চলমান রোহিঙ্গা সংকটে ধর্ষণকেও একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে মিয়ানমারের সেনারা। মিয়ানমারের সেনাদের সেসব ধর্ষণকাণ্ড উঠে আসছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
১৮ বছর বয়সী নূরশিদা রয়টার্সকে জানান, তিনি খুব ভালোভাবে মনে করতে পারেন, তার সঙ্গে কী ঘটেছে। গত মাসে যখন স্কুলে ক্লাস করছিলেন তখন হঠাৎই সেখানে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিলো। এরপর সেনাপোশাক পরা কিছু মিলিটারি তাদের বন্দুক দেখিয়ে অডিটোরিয়ামে নিয়ে যায়। শুরু হয় গণধর্ষণ।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটু নিরাপদ অবস্থানে থেকে নূরশিদা বলেন, তাদের বন্দুকের ডগায় ৩০ জনের ক্লাস পুরোটাই নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ছয় জন মিলিটারির একটি দলের হাতে ধর্ষণের শিকার হন তিনি।
তিনি বলেন, একজন আমাকে শক্ত করে ধরে মেঝেতে ফেলে দেয়। আমি খুব চিৎকার করছিলাম। আর একজন সেনা আমার মুখে আঘাত করলো খুব জোড়ে এবং আমাকে পুরো উলঙ্গ করে ফেললো। এরপর আমি একদম চুপ হয়ে গেছিলাম, আমার আর কিছুই করার ছিলো না।
স্কুলের সবগুলো মেয়েকেই ধর্ষণ করা হয়েছিলো। সবখানে সবাই উচ্চস্বরে চিৎকার করছিলো, তখনই আমরা পাশে নাইসপ্রু গ্রামে আগুন জ্বলতে দেখলাম।
নয় মাসের গর্ভবতী জান্নাত জানান, তিনিও মিয়ানমারে তার বাড়িতে সহিংসতা ও গর্ভবতী অবস্থায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
জান্নাত বলেন, আর্মিরা আমাদের গ্রামে আক্রমণ করার ৫ দিন আগে আমার স্বামী মারা যায়। এরপর নিজের তিনটি সন্তানকেও হারিয়ে ফেলেন তিনি। ফকিরা বাজার গ্রামে যখন আর্মিরা আসে তখন তিনি একা ছিলেন।
‘সবাই যখন জঙ্গলে পালাচ্ছিলো তখন আমিও লুকিয়ে পড়ি । কিন্তু কিছু আর্মি বাড়ির দরজা ভেঙে ঢোকে। তারা আমাকে গর্ভবতী দেখেও ধর্ষণ করে।’ সবশেষে তিনি আহত, উলঙ্গ হয়ে পড়ে ছিলেন, কিন্তু সন্তানগুলোর কেউই আর ছিলো না। অনেক চিৎকার করে, অনেক খোঁজাখুজি করেও আর তাদের খুঁজে পায়নি।’
পারভীন নামের আরেক রোহিঙ্গা নারীও বলছিলেন তার কথা। নির্যাতিত হওয়ার পরে শ্বশুর বাড়ির লোকেরাও আর তাকে গ্রহণ করেন নি। কোনো দায়িত্বও নিতে চাননি। শুধু যে সাহায্যটা তারা করেছিলো তা হলে, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর তাকে পরিষ্কার হতে সাহায্য করেছিলো তার শাশুড়ি। পারভীন বলেন, আমি ধর্ষিত। এখন আমার কোনো পথও নেই, আমাকেই আমার সন্তানকে মানুষ করতে হবে।
রোহিঙ্গা সংকটের সময়ে ধর্ষণকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, মিয়ানমারের মুসলিম নৃগোষ্ঠীতে কোনো নারী যৌন সহিংসতা থেকে নিরাপদ নয়। সেই এলাকায় কর্মরত বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য এমনটাই।
রয়টার্সের নেওয়া সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা কর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে পালানোর সময়ে তারা কতটা ভয়াবহ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলো।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের যৌন নির্যাতন বিশেষজ্ঞ স্কাইয়ি হুয়েলার বলেন, রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিধন চালানোর সময়ে বার্মার মিলিটারি ধর্ষণকে একটি বীভৎস পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছে।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের অন্যান্য পদ্ধতিগুলো খুবই ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটা খুবই নৃশংস, অপমানজনক ও আঘাতের কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশেদ হাসান বলেন, যেসব ধর্ষণের ঘটনা শুনলাম তাতে মনে হলো তারা এটাকে অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করেছে।
সব বয়সের নারীই এই সহিংসতার শিকার হয়েছে। তার উপর পরিবার ধ্বংস করা, সন্তান হারানো বা বাড়ি থেকে চলে যেতে বাধ্য হওয়ার মতো ঘটনা তো রয়েছেই।
তবে এই ধরনের কোনো জাতিগত নিধনের অবিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। কিন্তু মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, ধর্ষণ মিয়ানমারের সেনাদের কাছে একটি অস্ত্র।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।