মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
আশরাফুল মাখলুকাত- সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ। আর এ মানুষকে সৃষ্টিকর্তা মনুষ্যত্ব গুণাবলী দান করে সৃষ্টিতে করেছেন মহীয়ান। স্রষ্টা প্রত্যেক মানুষকে মনুষ্যত্ব দান করলেও জগতের প্রার্থিব জীবনে বাস্তবতার নিরিখে অনেক মানুষের উপলব্ধিতে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটেনা। লোভ ও মোহের উর্দ্ধে উঠে প্রত্যেক মানুষকে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হয়। কিন্তু সব মানুষ তা পারে না। লোভ- লালসার উর্দ্ধে উঠে কিছু কিছু মানুষ জীবনে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে সফল মানুষের স্বীকৃতির স্তরে নিজেকে উন্নীত করে। এরকম একজন সফল মানুষের প্রতিচ্ছবি ছিলেন মরহুম খাঁন সাহেব হাজী মো. ওমরা মিয়া চৌধুরী। তাঁকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে- এটাই হচ্ছে একজন সফল ও আদর্শ মানুষের সফলতার স্বীকৃতি। সুন্দর আগামী সৃষ্টির জন্য শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত না থেকে এ মানুষটি নিজের জীবনের মূল্যবান সময় ও অর্থ উৎসর্গ করেছিলেন পরার্থে। পৃথিবীতে এমনও হাজারো মানুষ রয়েছে যাদের হাজারো অর্থ-বৈভব রয়েছে কিন্তু এক কপদর্কও পরার্থে বিলিয়ে দিতে নারাজ। যাদের ব্যাপারে নি¤েœর প্রবাদটি প্রযোজ্য-‘অ ৎরপয সধহ রিঃযড়ঁঃ পযধৎরঃু রং ধ ৎড়মঁব’-পরের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত রাখাটা যেনতেন ব্যাপার নয়, পুরোটাই ত্যাগের। খাঁন সাহেব হাজী মো. ওমরা মিয়া চৌধুরীর মধ্যে এই গুণটি ছিল বলেই স্কুল, মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ গরীব দুঃখীদের আর্থিক অভাব মোচনে এবং সমাজ সংস্কারে নিরলসভাবে কাজ করেছিলেন। তাঁর পিতা চাঁন মিয়া চৌধুরীও দান- দক্ষিণাসহ সমাজ সংস্কারে অনেক ভূমিকা রেখেছিলেন। জীবন, জগৎ ও ধর্ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা পোষণ ও লালনকারী, ধর্ম-কর্মে অনুরাগী মরহুম খাঁন সাহেব হাজী মো. ওমরা মিয়া চৌধুরী চট্টগ্রাম শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত শিকলবাহা গ্রামে ১৮৬৬ সালে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর ৫ ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় ছেলে ফজল আহম্মদ চৌধুরী, মেঝ ছেলে হাফেজ আহম্মদ চৌধুরী, ৩য় ছেলে এরশাদ আহম্মদ চৌধুরী, ৪র্থ ছেলে কামাল আহম্মদ চৌধুরী, ৫ম ছেলে জামাল আহম্মদ চৌধুরী। তিন মেয়ে আফিয়া খাতুন, আয়েশা খাতুন ও আছিয়া খাতুন। মরহুম খাঁন সাহেব হাজী মো: ওমরা মিয়া চৌধুরীর ওয়ারিশরা তাঁরই পদাংক অনুসরণ করে সমাজ সেবা করে যাচ্ছেন। এরকম তাঁর একজন ওয়ারিশ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের নেতা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, কিংবদন্তি মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ঘনিষ্ট সহচর মরহুম এরশাদ মিয়া চৌধুরীর ৩য় ছেলে অধ্যাপক এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী যিনি সাদার্ন ইউনিভার্সিটির ফার্মেসী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান-তিনিও দাদা খাঁন সাহেব হাজী মো. ওমরা মিয়া চৌধুরীর পদাংক অনুসরণ করে একটি মাদ্রাসা, একটি এয়াতিমখানা ও হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া শিকলবাহা প্রফেসর মহিউদ্দিন চৌধুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি জমি দান করেন।
ধর্মও কর্মে অনুরাগী মরহুম খাঁন সাহেব হাজী মো. ওমরা মিয়া চৌধুরী ১৯৪০সালে এলাকার লোকদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। হজরত মুহাম্মদ (স:) এর মুখ নি:সৃত বাণী (সহীহ হাদীস) ‘যে পৃথিবীতে একটি মসজিদ নির্মাণ করলো, সে যেন আখেরাতের জন্য একটি ঘর বানালো’। তাঁর তৈরী মসজিদটির কলোবর বৃদ্ধিসহ দৃষ্টিনন্দন মসজিদে রূপান্তর করেছেন তাঁরই নাতি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রফেসর এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী। পশ্চিম পটিয়ায় কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় ৭টি ইউনিয়নের ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার সুবিধার্থে খান সাহেব হাজী মো. ওমরা মিয়া চৌধুরী ১৯৫১ সালে ৫একর জমি দান করে প্রতিষ্ঠা করেন কালারপোল হাজী মো. ওমরা মিয়া চৌধুরী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়-যা পশ্চিম পটিয়ার প্রথম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চট্টগ্রামের বড় বড় বিদ্যালয়গুলোর অন্যতম একটি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা শিক্ষার্থী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে অকাতরে দেশের সেবা করে যাচ্ছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ২টি কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর জন্য সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে বিরাজমান থাকবে। উক্ত ২টি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সমাজ উন্নয়নে আরো অনেক ভূমিকা রাখায় তদানিন্তন ব্রিটিশ সরকার হাজী মোহাম্মদ ওমরা মিয়া চৌধুরীকে ‘খাঁন সাহেব’ উপাধি দিয়েছিল
এরকম সমাজ চিন্তক, মানবহিতৈষী, জনদরদী, দানশীল ও শিক্ষাব্রতী মানুষের সংখ্যা সমাজে যত বেশী হবে, সমাজ ও রাষ্ট্রের মঙ্গল ততবেশী তড়ান্বিত হবে। সে মহান ব্যক্তি ১৯৬২ সালের ১১ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। জীবন ক্ষণস্থায়ী, কর্ম ও কীর্তি দীর্ঘস্থায়ী- তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন খাঁন সাহেব হাজী মোহাম্মদ ওমরা মিয়া চৌধুরী।
লেখক:প্রধান শিক্ষক, কালারপোল হাজী মোহাম্মদ ওমরা মিয়া চৌধুরী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলাম লেখক।