ডেস্ক নিউজ:
বগুড়ায় কলেজে ভর্তির আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও পরে তাকেসহ তার মাকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করার বহুল আলোচিত ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলার তদন্ত শেষে বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক তুফান সরকারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ।
মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তুফান সরকারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলারই চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে ধর্ষণ ও মা-মেয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ১২ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে তারা হলেন- বহিষ্কৃত শহর শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি, শাশুড়ি রুমি খাতুন, শ্বশুর জামিলুর রহমান রুনু, তুফান বাহিনীর সদস্য আতিক, মুন্না, আলী আজম দীপু, রূপম, শিমুল, জিতু ও নাপিত জীবন রবিদাস।
এদের মধ্যে শিমুল পলাতক। বাকি আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে নাপিত জীবন ও রুনু এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে আসামি করা হয়।
আসামিদের মধ্যে তুফান সরকার বগুড়া জেলে মাদক সেবন করায় তাকে কাশিমপুর কারাগারের হাইসিকিউরিটি সেলে পাঠানো হয়েছে। তার শ্বশুর রুনু একটি মামলায় জামিন পেলেও অপরটিতে জামিন পাননি। ফলে রুনুসহ ৯ জন বগুড়া কারাগারে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান আসামি তুফানের সহযোগী আতিক, দীপু এবং নাপিত জীবন আদালতে মা ও মেয়েকে ন্যাড়া এবং নির্যাতনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এছাড়া তদন্তকারী কর্মকর্তা তুফান, আশা, রুমকি ও রুমি খাতুনসহ অন্যদের কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়েও স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেননি। তবে ভিকটিম ছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখসহ ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীকে নাবালিকা উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগপত্রে মোট ১৬ জন সাক্ষী রাখা হয়েছে। এছাড়া আলামত হিসেবে তুফানের প্রাইভেটকার, দুটি ক্ষুর, দুটি কাঁচি, ভিকটিমদের স্বাক্ষর নেয়া কাউন্সিলর রুমকির পৌরসভার প্যাডের পাতা, নির্যাতনের এসএসপাইপ, মা ও মেয়ের কেটে ফেলা চুল রয়েছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুটি মামলায় তুফানসহ ১২ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যাদের সবার বিরুদ্ধেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
পলাতক আসামি শিমুলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এজাহারে নাম না থাকলেও ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ থাকায় তুফানের শ্বশুর ও নাপিত জীবন রবি দাসকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এসএসসি পাস এক শিক্ষার্থীকে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি করে দেয়ার কথা বলে গত ১৭ জুলাই তাকে কৌশলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত নেতা তুফান সরকার।
ঘটনা জানতে পেরে তুফানের স্ত্রী আশা স্বামীকে দায়ী না করে ঘটনার জন্য ভিকটিমকেই দায়ী করেন। এরপর আশা তার বোন সংরক্ষিত আসনের স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মার্জিয়া হাসান রুমকির মাধ্যমে ২৮ জুলাই ভিকটিম ও তার মাকে কাউন্সিলরের বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে তাদের মারধরের পর মাথার চুল কেটে দেয়।
তারা যাতে আদালতের আশ্রয় নিতে না পারে সেজন্য তাদের কাছ থেকে পৌরসভার প্যাডে স্বাক্ষর নেয়া হয়। প্রতিবেশীর সহায়তায় নির্যাতনের শিকার মা-মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ঘটনা প্রকাশ পায়।
পুলিশ ঘটনার রাতেই তুফানসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। গত ২৯ জুলাই তুফানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেন নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা।
৩০ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ একজন ছাড়া বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। শ্রমিক লীগ থেকে তুফানকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে নির্যাতিত মা-মেয়ে আদালতের নির্দেশে রাজশাহীর সেফহোম এবং ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।