আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের চিত্র যারা তুলে ধরছেন সেসব প্রতিবেদক গুম হচ্ছেন। এসব ব্যক্তি দেশটির সেনাবাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের চিত্র গোপনে ধারণ করতেন তরুণ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীরা। পরে স্মার্টফোনের মাধ্যমে এসব অডিও-ভিডিও ও স্থির ছবি দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হতো।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, তথ্য সরবরাহের এই নেটওয়ার্ককে ধ্বংস করার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এইসব প্রতিবেদকদের অনেককে অপহরণ ও হত্যা করেছে। অবরুদ্ধ রাখাইন রাজ্যে কী ঘটছে সে সম্পর্কে জানার সুযোগ এখন তাই অনেক কমে গেছে।

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য স্টেটলেস-এ সম্পাদনার কাজ করেন রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ রফিক। তিনি জানিয়েছেন, গত বছর ক্র্যাকডাউন শুরুর পর রাখাইনের ৯৫ শতাংশেরও বেশি মোবাইল প্রতিবেদক নিখোঁজ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বার্মার সেনাবাহিনী ও রাখাইনের সন্ত্রাসীরা এখনো রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। তবে সেখানে রোহিঙ্গা মোবাইল প্রতিবেদকদের যে নেটওয়ার্ক ছিল তা এখন আর কাজ করছে না। বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পরিবেশনের জন্য সহিংসতার যে বিস্তারিত খবরগুলো আসা প্রয়োজন, তা আর আমাদের কাছে আসছে না।’

রফিক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরাও রোহিঙ্গা মোবাইল নেটওার্কের মাধ্যমে সহিংসতা সংশ্লিষ্ট খবরগুলো পেতেন। তারাসহ আমাদের সম্প্রদায়ের সংবাদমাধ্যগুলোও এখন রাখাইনের খবর খুব কম পাচ্ছে।’

বাংলাদেশভিত্তিক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মুখপাত্র কো কো লিন জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে দুই হাজার মোবাইল প্রতিবেদক রাখাইনে সক্রিয় ছিল। ‘গত বছর রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় মোবাইল প্রতিবেদকরা গ্রামগুলোতে সহিংসতার বিস্তারিত সংবাদ সংগ্রহ করতো। নিরাপত্তা অভিযানের নামে সেনাবাহিনী ও তাদের দোষর স্থানীয় সন্ত্রাসীরা যে সহিংসতা চালাতো তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী তা জানতে পেরেছে।’

মোবাইল প্রতিবেদকরা কীভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতেন তার বিবরণ দিয়েছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নুর হোসেন নামে এক মোবাইল প্রতিবেদক। তিনি বলেছেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী যখন আমাদের গ্রামে প্রবেশ করতো তখন আমরা লুকিয়ে পড়তাম। তারা যখন অভিযান শেষ করে ফিরে যেত তখন আমরা বের হয়ে ঘটনাস্থলের ছবি, নির্যাতনের চিত্র ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট তথ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করতাম এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাৎক্ষনিকভাবে সেগুলো পাঠিয়ে দিতাম।’