পরিদর্শনে আসছেন নৌ মন্ত্রাণালয়ের টিম
বিশেষ প্রতিবেদক:
চলতি বৎসর পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও শুরু হয়নি দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের সাথে জাহাজ চলাচল ব্যবস্থা। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন সেন্টমার্টিনের সাথে প্রতি বৎসর অক্টোবর মাসের প্রথমদিকে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌপথের মাধ্যমে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থল ও নৌপথে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যহত থাকার কারণে এই বৎসর এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি মেলেনি। অনুমতি প্রাপ্তিতে বিলম্বের কারণে দেখা যায়- বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের মধ্যকার নৌ সীমানা। নাফনদী এবং বঙ্গোপসাগর মিলে চৌত্রিশ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিয়ে টেকনাফ হতে জাহাজ সমূহ সেন্টমার্টিন যাতায়ত করত। যাতায়ত পথে নাফনদীর মোহনায় একাধিক চর জাগায় জাহাজসমূহ কয়েকবার মায়ানমারের জলসীমার ভিতর প্রবেশের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন পৌছাঁত এবং একইভাবে ফেরত আসত। এইসব চরের কারণে জাহাজ আটকে যাওয়ার ঘটনাও প্রায় ঘটে থাকে। গত বৎসর এইপথে কেয়ারী সিন্দাবাদ, বে ক্রুজার, কেয়ারী ক্রুজ, এম ভি বাঙ্গালী, গ্রীণলাইন ওয়াটার ওয়েজ, এলসিটি কুতুবদিয়া ও এলসিটি কাজলসহ সাতটি জাহাজ চলাচল করেছে। প্রতিদিন এইসব জাহাজের মাধ্যমে গড়ে চার হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমনে যেত।
চলমান রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এই পথে জাহাজ চলাচল করা ঝুকিপূর্ণ এবং অসম্ভব অবস্থায় রয়েছে। এমনকি সেন্টমার্টিনের স্থানীয় জনগণের যাতায়তের জন্য ব্যবহৃত বোটসমূহ পর্যন্ত জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে যাতায়ত করছে। পর্যটনের এমন ভরা মৌসুমে সেন্টমার্টিন পর্যটক পারাপার বন্ধ থাকায় অত্যন্ত ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন দ্বীপের জনগণ। হতাশায় দিন গুনছে সেন্টমার্টিন পর্যটনে বিনিয়োগকারিরা। এভাবে আর কিছুদিন চললে অর্ধাহারে- অনাহারে দ্বীপের জনগণের দিনাপাত করতে হবে। এদিকে সেন্টমার্টিন পর্যটক পারাপার বন্ধ থাকায় কক্সবাজারের পর্যটনখাতও মন্দাবস্থার শিকার হচ্ছে। সেন্টমার্টিনকে উদ্দেশ্য করে আগত পর্যটকদের বেশিরভাগ কক্সবাজার অবস্থান করে এবং পরে সেন্টমার্টিন ভ্রমনে যায়।
জাহাজ অপারেটর প্রতিষ্ঠান বে ক্রুজার ইন্টারন্যাশনাল লিঃ এর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার আসাফ উদ্ দৌলা (আশেক) জাহাজ চলাচল বিষয়ে বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক পারাপারের জন্য বে ক্রুজারকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই আমরা জাহাজ চলাচল শুরু করব। মায়ানমারের সাথে কুটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে জলসীমা ব্যবহারের বিষয়ে সম্মতি আদায় করে জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। উক্ত প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হলে বিকল্প পথে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
জাহাজ চলাচল শুরু না হওয়ায় ট্যুর অপারেটরদের প্রতিক্রিয়া বিষয়ে টুয়াকে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কিবরিয়া খানঁ বলেন কক্সবাজরের ভ্রমন সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ বৎসরে ছয়মাস ব্যবসা করার সুযোগ পেয়ে থাকে। এই ছয়মাসও যদি ব্যবসা করার সুযোগ না পেয়ে থাকি তবে আমরা চরম সংকটের সম্মুখীন হব।
জাহাজ চলাচলের সার্বিক বিষয়ে ট্যুর অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) ভূমিকা প্রসঙ্গে টুয়াক আহবায়ক এম এ হাসিব বাদল জানান, জাহাজ চলাচল চালুর বিষয়ে টুয়াক দেড়মাস যাবত প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। পুরোনে পথে সম্ভব না হলে টেকনাফের সাবরাং হতে বঙ্গোপসাগর দিয়ে বাংলাদেশের জলসীমা ব্যবহার করে সেন্টমার্টিন চলাচলের একটি প্রস্তাবনা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী শাহাজান খাঁন মহোদয়কে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য একটি জরিপদল স্থান পরিদর্শনে যাবেন। উক্ত বিষয়ে টুয়াক প্রতিনিধিদল গত ২২ অক্টোবর উখিয়া-টেকনাফের সাংসদ আবদুর রহমান বদির সাথে ঢাকাস্থ ন্যাম ভবনে সাক্ষাত করেন, ২৩ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শেখর এর সাথে সাক্ষাত করেন টুয়াকের যুগ্ম সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ এবং টুয়াকের যুগ্ম আহবায়ক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর। উনারা ২৪ অক্টোবর বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান এবং নৌ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের মাধ্যমে নৌ পরিবহন মন্ত্রী বরাবর ট্যুর অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর পক্ষ থেকে আবেদনপত্র প্রদান করেন। আশাকরি টুয়াকের প্রচেষ্টায় দ্রুত সেন্টমার্টিনের সাথে জাহাজ চলাচল শুরু হবে।
বিষয়টি নিয়ে টুয়াকের যুগ্ম আহবায়ক এস এ কাজল বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব এবং পর্যটকদের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। সেন্টমার্টিনের সাথে জাহাজ চলাচলের বিষয় নিয়ে যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার পায়তারা করছে তাদের ব্যাপারে প্রশাসনকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। রোহিঙ্গাকে ইস্যু বানিয়ে চিহ্নিত একটি নব্য সংগঠন পর্যটন শিল্পে অশান্তির পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। তাদের হাত থেকে পর্যটন শিল্পকে রক্ষা করতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকলের একযোগে কাজ করে যেতে হবে। টুয়াক কক্সবাজারের পর্যটন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যায় সবসময় ভূমিকা রেখেছে ভবিষতেও রাখবে।
জাহাজ অপারেটর প্রতিষ্ঠান কেয়ারী ট্যুরস্ এন্ড সার্ভিস লি. এর প্রধান নির্বাহী এম এম নোমান বলেন, পর্যটন মৌসুম ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে জাহাজ চলাচল হয়নি। পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের অশনি সংকেত। এটা যেকোনো উপায়ে সমাধান করতে হবে। এই জন্য বিকল্প হিসেবে সাবরাং ও টেকনাফ বীচ দিয়ে অস্থায়ী জেটি করা যায়। দু’দিকই উপযোগী। অনুসন্ধান করে যেদিকে অপেক্ষাকৃত উপযোগী সেদিকে জেটি করা যাবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।