ডেস্ক নিউজ:
সব দলের অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য’ দেখতে চায় ভারত। সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রত্যাশা দেশটির।

রোববার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দেশটির এমন অবস্থানের কথা জানান।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তারা (ভারত) চান, অন্য দেশগুলো বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকুক এবং গণতান্ত্রিকভাবেই সরকার নির্বাচিত হোক। এখানে নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়- সেটাও তিনি আশা করেন এবং সব দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়, সেটা তিনি আশা করেন। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন যেন তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন- সেটাও তিনি আশা করেন।’

হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাত ৮টা থেকে ৪৫ মিনিটব্যাপী এ বৈঠক হয়। বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ অংশ নেন।

এর আগে রাত পৌনে ৮টায় হোটেলে এসে পৌঁছান খালেদা জিয়া। নির্ধারিত আধাঘণ্টার বৈঠক চলে প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টা।

বৈঠকে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা সমস্যা, আগামী সংসদ নির্বাচনসহ দ্বি-পক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে খালেদা জিয়া ও সুষমা স্বরাজের মধ্যে একান্তে বৈঠক হয়নি। তবে বৈঠক শেষ হওয়ার সময় তারা দুজনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলেন বলে বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা যুগান্তরকে জানান।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৭ জুন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মধ্যে সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময় তাদের মধ্যে ১০ মিনিট একান্তে আলোচনা হয়। এর আগে ২০১২ সালে ভারত সফরকালে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।

মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও কীভাবে শক্তিশালী করা যায়- সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি জানান, আমাদের চেয়ারপারসন মূলত দুটি প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন। বৈঠকে এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি সুষমা স্বরাজকে বলেছেন, রোহিঙ্গারা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। আমরা চাই তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হোক। জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারাও চান নিরাপদে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে চলে যাক। ভারত এজন্য মিয়ানমারের প্রতি চাপ অব্যাহত রেখেছে। তারা আশা করে রোহিঙ্গারা নিরাপদ পরিবেশে দেশে ফিরতে সক্ষম হবেন।

বৈঠকে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন বলে জানান ফখরুল।

তিনি বলেন, এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমস্যার কথা শুনে বলেছেন, ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। তারা চায় প্রতিবেশী অন্যান্য দেশেও গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত থাকুক। তারা চায় বাংলাদেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক।
বৈঠকে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ভারতের যে ভূমিকা ছিল সেখান থেকে সরকার সরে আসছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, বৈঠকের সব বিষয় বলা হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেন খালেদা জিয়া।

বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ভারত বিশ্বের বড় একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আমরা চাই এ দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ যাতে যথাযথভাবে চর্চা করা যায়- সেই ব্যাপারে দেশটি ভূমিকা রাখবে। কোনো দল নয়, এ দেশের জনগণের সঙ্গে ভারত সরকার সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেবে বলে প্রত্যাশা করেন খালেদা জিয়া।

জবাবে সুষমা স্বরাজ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেছেন, আগামীতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা যাতে অব্যাহত থাকে, দেশটি তা চায়। আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে প্রত্যাশা তাদের। এ দেশের জনগণ যাকে চায় তারাই যেন নির্বাচিত হয়।

এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, আমরাও সেটাই চাই। কিন্তু বতর্মান সরকার সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দিতে নানা গড়িমসি করছে। আমরা বারবার নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। এ ব্যাপারে সরকারকে বারবার সংলাপে বসার আহ্বান জানালেও তারা সাড়া দিচ্ছে না। ৫ জানুয়ারির মতো তারা আবারও একটি একদলীয় নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু এ দেশের সব রাজণৈতিক দল ও জনগণ সেটা মেনে নেবে না। আশা করি, জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে ভারত গুরুত্ব দেবে।

সূত্র জানায় , বৈঠকে সম্প্রতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সংঘটিত নানা ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ এবং বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট সংকটের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।