এম.আর, মাহামুদ
রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। তার কারণ অনুসন্ধান করা জরুরী হয়ে পড়েছে। সরকার মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত বিশাল জনগোষ্ঠিকে সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়িতে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কর্মকান্ড ও আচরণে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে এসব উপজেলায় বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিনই উপার থেকে রোহিঙ্গারা আসছে। কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।
সহায় সম্বলহীন লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের সরকারী সহায়তায় স্থানীয় দানশীল ব্যক্তি দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থার ত্রাণের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। কিন্তু তাদের অবস্থা, আচার-আচরণ পরিবর্তন হচ্ছে না। মনে হচ্ছে দুধ-কলা দিয়ে পুষলেও বিষাক্ত সাপকে বিশ্বাস করা যায়না। প্রতিনিয়ত ইয়াবা, অস্ত্রসহ রোহিঙ্গাদের অনেকে গ্রেফ্তার হচ্ছে। ভূয়া পরিচয়ে পাসপোর্ট ও ভোটার হতে গিয়ে আটকও হচ্ছে। পুলিশের উপরও হামলা করতে ভয় পাচ্ছেনা। স্থানীয় লোকজন হামলার শিকার হচ্ছে। ইতিমধ্যে একজন খুনও করেছে। এসবকি ভাল লক্ষণ! মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিলেও তা কি বিশ্বাস করা যায়? কারণ মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী মনে করছে তারা রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে অনেকটা আপদ মুক্ত হয়েছে। তবে মানবতার কারণে আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ এখন আর বিপদমুক্ত হতে পারছেনা। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীও উগ্র বৌদ্ধরা যখন রোহিঙ্গাদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষন, লুঠপাট ও বাড়িঘর জালিয়ে দিয়ে সহায় সম্পদহীন অবস্থায় দেশ ছাড়া করছে, তখন আমাদের খাদ্যমন্ত্রী স্ব-স্ত্রী চাল আমদানী করতে গিয়েছিল মিয়ানমারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় সম্প্রতি মিয়ানমার গিয়ে সেদেশের কর্ণদার অংসান সূচির সাথেও বৈঠক করেছেন। অংসান সূচিসহ স্বেদেশের কর্ণধারেরা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আশার বাণী শুনিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সে দেশে ফিরিয়ে যাওয়ার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। চলতি মাসের মধ্যে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ যৌথভাবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু রোহিঙ্গা বিতাড়ন আজ পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। এখনও সীমান্তের ওপারে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা এপারে আসার অপেক্ষমান রয়েছে। কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দেশ বিদেশ পত্রিকায় একটি ছবি ছাপানো হয়েছে ছবিতে দেখা গেছে, সাঁতার কেটে অসংখ্য রোহিঙ্গা যুবক নাফ নদী পার হয়ে পালিয়ে আসছে। দৃশ্যটি বড়ই করুন। সরকারী ভাবে রোহিঙ্গাদের সন্দ্বীপের ভাসান চরে (টেঙ্গার চর) নিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। এছাড়া কোন বিকল্প আছে বলেও মনে হয়না। বৃটিশ আমলে মারাত্মক অপরাধীদের আইনগত ভাবে দ্বিপান্তর করত। এখন সে আইনটি বিলুপ্ত হয়েছে। রোহিঙ্গারা সবাই অপরাধী নয়। এখানেও অনেক সঙ্গতি সম্পন্ন ও ভাল পরিবার রয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করে তাদেরকে ভাসান চরে পুনর্বাসন করলে অপরাধ প্রবণতা কমার সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়া শংকামুক্ত হবে উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির স্থায়ী বাসিন্দারা।
একটি সুত্র দাবী করেছে গত দু’ মাসে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় দেড় হাজার শিশু জন্ম গ্রহণ করেছে। ৩০ হাজার নারী গর্ভবতী রয়েছে। এছাড়া নানা রোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গারাও এপারে এসেছে। এমনকি মরণঘাতী এইড্স রোগিও রোগিও রয়েছে। প্রবীণ এক ব্যক্তির মতে আল্লাহই ভাল জানে- রোহিঙ্গাদের নিয়ে কি অবস্থা এদেশে হয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী “মানবতার মা হিসেবে” খ্যাতি অর্জনসহ বিশ্ব নন্দিত হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা না হলে “নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের মত” অবস্থায় হতে পারে। এদেশে আশ্রয় নেয়া বেশিরভাগ রোহিঙ্গা অসচেতন। শিক্ষা দীক্ষায় অনগ্রসর। তারা মনে করছে এদেশে অনন্তকাল আরাম আয়েশে দিন কাটাবে। রোহিঙ্গারা সেদেশে থাকা তাদের আত্মীয় স^জনকে প্রতিদিনই মোবাইল ফোনে সংবাদ দিচ্ছে তাড়াতাড়ি চলে আসতে। তাদের ভাষায় সেখানে “চাষ করলে পায়, আর এখানে লাইনে দাঁড়ালেই পায়”। একারণে রোহিঙ্গা আগমণ ঠেকানো যাচ্ছেনা। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে যেতে না দেয়ায় উল্টো দোষারোপ করছে। তাদের দাবী বৈদেশিক সহায়তার আশায় রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফিরতে দিচ্ছেনা। আবার কিছু কিছু রোহিঙ্গা সু-কৌশলে মূল স্রোতের সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে অন্তত ২৫ হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা মূল স্রোতের সাথে মিশে গেলে দেশের সর্বনাশ হবে। অপরদিকে ত্রাণ পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেয়া ক্যাম্পে কাটা তারের বেড়া দেয়ার জন্য ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে কাঙ্খিত সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছে না বিজ্ঞজনেরা। কারণ ওরাও মানুষ, সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী নয়। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জন্মের পর থেকে মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠি ও উগ্র বৌদ্ধদের কাছ থেকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা খুন-খারাপিসহ কোন সহায়তা পাইনি। পাইনি নুন্যতম নাগরিক সুবিধা। এ কারণেই রোহিঙ্গারা হাঙ্গামা প্রিয় হওয়ার পিছনে যথেষ্ট যুক্তি আছে। রোহিঙ্গাদের বপন করা আমন ধান কাটার সময় চলছে। রোহিঙ্গারা যে ধান রোপন করেছে তা কেটে নিয়ে যাচ্ছে উগ্র বৌদ্ধরা। আবার এসব চাল বাংলাদেশ সহ খাদ্য সংকটপূর্ণ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করবে। আর রোহিঙ্গাদের ঘামে উৎপাদিত চাল বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাবে রিলিপ হিসেবে। সেদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করতে গিয়ে বলেছেন- রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। এদেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের বিশাল বোজা বেশিদিন বহন করা সম্ভব হবেনা। কক্সবাজারের প্রবীণ এক বিজ্ঞজনের অভিমত, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতা দেখালেও দেশের চরম ক্ষতি হয়েছে। যা পূরণ করা সম্ভব হবেনা। তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছেন- “ইয়াকা মরের বিষ”।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।