আতিকুর রহমান মানিক
কয়েকদিন ধরেই সুপারমুনের গুঞ্জন শুনছিল কেরামত আলী। পত্র-পত্রিকা-অনলাইনে এ নিয়ে লেখালেখির শেষ নেই। এ রাতে নাকি চাঁদ পৃথিবীর নিকটতম দুরত্বে আসছে, তখন চাঁদের আলো ৩০% বেশী হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। সুপারমুনের রেশ কয়েকদিন থাকবে বলেও শুনেছিল সে। সুপার মুনের প্রথম দিন জরুরী কিছু কাজ থাকায় সময় পায়নি। তাই পরের দিন সন্ধ্যা ও রাতে চন্দ্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিল সে। নভোঃমন্ডলিক দূর্লভ একটা ব্যাপারের দর্শক হতে যাচ্ছে সে, ভাবতেই কেমন যেন পুলক বোধ করল। রাতে বাসার বেডরুমে শুয়ে শুয়ে এ বিষয়ে অনেকের সাথে মোবাইলে আলাপ-আলোচনা করে আরো কৌতুহলী হয়ে উঠল কেরামত। তার মোবাইল আলোচনা শুনে বউ কিন্তু কেমন যেন সন্দেহের চোখে তাকাতে লাগল। সুপার, মুন এসবের মানে জিজ্ঞেস করেছিল কেরামতের বউ মলকা বানু। কিন্তু কেরামতের এক ধমক খেয়ে বেচারী চুপ হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু মেয়েরা বরাবরই সন্দেহপ্রবন। সকালে কেরামত বের হয়ে গেলে মলকা বানু পাশের বাসার (মাথামোটা) ভাবীর সাথে জরুরী পরামর্শে বসল। অন্যকিছু গোপন রেখে সুপার ও মুন শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করল। ভাবী বললেন “সুপার” শব্দের অর্থ সুন্দর ও “মুন” মেয়েদের নাম। অর্থাৎ সুন্দরী মেয়ে সংক্রান্ত ব্যাপার ? শুনেতো মলকা বানুর আক্কেল গুড়ুম ! মুখভার করে বাসায় চলে এল সে। দুপুরের পর কেরামত বাসায় এসে খেয়েদেয়ে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিল। আজ কেমন জানি বউয়ের মনভার, অন্যদিনের মত বাকবাকুম স্বরে কথা বলা বন্ধ। ব্যাপারটাকে তেমন পাত্তা না দিয়ে শেষ বিকালে উঠে চা খেয়ে বের হয়ে গেল সে। এরপর সমুদ্র সৈকতে গিয়ে বালিয়াড়ীতে আয়েশ করে বসল কেরামত। সন্ধ্যার পরেই আকাশে বিশাল গোল থালার মত চাঁদ দেখা দিল। শুরু হল সুপারমুন দর্শন। আজকের চাঁদটা আসলেই একটু কাছে কাছে মনে হচ্ছে। আবার চাঁদের আলোও অনেকগুন বেশী। সন্ধ্যার আগে থেকেই কেরামত লক্ষ্য করছিল, তার একটু দুরে আরেক বালিয়াড়ীতে আপাদমস্তক বোরকা আবৃত একটা নারী বসে আছে। চাঁদ যত উপরে উঠছিল আলোও ততই বাড়ছিল। কিছুক্ষণ পরে আলট্রামডার্ণ ও ড্যামকেয়ার টাইপের এক নারী পর্যটক কেরামত আলীর পাশে এসে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কোথায় জিজ্ঞেস করল। কেরামত লোকেশন দেখিয়ে দিল। বেচারী বোধ হয় অনেক্ষন হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল, সেখানে বসে বিশ্রাম নিতে নিতে কেরামতের সাথে টুকটাক কথা বলছিল। হঠাৎ কেরামত লক্ষ্য করল, অন্য বালিয়াড়ীতে সন্ধ্যা থেকে বসা বোরকাআবৃত মহিলা রনরঙ্গিনী ভঙ্গিমায় এদিকে ছুটে আসছে। ততক্ষনে মুখের নেকাব খুলে ফেলা মহিলাটি কাছে আসতেই দেখল তার বউ মলকা বানু! মনে মনে প্রমাদ গুণল কেরামত। বাঁজখাই গলায় চিল্লাচিল্লি শুরু করল মলকা বানু। ও, এই তাহলে তোমার সুন্দরী মুন (সুপারমুন), টাংকি মারার আর জায়গা পাওনা, মোখপোড়া মিনসে কোথাকার, এই টাংকিবাজি করার জন্যই কয়েকদিন আগে থেকে মোবাইলে গুজুর-গুজুর করছ? বিকাল থেকেই তোমাকে ফলো করছি, এখন বুঝবে মজা, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এদিকে এসব খিস্তিখেউড়ে পর্যটক বেচারী হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে। কেরামত মিনমিনে গলায় কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু বউয়ের উচ্চকন্ঠে সব চাপা পড়ে গেল। এদিকে হট্টগোল শুনে ধীরে ধীরে জটলা বাড়তে শুরু করছে। শেষবারের মত বউকে বুঝাতে চেষ্টা করল কেরামত আলী। কিন্তু লম্পট, লুচ্চা বেটা, বদমাইশ কোথাকার বলে মারমুখী ভঙ্গিতে তেড়ে এল মলকা বানু। তখন অবস্হা বেগতিক দেখে পৈত্রিক জানটা নিয়ে ভোঁ-দৌড় দিল কেরামত আলী।
আকাশে তখন চাঁদের আলো আরো প্রকট হয়েছে,সবাই সুপারমুন উপভোগে ব্যস্ত। কিন্তু কেরামত সমানে দৌঁড়াচ্ছে। নারী নির্যাতন আইনের পাশাপাশি পুরুষ নির্যাতন আইন কখন পাশ করা হবে, প্রহর গুনে কেরামত আলী।
লোকগায়ক সিরাজের বিখ্যাত একটা গান মনে পড়ল তার,
“আঁরা পুরুষ নির্যাতনর আইন সরকারত্তোন চাই”।
============================
আতিকুর রহমান মানিক, ফিশারীজ কনসালটেন্ট ও সংবাদকর্মী। চীফ রিপোর্টার, দৈনিক আমাদের কক্সবাজার
মুঠোফোন, ০১৮১৮-০০০২২০
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।