বিশেষ প্রতিবেদক :
সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। অবহেলিত কর্ণফূলী ও আনোয়ারা জনপদে সরকারের একাধিক গুরুত্বপুর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে ভূমিপ্রতিমন্ত্রীর চেষ্টায়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার কর্ণফূলী ও আনোয়ারা বেশ গুরুত্বপুর্ন এলাকা। বঙ্গোপসাগর উপকূলে অবস্থিত এ এলাকায় রাষ্ট্রপরিচালিত সার-কারখানা,সিইউএফএল,কাফকো ও কেইপিজেড সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে কর্ণফূলী টানেল।
কর্ণফূলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিতব্য টানেলের মুখ বেরিয়ে যাবে আনোয়ার উপজেলায়। টানেলের সুড়ঙ্গপথ হয়ে চট্টগ্রামে চলাচল করবে সব ধরনের যানবাহন। বদলে যাবে নগরীর পাশে থাকা নগর ও গ্রাম।
ইতিমধ্যে আনোয়ায়ায় গড়ে উঠছে চীনা রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল। যদিও ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে ৩৯০তম সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা কর্ণফূলী। দীর্ঘদিন অবহেলিত কর্ণফূলী এলাকার মান উন্নয়নে কাজ করা জরুরী বলে মনে করেন কর্ণফূলী উপজেলার স্বেচ্চাসেবকলীগের সাংঘনিক সম্পাদক আব্দুল মাবুদ বাবুল। পার্শ্ববর্তী আনোয়ারার পারকী সমুদ্র সৈকতে গড়ে তোলা হচ্ছে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন। চীনা ইকোনমিক জোনের ও কাজ চলছে।
তথ্যমতে,পর্যটন মন্ত্রানালয় এর অধীনে এখানে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে থ্রি অথবা ফোরস্টার মানের হোটেল সহ অত্যাধুনিক পর্যটন স্পট হতে চলেছে। বিশ্বের সব দেশের পর্যটকেরা ভীড় করবে পারকী সৈকতের তীরে। যার বাস্তবায়নেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ভূমিপ্রতিমন্ত্রী।
উন্নয়নের বৈপ্লবিক পরিবর্তনে বদলে দিচ্ছেন বর্তমান সরকারের ভূমিপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। জানা যায়, তিনি দুই মেয়াদে আনোয়ারায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেড়িবাঁধের জন্য আরো ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে বন্দরের অদূরেই চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গহিরা এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের জন্য ৭শ’ ৭৪ একর জমি ব্যবহারের জন্য গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
এর মধ্যদিয়ে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫৩ হাজার ৪২০ জন লোকের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আনোয়ারা অর্থনেতিক জোনের অবকাঠামো নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪শ’ ২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে এই অর্থনৈতিক জোনের জন্য ২শ’ ৯১ একর খাস জমির দলিল সম্পাদন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কর্নফূলী উপজেলা নির্মানে প্রাথমিকভাবে ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ।
এদিকে দেশের উদীয়মান ও রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইলেকট্রিক ও ইলেট্রনিকস পণ্যসামগ্রী, ফার্নেস ও সিমেন্ট শিল্পকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তোলা হবে।
সেখানে ৩শ’ ৭১টি শিল্প-কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে। এরমধ্যে ২৫০টিই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বরাদ্দ থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনোয়ারায় অর্থনৈতিক জোনের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫৩ হাজার ৪২০ জন লোকের কর্মসংস্থান হবে।
প্রস্তাবিত আনোয়ারা অর্থনৈতিক জোনের কাজ ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার টার্গেট ২০২০ সাল। প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে তেমন অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা নেই। নেই বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন, ল্যান্ড ফোন ও সুপেয় পানির সরবরাহ সুবিধা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সংযোগ সড়ক থাকলেও তা জরাজীর্ণ বেহাল। এর পরিপ্রেক্ষিতে অবকাঠামো নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪শ’ ২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ সালে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল আইনবিধি করা হয়। এ আইনবিধির আওতায় আগামী ১৫ বছরে দেশে একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান এবং প্রতিবছর ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যসামগ্রী রফতানির সুযোগ সৃষ্টি করতে চায় সরকার।
এ লক্ষ্যের অংশ হিসেবে বিগত সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় চীনা প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে বিশেষ অর্থনেতিক ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব দেন। পরে এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তের ভিত্তিতে জমি দেবে এবং চীন সরকারের মনোনীত প্রতিষ্ঠান উক্ত জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে।
মধ্যে দেশের মোট ৯টি অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় অঞ্চল ও বৃহদাকারে বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় প্রকল্প হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের প্রকল্পটি। তার পরে কর্ণফূলী, আনোয়ারা,মহেশখালি, সোনাদিয়া,রামু। চট্টগ্রাম বৃহত্তর এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে ব্যাপক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিপ্রতিমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম ১৩ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ গনমাধ্যমকে জানান, বাবার স্বপ্ন ছিলো আনোয়ারা ও কর্ণফূলী এলাকাকে মডেল এলাকায় রুপান্তর করা। প্রধানমন্ত্রী আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। কর্ণফূলীকে ৩৯০তম উপজেলা ঘোষনা করে। এবার অন্তত কর্ণফূলী এলাকার মানুষ ত্রিমূখী শাসন হতে মুক্তি পেয়ে দুঃখ কষ্ট ঘুচবে।
তথ্যসুত্রে জানা যায়,১৯৯১ সালে বিএনপির এড: কবির চৌধুরীকে হারিয়ে এ আসনে জয়লাভ করেন প্রয়াত নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। ১৯৯৬ সালে ও ২০০১ সালে বিএনপি হতে নির্বাচিত হন সরওয়ার জামাল নিজাম। পরের দফায় ২০০৮ সালে বিএনপির এই সাংসদকে পরাজিত করে আবারো জয়ী হন আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু।
পরে ২০১২ সালে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর হঠাৎ মৃত্যুর পর এ আসনে উপনির্বাচনে তার সুযোগ্য ছেলে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নির্বাচনে জয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ও জয়ী হয়ে পরে ভূমিপ্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে বদলে দিচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।