*সাড়ে ৪ হাজার মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস 

*গ্রেফতারকৃতদের ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

মো: আকতার হোছাইন কুতুবী/মোহাম্মদ আলমগীর, বদরখালী থেকে ফিরে ॥
চকরিয়া বদরখালীর নৌ পুুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাহসী পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ পায়েল হোসেনের নেতৃত্বে চকরিয়া-বদরখালী-মহেশখালী চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪ হাজার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ করেন। জব্দকৃত কারেন্ট জালগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করে। শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে মহেশখালী উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল মোমিনের উপস্থিতিতে জালগুলো আগুনে পোড়ানো হয়।
জানা যায়, বদরখালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর পায়েল হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সরকারের ঝাটকা নিধনের উপর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যারা নিষিদ্ধ অবস্থা এসব কারেন্ট জাল দিয়ে অবৈধভাবে মাছ নিধন করছে এক শ্রেণির মৎস্যজীবীরা। গোপন সংবাদের ভিতিত্তে ইন্সপেক্টর পায়েল হোসেনের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ৪ হাজার ৫শ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। মৎস্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০ দিন সাগরে কোন ধরনের মাছ না ধরতে আদেশ জারী করা হয়েছিলো। এরপরও কিছু অসাধু জেলেরা স্থানীয় রাঘববোয়ালদের ইন্ধনে সরকারি আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সাগরে ঝাটকা নিধন করে আসছিল। এর আগেও সাহসী ইন্সপেক্টর পায়েল হোসেন ১৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করেছিলো। কারেন্ট জালের পাশাপাশি ৭ জন জেলেকে গ্রেফতার করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে। তাদেরকে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে হাজির করে প্রত্যেক জেলেকে ৩ হাজার টাকা করে জরিমানা প্রদান পূর্বক আর ঝাকটা নিধন করবে না মর্মে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ থাকে যে ইন্সপেক্টর পায়েল হোসেন ১৮ জুলাই ’১৭ইং তারিখ বদরখালী নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে যোগদান করেন। যোগদান করার পর থেকে পাল্টে যায় ক্রাইম জোন খ্যাত বদরখালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির অন্তর্ভুক্ত নৌপথগুলো। এ ব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শন করে তার সাথে কথা হয়, নৌ পুলিশে বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে। অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে নৌপথকে নিরাপদ রাখার জন্য প্রতি দিন-রাত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বদরখালীর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কক্সবাজারের কস্তুরাঘাট থেকে শুরু করে চকরিয়ার মগনামা পর্যন্ত বিশাল এ নদীপথে অতীতে কোন না কোন ঘটনা ঘটতো। কিন্তু তিনি যোগদান করার পর থেকে কোন ধরনের ডাকাতি বা বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তার কারণটা হচ্ছে যোগদান করার পরেই পায়েল ঘোষণা দিয়েছিলো আমি যতদিন এই নৌপথের দায়িত্বে থাকবো ততদিন কেউ কোন অঘটনের জন্ম দিতে পারবে না। এই মর্মে সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। নৌপথের বিভিন্ন অপরাধ জগতের হোতারা তার ম্যাসেজ শুনে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কারণ এর আগেও তিনি কক্সবাজারের মহেশখালী থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেছেন। একনামে তাকে চিনেন। কারণ সেসময় পায়েল অপরাধীদের মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল। সরজমিনে পরিদর্শন করে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমার কাছে মনে হলো টকবগে সাহসী যুবক পায়েল। তার বিষয়ে জানা যায় সম্প্রতি এসআই থেকে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। পদোন্নতি পাওয়ার পর নৌ-পুলিশের ডিআইজি ক্রাইম এলাকাখ্যাত বদরখালীতে পোস্টিং দেন সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা পায়েলকে। পায়েল যেখানে চাকরি করেছেন সেখানেই সফলতা দেখিয়েছেন। এর আগেও কক্সবাজারের মহেশখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত অবস্থায় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছিলেন।
তিনি যোগদান করার পর থেকে আতঙ্কের এলাকাটিতে শান্তির ছোঁয়া লাগিয়ে দিয়েছেন। রাত-দিন পরিশ্রম করে এলাকার সাধারণ মানুষকে শান্তিতে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নৌ-পথে আইন-শৃঙ্খলাকে অতীতের ন্যায় অনেকবেশি শৃঙ্খলিত করেছেন। পায়েলের পুলিশি এ্যাকশনে চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী ও জলদস্যুরা এলাকাছাড়া হয়ে গেছে।
পায়েলের ব্যাপারে স্থানীয় জনসাধারণরা জানান, আমরাও শুনেছি তিনি যেখানে চাকরি করেছেন সেখানেই দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন তার সুন্দর ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ওই এলাকার জনগণের কাছে মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে বদরখালীতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। আলাপচারিতায় পুলিশ পরিদর্শক পায়েল হোসেন বলেন, বদরখালীতে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে প্রমাণ করে দেবো পুলিশিব্রত ও সাধারন মানুষের প্রতি ভালবাসা থাকলে অস্ত্র, মাদক, জলদস্যু ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীদেরকে স্বমূলে বিনাশ করা কোন ব্যাপার না। ইতোমধ্যে আমি যখন বিভিন্ন অপরাধীদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টাসহ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি কিছু কুচক্রীমহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছে। যারা ইয়াবা, জলদস্যু, অস্ত্রধারী ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে লালন-পালন করেন তাদের কোন রক্ষা নেই। আমি কাউকে ছাড় দেবো না। এলাকার শান্ত পরিবেশকে যারা অশান্ত করে তুলবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকার আমাকে বেতন দেয় জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সুতরাং সাধারণ জনগণকে নিরাপদে ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। এলাকাবাসীরা জানান, খুবই একজন সৎ ও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা পায়েল। তিনি যোগদানের পর থেকে এলাকার সাধারণ মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে বদরখালীতে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে আসছিলো তারাই শুধু ঘুমাতে পারছে না। কারণটা হলো পুলিশ কর্মকর্তা পায়েল কোন জলদস্যু সন্ত্রাসী, ইয়াবা গডফাদার ও অস্ত্রধারীদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন না।
জানা যায়, ওই এলাকাটিতে কিছু কুচক্রী মহল আছেন যারা বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায়। তাদের মনের মতো পুলিশ কর্মকর্তা না হলেও তাদের কথামতো কাজ না করলে তখন বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করে দেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন করা ও তাদের নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে কল্পকাহিনীর অবতারণা করাই হলো তাদের হাতিয়ার। নৌপথের মালিক হচ্ছেন নৌ পুলিশ। কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, টেকনাফ, এলাকায় নৌপথ নিরাপদে রাখা বদরখালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এখতিয়ার। কিছু মৎস্য ব্যবসায়ী নদী সংলগ্ন খাল-বিল, অবৈধভাবে দখল করে তুলেছে মৎস্যঘের। এদের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। আছে শুধু ক্ষমতা অবৈধ অস্ত্র। সেগুলো পুঁজি করে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মৎস্যঘের করে। এ ব্যাপারে ইন্সপেক্টর পায়েলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের কোন ধরনের আইনগত বৈধতা নেই। নদী ঘেঁষা জায়গাগুলো সরকারি সম্পত্তি। সেখানে মৎস্যঘের করে অবৈধভাবে কোন ধরনের অনুমোতি না নিয়ে মৎস্য চাষ করা জঘন্য অপরাধ। আমি সম্প্রতি এসেছি অনেককেই বলে দিয়েছি তারা যেন নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মৎস্যঘের করেন। আলাপচারিতার ফাঁকে হাঁসতে হাঁসতে পায়েল বললেন, এটাইতো মূল সমস্যা। আমি যখন সরকারি সম্পত্তিতে মৎস্যঘের না করার জন্য নিষেধ করেছি তখনিই শুরু হয় আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। তাদের বিশাল এক সিন্ডিকেট রয়েছে। এরাই নদীপথের সম্পত্তিগুলো দখল করে মৎস্যঘের করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আবার এদেরকে শেল্টার দেবার জন্য অনেকেই আছেন। আমার কাছে তথ্য আছে এই মৎস্যঘেরগুলো ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তারা সেখানে অবৈধ অস্ত্র মজুদ রাখেন। আমি অভিযান অব্যাহত রাখবো। কোনভাবেই নৌ পথের পাশে ঘেরা সরকারি সম্পত্তিতে ক্ষমতার জোরে অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র রেখে জঘন্য অপরাধ করে যাবে সেটা আমি কোনভাবেই হতে দেবো না। আমি উপরি মহলকে অবহিত করেছি। সময় বলে দেবে সব প্রশ্নের উত্তর।