আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ (কক্সবাজার) :
রাখাইনের মংডু থেকে গত এক মাস আগে ফুফুর সাথে এদেশে পালিয়ে আসে ছেনুয়ারা বেগম (১২)। তার পিতা মাওঃ নুরুল ইসলাম সৌদি আরবের মক্কা প্রবাসী। মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর আগে ফুফু ফাতেমা বেগমের বাড়ীতে বেড়াতে যান ইয়াছমিন । হঠাৎ করে ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরু হলে সে আর নিজ বাড়ী মংডু হাইচ্ছুরাতার বিয়ামুপাড়ায় যেতে পারেনি। এদেশে পালিয়ে এসে হারিয়ে যান ফুফুর পরিবার থেকে। বর্তমানে ছেনুয়ারা বেগম টেকনাফ হ্নীলার জাদীমুরা গ্রামের মফজুলুর রহমানের বাড়ীতে আশ্রয়ে রয়েছে।
১৫ অক্টোবর রবিবার সকালে ছেনুয়ারা বেগমের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। এসময় জানা গেছে রূপকথার মতো কাহিনী।
সে জানায়, ২৫ আগস্ট রাখাইনে মগ মিলিটারির বাহিনী চারদিকে আক্রমন করেছে। লঞ্চার মেরে ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিচ্ছে, প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাওয়ার সময় নারী-পুরুষ শিশুদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে এবং অনেক শিশুকে আগুনে নিক্ষেপ করে মারছে। এসময় তারাও হাইচ্ছুরাতা গ্রাম থেকে পালিয়ে অন্য এক গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। কয়েক দিন অবস্থান করার পর সেই গ্রাম থেকে গত ২০ সেপ্টেম্বরের দিকে রাতের আধাঁরে পেরানপ্রু ঘাট দিয়ে ফুফুর পরিবারের সাথে নাফ নদ পার হয়ে নাইট্যংপাড়া সীমান্ত দিয়ে এদেশে পালিয়ে আসে। এপারে এসে সকালে বাস স্টেন্ডে অবস্থান করে। ওই সময় ছেনুয়ারা মসজিদের টিউবওয়েলে পানির জন্য যায়। পানি নিয়ে এসে দেখে ফুফু নেই। সে চারদিকে খুঁজাখোঁজি করে না পেয়ে কাঁদতে থাকে। পরে জানতে পারে পুলিশ তার ফুফুর পরিবারকে কুতুপালংয়ের উদ্দেশ্যে গাড়ীতে তুলে দিয়েছে। তার কান্না দেখে কয়েকজন মৌলভী এক হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে তাকেও অন্যান্য রোহিঙ্গাদের সাথে কুতুপালংয়ের একটি গ্রাড়ীতে উঠিয়ে দেয়। সেখানে একটি পরিবারের সাথে ৫/৬ দিন থাকার পর মা ও ভাই-বোনদের জন্য কাঁদলে পুনরায় টেকনাফে পাঠিয়ে দেয় ওই পরিবারটি। মাইক্রোবাস যোগে আসার সময় ছেনুয়ারার কান্না দেখে জাদীমুরার এক মহিলা তার সাথে কথা বলে এবং তাকে বাড়ীতে নিয়ে যায়।
সে আরো জানায়, রাখাইনে তার মা, ১ বোন ও ৩ ভাই রয়ে গেছে। এখন তারা কি অবস্থায় আছে খবর পাচ্ছেনা। এমনকি সৌদি আরবে পিতার সাথেও কথা বলতে পারছে না। যে কাগজে নাম্বার লিখা ছিল তাও ফুফুর ব্যাগে রয়ে গেছে। কথাগুলো বলার সময় ছেনুয়ারার দু’চোখ ছলছল করছিল। এসময় ওই ঘরের কয়েকজন তাকে সান্তনা দিচ্ছে।
বর্তমানে ছেনুয়ারা হ্নীলার মফজলুর রহমানে বাড়ীতে ১০ দিন যাবৎ আশ্রয়ে রয়েছে। আত্মীয় স্বজনের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কাউকে না পেলে সরকারী-বেসরকারী সংস্থার কাছে তাকে সমর্পন করবে বলে জানিয়েছেন ওই আশ্রয়দাতা।
জাদীমুরা রোহিঙ্গা বস্তীর কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুধু ছেনুয়ারা নই, এমন মা-বাবা হারানো রোহিঙ্গা শিশু শত শত রয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন হারানো রোহিঙ্গাদের চোখে এখন পানি নেই। সব পানি শুকিয়ে গেছে। আছে বুক ফাটা আর্তনাদ। রাখাইনের বিভীষিকাময় দিনগুলি ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারছেনা তারা। এখন শুধু রাখাইনে শান্তি ফিরে পেতে চাই এবং নিজ দেশে চলে যেতে চাই।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।