রাতের বদর মোকাম হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান
সৈয়দ মোহাম্মদ শাকিল :
কক্সবাজারে দুটি বদর মোকাম মসজিদ আছে। এই দুটি মসজিদের মধ্যে একটি কক্সবাজার পৌরসভার অধীনে বাকখালী নদীর দক্ষিন তীরে পোস্ট অফিসের পাশে অবস্থিত। অন্য মসজিদটি টেকনাফ থানার সর্বদক্ষিনে অবস্থিত আর একারনেই টেকনাফের এই স্থানটি এই মসজিদের নামেই সুপরিচিত। কক্সবাজারের সদর মডেল থানা সংলগ্ন বদর মোকাম মসজিদটি এই জেলার প্রাচীনতম মসজিদ।
ইতিহাসের পাতা উল্টে জানা যায় ১৭৫১ খ্রীঃ স্থাপিত মসজিদটি পীর বদরশাহ’র নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে।
সবচেয়ে দুঃখ জনক বিষয় হচ্ছে জাতীয় তথ্য বাতায়ন কক্সবাজার জেলায় মসজিদ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তালিকায় এই বদর মোকাম মসজিদ স্থান পায়নি।
যখন কোন কিছু দৃষ্টিনন্দন হয় তখন তা মানুষকে মুগ্ধ করে। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে নির্মাণশৈলী। প্রজন্মের অনেক নান্দনিক চিন্তায় গড়ে উঠেছে চোখ ধাঁধানো কারুকার্যময় মনোমুগ্ধকর বদর মোকাম মসজিদ। কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রী’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছৈয়দ মোহাম্মদ আলীর প্রচেষ্টায় জেলার ঐতিহ্যবাহী কক্সবাজার বদর মোকাম জামে মসজিদ মধ্যপ্রাচ্যের আদলে নান্দনিক শৈলী ও নিপূণ কারুকার্জ মন্ডিত নব আঙ্গিকে সাজানো হযেছে।
শিল্পের ছোঁয়ায় সংস্কার করা হয়েছে স্থাপত্যশৈলীর নয়নাভিরাম মোকাম জামে মসজিদ। বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এই মসজিদ।
তবে, কক্সবাজার জেলা জুড়ে এই বদর মোকাম মসজিদের রয়েছে আলাদা মাহাত্ম্য। সকল ধর্মের মানুষ এই মসজিদকে শ্রদ্ধা করে হৃদয়ের গভির থেকে। বিভিন্ন ধর্মের ধার্মিকরা আস্থা রাখে এই মসজিদের প্রতি। এবং জেলার মানুষ এই মসজিদের মানস করে থাকে।
মসজিদটির কারুকাজ এবং ডিজাইনের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা, তুর্কি, চীন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অনুসরণ করা হয়। ক্যালিগ্রাফি ডিজাইনের এই মসজিদটি বাইরের অংশ থেকে ভেতরের ডিজাইনকে বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আর রূপময় স্বপ্নীল পৃথিবীতে ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যেতে মন ছুটে চলে অজানা কোনো সৌন্দর্যের হাতছানি পাহাড়, নদী, সাগর ও অরণ্যে। মাঝে মাঝে বড় একঘেয়ে মনে হয়। মন চায় কোনো শিল্পের কারুকার্যে মন রাঙাতে। আর সে মনের খোরাক জোগাতেই দূর থেকে দূরে ছুটে চলা। সে চলার পথের একটি ঠিকানা কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী বদর মোকাম মসজিদ।
ভেতরের দর্শনীয় স্থানে শোভা পাচ্ছে আল কুরআন। বিশালাকৃতির নয়টি অত্যাধুনিক ও মূল্যবান ঝাড়বাতি বসানো হয়েছে। মুসুল্লিদের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। আধুনিক করা হয়েছে অযুখানা।
মসজিদের তিনতলা বিশিষ্ট ভবনে রয়েছে অফিস, খতিব ও মুয়াজ্জিনের কোয়ার্টার, হেফজখানা ও মাদরাসা। মসজিদটিতে রয়েছে কবরস্থান ও গাড়ি পার্কিং।
বদর মোকাম মসজিদ পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছৈয়দ মোহাম্মদ আলী বলেন, কক্সবাজারের বহু ঐতিহ্য রয়েছে এসব ঐতিহ্যের একটি বদর মোকাম মসজিদ। আমি এই মসজিদের জন্য কিছু করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। যদিও তেমন কিছু করতে পারিনি। আমরা এই বদর মোকাম মসজিদকে আধুনিক করার চেষ্টা করেছি। আমার পরিকল্পানা রয়েছে এই মসজিদকে আরো আধুনিক করে আন্তর্জাতিক মানের এক মসজিদে রুপ দেয়ার।
‘মসজিদ’ আরবি ভাষার শব্দ। যার আবিধানিক অর্থ শ্রদ্ধাভরে মাথা অবনত করা। অর্থাৎ সিজদা করা। মসজিদের উৎপত্তি বা উৎকর্ষের ক্ষেত্রে সেই খোলাফায়ে রাশিদিনদের সময় থেকে আজ অবধি মসজিদ প্রতিষ্ঠার যাত্রা থেমে নেই। মসজিদ-মাদরাসা-মক্তব, ইমাম ও মুয়াজ্জিন এগুলো মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনের সাথে একনিষ্ঠভাবে জড়িত। এসবের সাথে মুসলমানদের জড়িয়ে থাকার ইতিহাস নতুন কিছু নয়, অনেক পুরনো এবং ইসলামের প্রারম্ভিক যুগ থেকেই এসব ইসলামী সমাজকাঠামোর উল্লেখযোগ্য উপাদান। মসজিদই হয়ে উঠতে পারে সংস্কৃতি পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।
বদর মোকাম মসজিদটি রাতে অনেক বেশি নয়নাভিরাম মনে হয়। কারণ এর ভেতরে-বাইরে এমনভাবে আলোকসজ্জা করা হয়েছে, যা দর্শকদের নিয়ে যায় অপার্থিব জগতে। যা দেখে মনে পড়বে মহান স্রষ্টা আল্লাহর কথা, আপনা থেকেই মাথা নুয়ে আসতে চাইবে মহান প্রভুর দিকে। প্রতিদিন অগণিত দর্শনার্থীরা ভিড় জমান এর আঙিনায়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।