকলে পাগলী সূচনা বলেডাকে ” সেদিন তো দেখলাম রাস্তা বসে বসে আমের রং কালো বলছো, পাগলী না হলে এই কথা বলতে পারে কেউ। আমি পরিচয় জানতে চাইলাম আমাকে আবার বাপের ভয় দেখাচ্ছিলে, এখন আবার আমায়ডাকছো কেন পাগলী সূচনা। না কিছু না আপনি যান আমার ভুল হয়েছে আপনাকে ডেকে…! ৫. কিরে মা সূচনা তুই কান্না করছিস কেন ? আব্বা আমাকে সকলে পাগলী সূচনা বলে ডাকে কেন ? আমি কি আসলে পাগলী ? নারে মা তুই পাগলী না? তুই আমার “কলিজা “যারা তকে পাগলী বলে ওরা সমাজেরসবচেয়ে বড় পাগল। আব্বা আমার না একটা খুব শখ, টিভিতে দেখি মেয়েরা বউ সাজে আমি ও বউ সাজবো । এসব কথা বলতে নেই সূচনা, তুমি বড় হলে তোমাকেও এমন ভাবে বউ সাজিয়ে বিয়ে দিবো। সূচনাতুমি এখন গোসল করে এসো, আমি হাতের কাজ শেষ করে এখনি আসছি ঠিক আছে আব্বা । ৬. পাগলী সূচনা এখানে কি করো বসে? কিছু করি না, আপনে এখানে কি করেন ? আমি তোমাকে দেখি তোমার মতো পাগলী সুন্দরী কে দেখতে এসেছি । কি বললেন? আমি সুন্দরী ! হে তুমি অনেক অনেকসুন্দরী, আমি আব্বারে অনেক আগেই বলেছি আমি সুন্দরী আব্বা আমার কথা বিশ্বাসি করে নাই। আইচ্ছা আমি যে সুন্দরী এই কথা আব্বারে বলতে পারবেন ? কেন পারবো না তোমার আব্বার সাথে দেখা হলেইবলে দিবো তুমি সুন্দরী । আপনি অনেক ভালো মানুষ আমি এখন আসি সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে আব্বা বাড়ীতে আমায় না পেয়ে খুঁজতে শুরু করবে। ৭. আসলেই মেয়েটি পাগলী আমি সুন্দরী বলাতেই খুশি হয়ে গেলো, এর আগে যে কতো কথা বললাম কিছুই মনে নেই। আমার জন্য ভালোই হলো এই সুযোগে তার সাথে ভালো কিছু হয়ে যেতে পারে, ” মেঘ ” তোকে চার পাঁচ দিন ধরে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষের মুখে শুনলাম তুই নাকি কালামিয়ার দোকানের সামনে বেশি সময় দিচ্ছিস, কারণ কি বন্ধু কোন মতলব আছে নাকি আবার ? আরে না থাকলেতোদের জানাতাম না, তেমন কিছু হয়নি তবে হলে তোদের জানাবো। ৮. সুন্দরী সূচনা তুমি কেমন আছো ? আমি ভালো আছি, আপনি বার বার আমাদের বাড়ীর সামনে আসেন কেন? আব্বা বলছে কোন ছেলেদের সাথে কথা জাতে না বলি আরে সুন্দরী সূচনা আমি তোমার বন্ধু। বন্ধু আবার কী ? ও তুমি বুঝবে না , আচ্ছা সুন্দরী সূচনা ? তোমার কি আমাকে ভালো লাগে ? আমাকে যে আদর করে ডাকে তাকেই আমার ভালো লাগে , আর আপনি তো আমাকে সুন্দরী সূচনা বলে ডাকেনতাই আরো বেশি ভালো লাগে। এই তো লক্ষি মেয়ে, কি করছেন আপনি আমার হাতে ধরছেন কেন ? আমি কিন্তু আব্বা কে বলবো আপনি আমার হাতে ধরেছেন, আরে না না আব্বা কে বলো না। আমি তো হাতেধরেছি তোমার হাতে এই গোলাপ ফুলটা দেওয়ার জন্য, গোলাপ ফুল আমার জন্য। ঠিক আছে আব্বারে বলবো না, তাহলে আমি ফুল টা নিয়ে যাই- আইচ্ছা যাও। ৯. কিরে মা কোথায় ছিলি এতখন, আব্বা কালামিয়ার দোকানের সামনে খেলা করতেছিলাম। সূচনা ঘরে বাতি দিয়ে হাত মুখ পরিষ্কার করে আয়, বাপ মেয়ে একসাথে খাবার খেতে বসবো। আব্বা আমি যদি কখনোমারা যাই তাহলে তোমার কষ্ট হবে, এমন কথা বলতে নেই মা। তোর মা তোকে আমার কাছে রেখে চলে গিয়েছে, তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো । এমন কতা আর কখনো বলিস না সূচনা আইচ্ছা আরবলবো না, আব্বা আজ দেখলাম কালামিয়ার দোকানের সামনে অনেক ফুল বিক্রি করছে। কেন ? কাল হচ্ছে ভালোবাসা দিবস তাই আজকে ফুল বিক্রি করছে , আব্বা ভালোবাসা দিবস কি ? আমি ভালো করেজানি না তবে শুনছি ছেলে-মেয়েরা দুজন দুজনকে গোলাপ ফুল দিয়ে ভালোবাসার কথা বলে। ১০. সুন্দরী সূচনা তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে, এই নাউ তোমার জন্য সব গুলো গোলাপ। চলো তোমাকে নিয়ে আজকে এক জায়গাই যাবো, কোথায় ? আরে গেলে দেখতে পারবে চলো দেখি, এইখানে কেন আমায়নিয়ে আসছেন ? আরে সুন্দরী সূচনা আজকে ” ভালোবাসা দিবস ” তাই তোমাকে আজ আমি ভালোবাসার কথা বলবো। আইচ্ছা এই কথা আব্বা রাতে আমাকে এই দিনের কথা বলেছে, তাই নাকি ? জি ? এখানেআর কেউ নাই কেন? আমার ভয় করছে ! আমি চলে যাবো, আরে আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো। এরা কারা ? আমায় ভয় করছে ! আমায় যেতে দিন ! ওরা আমার বন্ধু, পাগলীর আবার ভয়কিসের। সুন্দরী সূচনা আমরা তোমাকে ভালোবাসি,আব্বা আমাকে শেষ করে দিলো ! আমায় বাঁচাও ! আব্বা ! আব্বা ! বন্ধু এই মেয়ে কে বাঁচিয়ে রাখা ঠিক হবে না, মেরে ফেল তাহলে । ১১. কালা মিয়া আমার মেয়ে কে দেখেছো ? না তো , আমার মেয়ে টা কোথায় গেলো কোথাও খুজে পাচ্ছি না। সূচনার বাপ তোমার মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে , তুমি কি বলছো ? সূচনা মা আমার, তোর সর্বনাশ কেকরলো। আমার মেয়েটারে কে মারলো হে আল্লাহ আমাকেও নিয়ে নাও আমি বাঁচতে চাই না, হে আল্লাহ এই কি করলা আমার । সূচনার বাপ ? ও সূচনার বাপ ? মেয়ে কে কবর দিতে হবে না উঠোন? লাশেরপাশে শুয়ে থাকতে নাই, কালামিয়া এই দিকে সূচনার বাপ মারা গেছে। কি বলছো ? একি দিনে বাপ মেয়ের মৃত্যু, আজকে বলে ” ভালোবাসার দিবস ” কেমন দিবস এটি এর জন্য বাপ মেয়ের জীবন দিতে হয়।পাগলী সূচনা আমাদের ক্ষমা করে দিস, তোকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না ” ভালোবাসা দিবসে” যেন আর কোন মেয়ের জীবন দিতে না হয়, আর কোন সূচনার এমন সর্বনাশ যেন না হয়। আমাদের ক্ষমা করেদিস পাগলী সূচনা….. সমাপ্ত