বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পরপর দু’বার কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন এড. শামীম আরা স্বপ্না। দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করা নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন এই নারী জেলার রাজনৈতিক রাজনৈতিক অঙ্গনের এক পুরোধা। একই সাথে নারী নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল ‘আদর্শ’। রাজনীতির পাশপাশি তুখোড় আইনজীবি হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। তিনিই কক্সবাজার বারের প্রথম মহিলা আইনজীবি এবং বাংলাদেশ প্রথম পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)। মেধাবী এই রাজনীতিবিদ তার বর্তমান রাজনৈতিক ভাবনা, কর্মপন্থা ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানিয়েছেন ‘সিবিএন আড্ডা’য়। তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিবিএন’র চীফ রিপোর্টার শাহেদ মিজান।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কক্সবাজারের প্রথম ও শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল কক্সবাজার নিউজডটকম-সিবিএন জেলার শীর্ষ রাজনীবিদদের মতামত নিয়ে ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। এবারে থাকলো এড. শামীম আরা স্বপ্নার সাক্ষাৎকার।
সিবিএন: আপনাকে সিবিএন’র পক্ষ থেকে স্বাগতম।
এড. শামীম আরা স্বপ্না: ধন্যবাদ।
সিবিএন: আপনি পরপর দু’বার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এটাকে আপনি কেমন অনুভব করছেন?
এড. শামীম আরা স্বপ্না: এটা আমার খুব ভালো লাগছে। আমি মনে করি, আমি কাজ করেছি বলেই তা সম্ভব হয়েছে। এটা আমার কাজের মূল্যায়ন। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা এবং আমাদের গর্ব সালাহ উদ্দীন আহামদ আমার কাজের মূল্যায়ন করেছেন।
সিবিএন: জেলায় বিএনপির হালচাল ও অবস্থান কেমন?
এড. শামীম আরা স্বপ্না: জেলায় আমাদের বিএনপি অত্যন্ত শক্তিশালী। আমাদের ১৪টি ইউনিট আছে। প্রতিটি ইউনিটই শক্তিশালী। একই সাথে আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিতে কক্সবাজারে এসেছেন দেশনেত্রী খালেদা ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা এসে তৃণমুলের কর্মীদের সাথে কথা বলেছেন। কথা বলে তারা কক্সবাজার জেলা বিএনপিকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর কমিটি বলে মত দেন। যদি সুষ্ঠু ভোট হয়; জনগণ যদি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে তাহলে জেলার চারটা আসনই বিএনপি পাবে।
সিবিএন: সংসার এবং পেশা। বিশেষ করে আইন পেশাটা অত্যন্ত ব্যস্ততম একটি পেশা। এরপর শীর্ষ একটা দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক। সংসার এবং পেশা সামলিয়ে কিভাবে রাজনীতিটা সামলান?
এড. শামীম আরা স্বপ্না: আমি সংসারটাকে খুব ভালোবাসি। দৈনন্দিন জীবনের কর্মপন্থা হিসেবে আমি কাজের লোকের পাশপাশি আমি নিজেও সংসারের নানা কাজ করি। রাত ও ভোরে উঠে আমি আমার সংসারের কাজ সেরে নিই। কারণ আমার কাছে পরিবারটা খুব প্রিয়। সকালে তাড়াহুড়া করে খেয়ে দেয়ে আমার স্বামী এবং আমি এক সাথে বের হয়ে যাই। কোর্ট থেকে এসে বিকালের দিকে রাজনৈতিক কাজ থাকলে আবার বেরিয়ে যাই। জেলা বিএনপির অফিসে যাই। এছাড়াও মিছিল-মিটিং থাকলে সেখানে অংশ নিই। সবচেয়ে বড় কথা- আমার রাজনৈতিক কর্মী ও কর্মীরা সহযোগিতা করে বলেই রাজনীতিটা আমি চালিয়ে নিতে পারছি।
সিবিএন: আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি হচ্ছে দেশের শীর্ষ দল। এই দুটি দলের বেশ কয়েকজন মহিলা এমপি আছে কিন্ত মুল দলের জেলা পর্যায়ের শীর্ষ পদে মহিলা খুব একটা নেই। আপনার এই অর্জন কিভাবে সম্ভব হলো?
এড. শামীম আরা স্বপ্না: আমার অর্জনের পেছনের রহস্য হলো, আমি রাজনীতির জন্য অনেক ত্যাগ, কষ্ট ও সাধনা করেছি। এসবের কারণেই আমি তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আর এই অর্জনকে আমি খুব উপভোগ করি।
সিবিএন: বর্তমান সরকারের শাসন ব্যবস্থা কিভাবে দেখছেন?
এড. শামীম আরা স্বপ্না: বর্তমান সরকারের শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। এখন বিরোধীদলকে কোনো মিছিল-মিটিং করতে দেয়া হয় না। কেনো দাবি বা প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামমে দেয়া হয় না। এটাতো সঠিক শাসন ব্যবস্থা হতে পারে না।
সিবিএন: একজন রাজনীতিবিদের উল্টোপিটটা হচ্ছে জনপ্রতিনিধি। প্রতিটি রাজনীতিবিদের প্রধান লক্ষ্য থাকে জনপ্রতিনিধি হওয়া। আপনিতো বৃহৎ একটা দলের এমপি হওয়ার মতো একটা পদে আছেন। এই নিয়ে আপনার লক্ষ্য বা স্বপ্ন আছে কী?
এড. শামীম আরা স্বপ্না: আমি অনেক বছর রাজনীতি করার পর আজকের এই পর্যায়ে এসেছি। জনপ্রতিনিধি হওয়ার বিষয়েও সাধনা দরকার। সেটাও সময়ের ব্যাপার। নির্বাচন করবো কিনা সময়ই সেটা বলে দিবে। সময় বললে নির্বাচন করার ইচ্ছে আছে।
সিবিএন: আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে- এই আশাবাদ কি আপনার আছে?
এড. শামীম আরা স্বপ্না: সুষ্ঠু নির্বাচন যদি হয়; জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে বিএনপি অবশ্যই ক্ষমতায় আসবে ইনশাল্লাহ।
সিবিএন: বর্তমানে বিশ্বজুড়ে নারী নেতৃত্বে একটা বিপ্লব উঠেছে। বাংলাদেশে নারী নেতৃত্বে অবস্থান কেমন বলে আপনি মনে করেন?
এড. শামীম আরা স্বপ্না: বাংলাদেশে নারী নেতৃত্বের অবস্থান এখন অনেক শক্ত। তারপরও আমি মনে করি নারী নেতৃত্ব আরো এগিয়ে আসা দরকার। যেহেতু আমাদের দেশে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে এখনো নারীরা অনেক জায়গায় এখনো নির্যাতিত। সে কারণে নারী নেতৃত্ব আরো বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।
সিবিএন: আপনার পুরো রাজনৈতিক জীবন সম্পর্ক বলুন।
এড. শামীম আরা স্বপ্না: আমি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বোটানিতে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়তাম তখন আমার ছাত্রদলে পদার্পণ। সেখানে চকরিয়ার আবু তাহের নামে এক সিনিয়র ভাইয়ের হাত ধরেই আমি ছাত্রদলে যোগদান করি। এটা ১৯৮২ সালের কথা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাট চুকিয়ে কক্সবাজার আসি। এসে আমি কক্সবাজার বারে প্রথম আইনজীবি হিসেবে যোগদান করি। ১৯৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসলো তখন মহিলাদল গঠন করার জন্য বেগম জাহানারা ম্যাডাম কক্সবাজার আসেন। ওনার সাথে ছিলেন কর্ণেল অলি সাহেব। তিনি কক্সবাজার মহিলা কলেজে একটি সম্মেলন করলেন। ওই সম্মেলনে আমাকে জেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিলেন। সেই থেকে আমি মহিলা দলে ছিলাম। পাশপাশি জেলা জজকোর্টে এপিপি হিসেবে আমি দাায়িত্ব পালন করি। পরে ২০০১ সালের ১ ডিস্মেম্বর আমাকে বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা পিপি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তখনও আমি মহিলা দলের রাজনীতি করতাম। এরপর ২০০৯ সালের প্রথম দিকে আমাকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়। পরে ওই বছরের ২০ নভেম্বর সম্মেলনের মাধমে আমাকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। সেই থেকে আমি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি এবং গত ২২ নভেম্বর আমাকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
সিবিএন: আপনার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে বলুন।
এড. শামীম আরা স্বপ্না: আমি টেকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শেষ করি। কক্সবাজার সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে এসএসসি পাস করি। এখানে একটা তথ্য জানাতে চাই তা হলো- আমি প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে প্রথম ছিলাম। এর স্বীকৃতি স্বরূপ আমি স্বর্ণপদক অর্জন করেছিলাম। পরে কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করি প্রথম বিভাগে। আইএসসি পাশ করে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি থেকে অনার্স এবং এমএসসি সম্পন্ন করি। সেখানে আমি ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হই। একই সাথে আমি চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি সম্পন্ন করি।
সিবিএন: আপনার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে একটু বলেন।
এড. শামীম আরা স্বপ্না: আমার স্বামী জসিম উদ্দীন মহেশখালী কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও জেলার একজন আলোচিত ক্রীড়াবিদ হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত। তিনি অনেক বছর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আমার একটা মাত্র সন্তান। সে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে। পরে বাংলাদেশে সে-ই একাই স্কলারশীপ পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ম্যাকওয়ার ইউনিভার্সিটি পড়ালেখা করে। পাশ করে সেখানে এখন একটি মাল্টিস্টোর কোম্পানি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত রয়েছে। আমার বউমাও ময়মনসিংহের একজন কৃতি ছাত্রী। সেও অস্ট্রেলিয়াতে প্রতিষ্ঠিত। সে সেখানে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে।
সিবিএন: রাজনীতি নিয়ে আপনার স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে বলুন।
এড. শামীম আরা স্বপ্না: সাধারণ জনগণের জন্য আমি রাজনীতি করতে চাই। আমাদের কাছ থেকে তাদের অনেক কিছু চাওয়া-পাওয়ার আছে। সব সময় জনগণের সঙ্গে থাকতে চাই। তাদের আপদে-বিপদে ও যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকতে চাই। এটাই হচ্ছে আমার প্রধান লক্ষ্য।
সিবিএন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য
এড. শামীম আরা স্বপ্না: সিবিএনকেও ধন্যবাদ।
(এই সাক্ষাৎকার গ্রহণে সাথে ছিলেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।