ডেস্ক নিউজ:
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী। নানামুখে চাপা কোণঠাসা হয়ে পড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে গোপনে দলটির শীর্ষ নেতারা গোপন বৈঠকে করছেন বলে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় বৈঠক করার সময় পুলিশ দলটির আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ ৯ নেতাকে গ্রেফতার করেছে। এসময় ৩৫ পৃষ্ঠার একটি চিঠিও জব্দ করে পুলিশ।
কি ছিল ওই চিঠিতে—
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জামায়াতের নেতা ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী গত ৩ অক্টোবর দলটির আমির মকবুল আহমাদের কাছে ওই ৩৫ পৃষ্ঠার চিঠিটি পাঠান। তাতে চট্টগ্রাম জামায়াতের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয় উল্লেখ করে তা মিটিয়ে ফেলার বিষয়ে ভূমিকা গ্রহণ করতে দলের আমিরকে অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়া দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পুনরায় উজ্জীবিত করে তুলতে দলের আমিরকে নতুন কর্মসূচির আহবান জানান শাহজাহান চৌধুরী। চিঠিটি হাতে পাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায়ই উত্তরার ওই বাসায় বৈঠকে মিলিত হন শীর্ষ জামায়াত নেতারা। এরপরই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন নিয়ে নায়েবে আমির শামসুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। শামসুল হকের পক্ষে রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের একটি বড় অংশ।
অন্যদিকে শাহজাহানকে সমর্থন করছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াত ও স্থানীয় নেতারা।
এই অবস্থার মধ্যেই কেন্দ্র থেকে শাহজাহানকে চট্টগ্রাম শহরের একটি কাজের নির্দেশ দেয়া হয়, যা তিনি করেননি। এতে ওই বিরোধ আরো প্রকট হয়। দুইজনের পক্ষে বিপক্ষে ফেসবুকে সরব হয়ে উঠেন সমর্থকরা। এমন অবস্থায় শাহজাহান চট্টগ্রাম জামায়াতের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে আমিরের হস্তক্ষেপ কামনা করে ওই চিঠি পাঠান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৯ অক্টোবর) উত্তরার ওই বাসায় সমঝোতা বৈঠক বসে, যেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেফতার হন।
যদিও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, গোপনে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ছক কষছিল জামায়াত। রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ও আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতেই গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে জামায়াত নেতারা উত্তরার ওই বাসায় বৈঠকে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন। সেখানে একত্রিত হওয়া প্রত্যেক নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। ফৌজদারি মামলার আসামিরা কখনই একত্রিত হয়ে বৈঠক করতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার হওয়া জামায়াত নেতাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে অধিকতর অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে।
জামায়াতের নেতারা মনে করছেন, নতুন করে এই গ্রেফতার অভিযানের সঙ্গে আগামী নির্বাচনের সম্পর্ক রয়েছে। সরকার জামায়াতসহ সকল বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করে দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে শীর্ষ নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নেতারা গ্রেফতার হওয়ার পর এক বিবৃতিতে জামায়াতের অন্যতম নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বশূন্য করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।-পরিবর্তন
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।