পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের জন্য শিক্ষকদের দায়ী করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, কিছু শিক্ষক আগে থেকে অ্যারেঞ্জমেন্ট করে রাখেন। সকাল বেলা যখন তাদের হাতে প্রশ্ন যায়, তারা প্রশ্নপত্র ছাত্রদের দিয়ে দেন। এজন্য আমরা শিক্ষকদের নৈতিকতা উন্নতির বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগে বিজি প্রেস (সরকারি ছাপাখানা) ছিল প্রশ্নেফাঁসের খুবই রিস্কি জায়গা। এখন সেখানে প্রশ্নফাঁসের কোনও সম্ভাবনা নেই। প্রশ্ন ছাপার পর আমরা তা জেলায় পাঠাচ্ছি- সেখানে ফাঁসের কোনও সম্ভাবনা নেই, থানায় পাঠাচ্ছি সেখানেও কোনও সম্ভাবনা নেই। কেবলমাত্র সকাল বেলা ওইদিনের প্রশ্ন প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। আমরা সকাল বেলা যখন শিক্ষকদের হাতে প্রশ্ন দেই তখন কিছু শিক্ষক আছেন, যারা সেটা আগেই অ্যারেঞ্জমেন্ট করে রাখেন। প্রশ্নপত্র ছাত্রদের দিয়ে দেন। আমরা এবার পদক্ষেপ নিয়েছি। সকাল বেলা আধাঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীরা হলে ঢুকবে। এতে তাদের সুবিধাও হবে। একটু রেস্ট পাবে। খাতায় তার নামধাম লেখালেখির কাজও সেরে নেবে। আধাঘণ্টা আগে প্রশ্নের খামটা খোলা হবে। এ বছরও সাড়ে ৯টার পরে একটি প্রশ্ন ফেসবুকে দিয়ে দিয়েছে। শিক্ষকের হাতে যখন প্রশ্নপত্রটি গেল তখন নিরাপত্তা ব্যাহত হলো। এজন্য আমরা শিক্ষকদের নৈতিকতা উন্নতির বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।’
পরীক্ষার সময় শিক্ষকদের স্মার্ট ফোন ব্যবহর নিষিদ্ধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার হলে কেউ স্মার্ট ফোন নিয়ে যেতে পারবে না। একান্ত যোগাযোগের জন্য আনস্মার্ট ফোন নিতে পারবে। তবে সেটাও পরীক্ষার সময় অফিস রুমে রাখতে হবে।’
প্রশ্নফাঁস রোধে সংসদ সদস্যসহ সবার সহযোগিতা চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস যাতে বন্ধ হয় এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই। তা না-হলে এগুতে পারবো না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্যাটা হয়েছে, তার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে যারা দোষী সাবস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি আজও (বৃহস্পতিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম তাদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। আমি আশা করি, এই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যাতে আর (প্রশ্নফাঁস) না হয়, সেজন্য আরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কোচিং বাণিজ্যের প্রসঙ্গে বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গার্ডিয়ানদের অনেকের টাকা বেশি। অনেক শিক্ষক ক্লাসে পড়ান না, কোচিং বাণিজ্য করেন। আরেকটি হলো দোকান খুলে কোচিং বাণিজ্য চলছে। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে শিক্ষক, অধ্যাপকরা জড়িত বিধায় আমরা প্রচণ্ড চাপ দিয়েও বন্ধ করতে পারছি না। এজন্য আমরা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছি। আপনারা (এমপি’রা) আইন পাস করে দিলে এটা হয়তো আর হবে না।’
শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ব্যবহার প্রসঙ্গে সরকারি দলের এমপি সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোনও শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না বলে তিন বছর আগে একটি নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে এ ধরনের ঘটনা অবগত করা হলে আমরা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের বিষয়টি তদন্ত করে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সরকার দলের হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী এ তথ্য জানান।
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম কী’ প্রশ্নে জনমনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান তার প্রশ্নে জানতে চান- বিশ্ববিদ্যালয় কী নিয়ন্ত্রণহীন, যা ইচ্ছে তা গ্রহণ করবে, মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা?
জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম সম্পর্কিত অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নটি দেওয়ায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে পাঁচটি সভা করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার সুপারিশের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব আইনে পরিচালিত হয় বলে মন্ত্রী এ সময় উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা জানতে চান বিরোধী দলের সদস্য পীর ফজলুর রহমান।
জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্র সংসদের ঐতিহ্য ছিল। শিক্ষার মান, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতার জন্য ছাত্র সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে সামরিক শাসন কায়েম হওয়ায় ছাত্ররা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেই সময় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্ত্রের ঝনঝনানিতে বিপদগ্রস্ত ছিল।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত। সরকার সেখানে অর্থ দেয়, কিন্তু হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট আছে। সিন্ডিকেট এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, এখন নির্বাচন দেওয়ার পরিবেশ নেই। তবে তারা চেষ্টা করছে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাত্র সংসদ নির্বচান করার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা বিবেচনা করবেন। আর কলেজগুলোও নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে চায় না। তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কলেজে নির্বাচন হচ্ছে।’
এরপর জাতীয় পার্টির সঙসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘সামরিক শাসনের আমলে ছাত্র সংসদ নির্বচন হয়নি, তা সঠিক নয়। ১৯৮৮–৮৯ সালে এরশাদ সরকার ক্ষমতায় থাকতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হয়েছিল। ১৯৯০ সালেও ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। তিনি প্রশ্ন রাখেন- এখন কেন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।