শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর: 

রামু পার্বত্য অঞ্চল নাইক্ষ্যংছড়ি, বাইশারী, গর্জনিয়া, রশিদ নগর, জোয়ারিয়ানালা, ঈদগড়, ঈদগাঁও কেন্দ্রিক একটি অপহরণকারী চক্র ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রতিদিন মানুষ ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়সহ জানে মেরে ফেলার হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তাদের সিন্ডিকেটের প্রধান ডাকাত লাল পুতু নিহতের ঘটনায় হত্যার বদলা নিতে ঈদগাঁও কালিরছড়ার সাধারণ জনগণকে ধরে নিয়ে নির্যাতন, মারধর, হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তাদের গৃহপালিত গরু-মহিষ ধরে নিয়ে গহীন জঙ্গলে জবাই করে উচ্ছিষ্টটুকু রেখে চম্পট দিচ্ছে। ইতিপূর্বে একই এলাকার কামাল উদ্দীন ও খলিলুর রহমান প্রকাশ খইল্যা নামের ২ ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে বেঁধে রেখে তাদের সর্দার লাল পুতুকে কারা মেরেছে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনাটি কাউকে না বলার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়। গত ৪ দিন আগে ঈদগড় সড়কের ঢালা থেকে ঠুটারবিল এলাকার রুবেল নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। খবর পেয়ে পুলিশের কয়েকটি টীম তাৎক্ষনিক পাহাড়ে অভিযান চালালে পুলিশের উপস্থিতিতে অবস্থা বেগতিক দেখে ঈদগাঁও ভাদিতলায় এনে ছেড়ে দেয়। ঘটনাটি চাউর হলে এলাকাবাসীর মাঝে উদ্বেগ, আতঙ্ক বিরাজ করে। এ ঘটনার পরপরই কালিরছড়া ভুতিয়া পাড়া এলাকার রাজা মিয়ার পুত্র মুসলেম উদ্দীন প্রকাশ পুতিয়ার ২টি পালিত মহিষ গত ১৬ নভেম্বর ধরে নিয়ে জবাই করে মাংসটুকু নিয়ে চলে যায়। দীর্ঘ ২দিন খুঁজাখুজির পরও না পেয়ে স্থানীয় কাঠুরিয়া মারফত পেয়ে হামির পাড়া প্রজেক্টের পূর্ব পাশ থেকে মহিষের ২টি কাটা মাথা উদ্ধার করে নিয়ে আসে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের এমইউপি মাহমুদুল করিম মিনার জানান, ঐ স্থান থেকে মাথা দুটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং এ অপহরণকারী দলের সদস্য হিসাবে রামু রশিদ নগর উপজেলার কাহাতিয়া পাড়া, ধলিরছড়া বাবুলের পাহাড়, হামির পাড়া এলাকার দাগী ও চিহ্নিত অপরাধীদের বাড়ি তল্লাশী ও তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সব ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। তিনি আরো জানান, চলতি বছরের ১৮ মে কালিরছড়ার গহীন জঙ্গলে ডাকাত অবস্থানের খবর পেয়ে এলাকাবাসী ও পুলিশ জড়ো হয়ে তাদেরকে আটকের চেষ্টা চালায়। এসময় উভয়পক্ষের গুলাগুলিতে ডাকাত সর্দার লালপুতু নিহত ও অপর সহযোগী চিকন বড়ি নামের এক ডাকাত আটক হয়। এ ঘটনায় প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে কালিরছড়াবাসীর উপর বারবার নির্যাতনে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছে বলে জানিয়েছেন একই এলাকার ছগির আহমদ, আবুল হোছন, গিয়াস উদ্দীনসহ অনেকে। প্রায় ৬ মাস বন্ধ থাকার পর আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠায় ঈদগাঁও, ঈদগড়, বাইশারী, নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার হাজার হাজার মানুষের মাঝে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর দাবী, ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ফের জামিনে বেরিয়ে পুরনো পেশা ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণে জড়িয়ে পড়ছে। ঈদগড়ের বাসিন্দা জামাল উদ্দীন, আয়ুব আলীসহ অনেকে জানান, ফের অপহরণকারী চক্র সক্রিয় হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তারা জানান, টাস্কফোর্স গঠন করে সমগ্র পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে হবে এবং এলাকা ভিত্তিক যারা এ অপকর্মে জড়িত তাদের তালিকা প্রণয়ন করে আটক পূর্বক আইনের কাছে সোপর্দ করলে অনেকাংশে কমে আসবে অপহরণ ও ডাকাতির ঘটনা। মহিষ জবাই ও মাথা উদ্ধারের বিষয়ে জানান জন্য রামু থানার ওসি এ.কে.এম লিয়াকত আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ সংক্রান্ত কোন সংবাদ পাননি এবং খোঁজ খবর নিয়ে পাহাড়ে অভিযান চালানো হবে বলে জানান।