এইচ. এম. রুস্তম আলী, ঈদগাঁও:
কক্সবাজার সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁওতে ছুরিকাঘাতের ঘটনা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জমিজমার বিরোধ, পাওনা টাকা, শালিসী বৈঠক, সামান্য কথা কাটাকাটিসহ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটছে। এতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছে অনেকে। এসমস্ত ছুরি মারামারির বেশির ভাগ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারছে না। অনেকের ধারণা, রাজনৈতিক কিংবা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের প্রভাবে অধিকাংশ ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে। গত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪ জন। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে অনেকেই। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১০ জুন শনিবার চৌফলদন্ডী নতুন মহালের বদিউর রহমানের পুত্র মাদ্রাসা শিক্ষক সাইফুল ইসলাম রাত্রে নতুন মহাল বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে খুন করার উদ্দেশ্যে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা ঘাতক সাহাব উদ্দীন ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরদিন ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী সাহাব উদ্দীন গ্রেফতার হলেও ঘটনার মূল হোতা যারা টাকা দিয়ে সাইফুলকে হত্যা করার জন্য সন্ত্রাসী ভাড়া করেছিল ছুরত আলম, শামসুল আলম, রশিদ আহমদ এখনো গ্রেফতার হয়নি।
১০ জুলাই মঙ্গলবার চৌফলদন্ডী নতুন মহাল কালু ফকির পাড়ার ছৈয়দ আলমের সৌদি ফেরত যুবক ছৈয়দ করিমকে একই এলাকার লাল মিয়ার পুত্র সন্ত্রাসী ওসমান পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। কথা বলার এক ফাঁকে ঘাতক ওসমান রুমের ভিতরে গিয়ে ছুরি নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে বাড়ির লোকজনের সামনে ছৈয়দ করিমকে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত করে। ঐদিন রাত্রে কক্সবাজারের একটি বেসরকারী হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আজ ৪ মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ ঘাতক ওসমানকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘাতকের বাবা মুক্তিযোদ্ধা এবং বড়ভাই সরকার দলের জেলা নেতা হওয়ায় ঘটনার পরদিন উল্টো ওসমানের বাড়িতে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ পাহারা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রশাসন। স্থানীয় এক জনপ্রিয় সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশ সবকিছু খুঁজে পায় কিন্তু ঘাতক ওসমানকে পায় না। নিহত ওসমানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শালা জানান, আমার দুলাভাইয়ের প্রধান আসামী ওসমানকে ধরার জন্য আমরা পুলিশকে বেশ কয়েকবার টাকা-পয়সা দিয়েছিলাম এবং তার ব্যাপারে তথ্য দিয়েও সহযোগিতা করেছিলাম। মাসখানেক আগেও আসামী ওসমান মহেশখালীর তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল। সে কেন গ্রেফতার হচ্ছে না তা আমরা জানিনা। মামলার অগ্রগতি ও তেমন নেই। এলাকার কয়েকজন লোক বলেন, ওসমানকে মাঝেমধ্যে বাড়ি আসতে দেখা যায়।
১৪ সেপ্টেম্বর বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় জালালাবাদের বাহারছড়া এলাকায় জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে জহিরের দোকানের সামনে স্থানীয় মৃত ইলিয়াছের পুত্র শামসুল আলমকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় দূর্র্বৃত্তরা। ঈদগাঁওস্থ একটি ক্লিনিকে তার মৃত্যু হয়। শামসুকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে নিহতের চাচা নুরুল হকসহ আরো ২ জন গুরুতর আহত হন। ঘটনার দিন পুলিশ ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘাতককে গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসলেও অদ্যাবধি কেউ গ্রেফতার হয়নি।
ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্য নাপিতখালীর হ্নীলা গ্রামের সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে ৩ ফেব্রুয়ারী সকাল ৮টায় আবুল কাশেমের পুত্র শাহজালালকে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাত করে মহিউদ্দীন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছিল। অবশ্য সেদিন জনতার গণপিটুনীতে ঘাতক মহিউদ্দীন প্রকাশ ককটেল মহিউদ্দীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ মামলায় ২ আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে। ১৮ অক্টোবর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ইসলামপুর বামনকাটা গ্রামে পাওনা টাকার শালিসী বৈঠকে হাজিপাড়া গ্রামের আলতাজের পুত্র ইনজামুলসহ এলাকার ৪/৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী মৃত আমির সুলতানের পুত্র সৌদি ফেরত আবদুল কাদের বাচ্চুকে ছুরিকাঘাত করে। এ ঘটনায় স্থানীয় মেম্বার ইদ্রিছ এবং ১ নারীসহ ৫জন আহত হয়েছিল। আহতদের মধ্যে এখনো কয়েকজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যতদূর জানা যায়, এ ঘটনায়ও এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। ২৩ অক্টোবর ঈদগাঁও বাজার সুপারির গলিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২ দোকান স্টাফদের মধ্যে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে এক দোকান স্টাফ গুরুতর আহত হয়। আহতকে চিকিৎসা দেওয়ার পর স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংসা করেছে বলে জানান যুবলীগ নেতা নাছির উদ্দীন জয়। এতেই শেষ নয়। গত ১০ নভেম্বর রাতে নাপিতখালী বটতলীর তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে আহত হন ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, শিল্পপতি আলহাজ¦ অছিয়র রহমানের বড় ছেলে ফিরোজ আহমদ। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে ৩ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। সচেতন মহলের মতে, কেন ঘটছে এসব ঘটনা? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? অনেকেই বলেন, সামাজিক কারণে পারিবারিক বন্ধনগুলো বেশ দূর্বল হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অস্থিরতা। মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারষ্পরিক শ্রদ্ধার ঘাটতি, অসুস্থ, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, ক্রমশ মানুষকে হিং¯্র করে তুলছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।