শাহেদ মিজান, সিবিএন:
কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে মিয়ানমারে বৌদ্ধ প্রতিনিধি পাঠাতে পারে বাংলাদেশ। বৌদ্ধ প্রতিনিধির মাধ্যমে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা অনেকটা সহজ হবে। কক্সবাজার ইতিহাস গবেষণা পরিষদ আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট: সমাধান কোন পথে’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এই মত দিয়েছেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, মিয়ানমার বৌদ্ধা অধ্যুষিত রাষ্ট্র। সে দেশের সরকারও বৌদ্ধ নেতৃত্বাধীন। বাংলাদেশ বৌদ্ধ প্রতিনিধি পাঠালে মিয়ানমার তাদের সহজে গ্রহণ করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সমাঝোতায় এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে এই বৌদ্ধ প্রতিনিধি পাঠানো যেতে পারে।
এর পক্ষে যুক্তি তোলে ধরে বক্তারা বলেন, মিয়ানমার বর্তমান সভ্য যুগেও এখনো অসভ্য একটি দেশ। তারা পৃথিবীর নিয়ম-কানুনতো মানেই না; এমনকি জাতিসংঘ বা পৃথিবীর কারো সুপারিশ ও চাপও গ্রাহ্য করছে না। এই অসভ্যতার অংশ হিসেবে তারা সভ্য পৃথিবীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করছে। এই পরিস্থিতিতে বৌদ্ধ প্রতিনিধি পাঠালেই তারা নমনীয় হতে পারে।
শনিবার সকাল ১১টায় কক্সবাজার সিটি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় কলেজে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে সভাপতিত্বে করেন কক্সবাজার ইতিহাস গবেষণা পরিষদের সভাপতি ও মোস্তাফিজুর রহমান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হেছামুল হক। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং, কক্সবাজারের সিনিয়র
সাংবাদিক ও গবেষক মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, কক্সবাজার সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবু মো. জাফর সাদিক, এড. ফরিদুল আলম, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমির সাধারণ সম্পাদক রুহুল কাদের বাবুল, কক্সবাজার সিটি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আকতার চৌধুরী, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শারমিন ছিদ্দিকা। ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট ও সমাধানের উপায়’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিটি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দীন।
সেমিনারে বক্তারা আরো বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের উপর যে নির্যাতন চালিয়েছে তা শতাব্দির বড় বর্বরতম ঘটনা। এর উপর তারা জাতিসংঘসহ পৃথিবীর কারো গ্রাহ্য করছে না। এর মাধ্যমে বার বার প্রমাণিত হচ্ছে মিয়ানমার একটি অসভ্য দেশ। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে এত বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব না। এতে বাংলাদেশ খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে মারাত্মক সমস্যায় পর্যবসিত হবে। এদেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন ও জঙ্গি তৎপরতার মতো বহু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হবে। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমেই তা সম্ভব। তা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
বক্তারা বলেন, বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ প্রয়োগ করতে হবে। কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন করে এই সমস্যা মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে তাদেরকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে স্বাধিকার দিতে হবে। রোহিঙ্গাদেরও সে দেশের জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গঠনে কাজ করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতায় ভারত, চীন ও রাশিয়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। তারা চাইলে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে মিয়ানমার।
বক্তারা বলেন, শরণার্থীরাই পৃথিবীকে গড়েছেন। শরণার্র্থী না হলে আজকের আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া গড়ে উঠতো না। তাই শরণার্থীর দোহাই দিয়ে কোনো জাতিকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। ইতিহাস বলে দেয় কোনো জাতি কোনো সময় নির্মূূল হয়নি। রোহিঙ্গারাও নির্মূল হবে না। মিয়ানমার যদি অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে তাহলে তাদের একদিন অপূরণীয় মাশুল গুণতে হবে। তাই তাদের উচিত হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে নিজেদের লোকদের ফিরিয়ে নেয়া। তা না করলে জাতিসংঘকে মিয়ানমারে নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে হবে।
প্রাণবন্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত ওই সেমিনার উপস্থাপনা করেন কক্সবাজার ইতিহাস গবেষনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার সরকারি কলেজের প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম। এতে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ও সিটি কলেজের বেশ পরিমাণ শিক্ষার্থী, বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ নেন। সেমিনারের আয়োজনে সহযোগিতা করেন সিটি কলেজের প্রভাষক শাহনেওয়াজ মোর্শেদ, নাসির উদ্দীন (২), আনোয়ার জাহেদ, জসিম উদ্দীন, সাইফুদ্দিন, সালাহ উদ্দীন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে রুহুল আমিন, আবদুল মান্নান রানা, এরশাদ উল্লাহ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।