নিকোলাস ক্রিস্টফ
( নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপানো এই আর্টিকেল সারা পৃথিবীর মানুষককে কাঁদিয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে এই লিখার পর থেকেই মায়ানমারের উপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, কেননা নিকের লিখা পড়ার জন্যে লক্ষ লক্ষ পাঠক অপেক্ষায় থাকেন।তার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই, অবশেষে তিনি আসলেন, গাড়ি বহর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল তাকে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে , এই প্রথম সিবিএন পাঠকদের জন্যে এই আর্টিকেল বাংলা অনুবাদ করেছেন এম,ডি, ম্যাক্স। )
বেচে যাওয়া মানুষের অকপট স্বাক্ষ্য, কিভাবে মায়ানমারের সেনারা মানুষ হত্যা করেছেন, ধর্ষন করেছেন নারীদের আর আগুনে পুড়েছেন শিশুদের।
বাংলাদেশের দক্ষিনে, মায়ানমার সীমান্তে ‘ বংশগত নিধন ‘ আর ‘ গণহত্যা ‘ এদুটি যেন বিমূর্ত শব্দ। যা ঘটেছে তা হল, সুহাইফা নামের এক কান্নারত শিশুকে পা টেনে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা অথবা ১৫ বছরের এক মেয়েকে বাড়িতে বেধে রেখে আগুনে পুড়ে ফেলা, এসব যেন নিয়মিত ঘটনা।
যে শিশুরা বেচে গিয়েছে তারা এখনো আতংকিত, নুর কলিমা ১০, একটি রিফিউজি ক্যাম্পে পড়ালেখায় কিছুতেই মন বসাতে পারছেনা। তার বারবার মনে পরছে কিভাবে সে দেখেছে, তার বাবা আর ছোট ভাইকে হত্যা করা হয়েছে, কিভাবে তার ছোট ভাই বোনকে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে ফেলা হয়েছে, কিভাবে সে একটুর জন্যে বেচে গেল, কিভাবে তার বাড়ি পুড়ে ফেলা হয়েছে।
সে কিছুতেই মনযোগ দিতে পারছেনা।
‘ আমি পড়তে পারছিনা, আমার বমি আসতে চায়’ নুর বলেই চলল।
শুরুতেই আমি বলেছিলাম মায়ানমারের এই নৃশংসতা মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একটি বংশগত নিধন কিন্তু ক্রমাগত দেখা গেল এই নিপীড়ন এখন একটি গণহত্যা।
U.S Holocaust Memorial Museum মায়ানমারে মানবাধিকারে নজর রাখা একটি সংগঠন যার নাম Fortify Rights জোর দিয়েই বলছে যে তারা যথেষ্ট গণহত্যার প্রমান পেয়েছেন।
রুমিও ডালিরি যিনি জাতিসংঘের প্রাক্তন কিংবদন্তি পর্যায়ের জেনারেল ছিলেন, তিনি বললেন এটি একটি ধারাবাহিক গণহত্যা।
জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস এর প্রধান যায়েদ রাইয়েদ আমাকে বলেছিলেন, তিনি কিছুতেই বিস্মিত হবেননা যদি অদূর ভবিষ্যতে কোন আদালত এই গণহত্যার বিচার করে।
আপনারা বিচার করে দেখুন, এখানে নুর এবং তার মা দিলবার বেগম তাদের গ্রাম তুলাতুলিতে যা ঘটেছে তার বর্ননা যখন দিলেন, প্রথমে মায়ানমার আর্মি নারী এবং মেয়েদের পুরুষ এবং ছেলেদের থেকে আলাদা করে ফেললেন।
তারপর তারা পুরুষ এবং কিশোরদের গুলি করলেন। ‘ আমি নিজের চোখেই দেখলাম কিভাবে আমার স্বামী এবং সন্তানকে হত্যা করল আর আমি চিতকার দিচ্ছিলাম’ ।
আমি বারবার চেষ্টা করছিলাম জানতে যে নুর যার বয়স ৪ বছর সে দেখেছে কিনা তার বাবা আর ভাইয়ের হত্যাকান্ড।
ঠোট কামড়িয়ে বলল নুর, ‘ আমি সব দেখেছি’ ,আরো বলে ফেলল সে, ‘ আমার বাবা খুব ভাল ছিল, আমরা খুব সুখে থাকতাম’ । সে ফুঁপিয়ে কাদতে শুরু করল , তাৎক্ষনিক আমার দূভাষী আর আমি তার চোখের পানি মুছে দিচ্ছিলাম।
মায়ানমার সৈনিকরা নারী আর কিশোরীদের একটি বাড়িতে প্রথমে রাখত পরে ধর্ষন করত , নুর এবং দিলবারকেও একটি বাসায় রাখা হয়েছিল সাথে তাদের ২ বছরের বোন রুজিয়া আর কোলের শিশু মুহাম্মদ কাসিল।
কাপা কাপা কন্ঠে দিলবার বলল, ‘ তারা আমার বাচ্চাকে নিয়ে গেল আর গলা কেটে ফেলল, সাথে রুজিয়ারও’ ।
নুরের এখনো মনে পড়ছে একটি চাপাতি তার মাথার উপরে আর এমন সময়ে তার মা বাহির থেকে চিৎকার দিচ্ছিল, তারপর জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল।
এরপর দিলবার জানাল সৈন্যরা তার কানফুল টেনে নিল, তার ছেড়া কানের লতি আমাদের দেখাল এবং তার মৃত বাচ্চাদের পাশে তাকে নির্যাতন করা হল।
‘ এক সৈন্য আমাকে ছেপে ধরল আর আরেকজন আমাকে ধর্ষন করল’। এরপর তারা তাকে চাপাতি দিয়ে মাথায় কোপ দিল,এতে তার মেয়ের মত মাথায় ক্ষতের চিহ্ন দেখা গেল।পরে তারা সবাইকে মেরে ফেলতে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে চলে যাই।
আগুন আর ধোয়া তাকে জাগিয়ে দেয় , বাচ্চাদের খোজ নিতে গিয়ে দেখল নুর তখনো নিশ্বাস ফেলছে।
তাড়াতাড়ি মেয়েকে নিয়ে জংগলে পালিয়ে, দুদিন পরে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত অবস্থায় পৌছল বাংলাদেশ সীমান্তে।
সারা বিশ্ব আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতে নীরব, জুলুম, অত্যাচার করে পার পেয়ে যাচ্ছে মায়ানমার, পরিবর্তন করতে যাচ্ছে তাদের জনমিতি, বিশ্বের আত্নপ্রাসাদে থাকা দেশগুলোর জন্যে এটি একটি শিক্ষা হয়ে থাকবে যে এই সুযোগটাতাই তারা তাদের অসন্তুষ্ট এই বংশটিকে একেবারে মুছে ফেলতে চাই।
নোবেল প্রাইজ জয়ী অং সাং সুকি যিনি মায়ানমার সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রন করেননা বটে কিন্তু তার এসব নির্যাতনের জবাব দেওয়ার পরিবর্তে তিনি তা অস্বীকার করলেন আর তাচ্ছিলের সাথেই বললেন সমস্ত তথ্য ভুল, তার ফেইসবুকের পেইজে লিখলেন যে রোহিঙ্গা নারীদের এসব ‘ ভুয়া ধর্ষন’।
সুচী যদি আপনি এই লিখা পরে থাকেন, তাহলে একটু চোখ খুলুন, আর হাসিনা বেগম আর তার ১ বছরের মেয়ে সুহাইফার কাহিনী শুনুন।
মায়ানমার সেনারা হাসিনা আর গ্রামের অন্যান্য মেয়েদের গুলির মুখে দাড়িয়ে রাখে, মেরে ফেলে পুরুষ এবং কিশোরদের আর গ্যাস দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় তাদের,কিছুক্ষণ পর তারা ছাইয়ে পরিণত হয়ে যায়, এরপর ৫ জন করে করে তারা মেয়েদের বাড়িতে নিয়ে আসে।
‘ আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম আমার শিশুকে ওড়নায় লুকিয়ে রাখতে, কিন্তু তারা পা দেখে ফেলে’ , কাপা কাপা কন্ঠে, শুকনা মুখ নিয়ে বলতে লাগল হাসিনা। ‘ টেনে আমার বাচ্চাকে ফেলে দিল আগুনে’ সব শুনাল হাসিনা।
হাসিনা পড়ে যায় আর চিল্লাতে থাকে, অস্থির সেনারা তাকে মারতে থাকে, সে আমাদের আঘাতের চিহ্ন দেখায়, তার স্বামীর বোন সহ তাকে নগ্ন করে ধর্ষন করে এবং বাড়ির দরজা বন্ধ করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
যখন পোড়া ছাদের অংশ নীচে পড়ছে তখন হাসিনা জানাল,তারা বাড়ির একপাশে গর্ত করে উলঙ্গ পালিয়ে যায়।
তারা কাদা মাটি দিয়েই তাদের ক্ষতের চিহ্ন ঢাকার চেষ্টা করে, পরের দিন এক রোহিঙ্গা পরিবারের একজনের কাছ থেকে কাপড় খুজে কোনরকম সম্ভ্রম ঢাকে।
টানা ৩ দিন হেটে হাসিনা আর আসমা বাংলাদেশে এসে পৌছে। কিন্তু এই ক্ষত হাসিনাকে পীড়া দিচ্ছে আর মায়ের বুক খালি হওয়ার যন্ত্রনায় রাতে ঘুমাতেই পারেননা তিনি।
‘ যখন রাতে ঘুমাতে যাই পাশেই মেয়েকে খুজে ফিরি আর জোরে কেঁদে উঠি’।
তাহলে কি বলতে হবে যে, এটি খুবই মারাত্মক কিন্ত এসবত আমাদের সমস্যা নয়। কিন্তু ১৯৪০ সালের আনা ফ্রাংকেরর মত নুরের জীবনটাও বিশ্বে পৌছিয়ে দেওয়া উচিত এই কারনে যে যাতে ইতিহাসের শিক্ষা এটিই হয়,এক মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ যাতে পুরু মানবতার বিরুদ্বে অপরাধ হিসেবে গন্য হয় আর আমরা যাতে সবাই একসাথে তার প্রতিবাদ করি।
এই নতুন হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে আগস্ট মাসের শেষের দিকে যখন রোহিঙ্গাদের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ পুলিশকে আক্রমণ করে আর ১২ জন নিরাপত্তা সদস্য কে মেরে ফেলে, পালটা আঘাত করতে গিয়ে মায়ানমার সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের না পেয়ে সাধারণ জনগনের উপর স্টিম রোলার চালায়।
তাদের নৃশংসতা এক এক গ্রামে এক একরকম ছিল। নুরের এলাকায় যা ঘটেছে তা সবকিছুকে হার মানায়। মানবাধিকার গ্রুপ বলছে স্যাটালাইট ইমেজের মাধ্যমে দেখা গেল প্রায় ৩৪৫ টি গ্রাম পুড়ে ফেলা হয়েছে।
অনেকেই সেসব রোহিঙ্গাদের কি হয়েছে তা জানেননা।
অনেক চেষ্টা করে আমার ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মায়ানমার সফরের সময়ে পরিচিত অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাদের পাওয়া যাচ্ছেনা।
Borders without doctors এর হিসেব অনুযায়ী এই পর্যন্ত প্রায় ১০০০ শিশু সহ ৯০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ঘটনার পরের দিন থেকে যা সারা বিশ্বের যুদ্বের সংবাদ নিতে আসা মহল কাপিয়ে দিয়েছে। এখানে ধর্ষনের মাধ্যমে ধারাবাহিক নির্যাতনের আলামত স্পষ্ট।
১৪ বছরের এক কিশোরী ৪ জন মিলিটারি কতৃক ধর্ষিত হওয়ার পরে তা গোপন রাখার অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু কিছুদিন পরে বুঝতে পারে সে গর্ভবতী, বাধ্য হয়ে যেতে হয় ডাক্তারের কাছে। একজন এইড কর্মী তাকে গর্ভপাতে সাহায্য করে যে ব্যাপারটা এখনো তারা মা বাবাকে জানায়নি।
সে একমাত্র আমাকে বিশ্বাস করেছে কেননা ঐ সংস্থা তাকে নিশ্চিত করে যে আমাকে বিশ্বাস করা যাবে।
এরুপ কতজন নারী আর কিশোরী যে ধর্ষনের শিকার তা বলা খুব কঠিন। কিন্তু ডাক্তাররা আমাকে বললেন এরুপ অনেক কেস তারা পাচ্ছেন। ধর্ষনের কারনে ফিস্টুলা আক্রান্ত এরুপ ২ জন মহিলার সাথেও আমার দেখা হয়েছিল।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বিস্তৃত,ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা ক্যাম্পেগুলোতে থাকে আর আমি তাদের সাক্ষাত সেখানেই নিয়েছিলাম, সাহায্য সংস্থা গুলো অতীব প্রয়োজনীয় খাবার, ঔষধ, পায়খানার বন্দোবস্ত করলেও কোন প্রকার স্বপ্ন তাদের দেখাতে পারছেনা।
বাংলাদেশ ও চায়না এসব রোহিঙ্গারা এখানে বোঝা হয়ে থাকুক, তাছাড়া কোন রোহিঙ্গা সন্তানকে বাংলা পড়ার কোন অনুমোদন ও দেয়না। শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত কোনরকম চালিয়ে যেতে পারে রোহিঙ্গা শিশুরা।
ব্রাক নামের একটি সংঘটন তাদের কাগজ কলম দিয়ে একটি সেন্টারে ছবি আকার ব্যবস্থা করে থাকে, সেখানে দেখা যায়, শিশুদের এই আকা অনেক অর্থ বহন করে, সেনারা গুলি ছুড়ছে, বন্ধুরা রক্তাক্ত, ঘর পুড়ছে।
ইসমাইল নামের
১১ বছরের এক এতিম ছেলে বলছে’ যে লোকটি গুলি খেয়েছে সে আমার প্রতিবেশী, নাম সাইদ আজিম’, আমি নিজেই দেখেছি, আমি জংগলে লুকিয়েছিলাম’ ছবির বর্ননা দিতে গিয়ে সে বলল।
চীন যে পরিকল্পনা করেছে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে এতে মায়ানমারে তারা ‘ রাষ্ট্রহীন’ কন্সেন্ট্রাশন ক্যাম্পের মত অবস্থায় থাকবে, যেটির ব্যাপারে আমি আগে রিপোর্ট করেছিলাম। যার কারনে অনেকেই আতংকিত ফিরে যেতে। আর এই অবস্থায় যদি তাদের জোর করে ফিরিয়ে নেওয়া হয় পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।
ধরুন শফিকা বেগমের কথা, ১৫ বছরের এই মেয়ে তার পরিবারে একমাত্র জীবিত সদস্য, সে জানাল, সে দেখেছে সেনারা তার বাবা সহ ৪ ভাইকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। এরপর তারা তার মা, ১১ বছরের বোন, তাকে সহ একটি বাড়িতে নিয়ে যায়, তার সামনেই সেনারা তার বোনের গলা কেটে ফেলে, যখন সে চিৎকার দিয়ে উঠল তখন তাকে মাথাই আঘাত করে অজ্ঞান করে দেওয়া হল।
ধোয়া, আর আগুনে তার হুশ হয়, সেনারা বাহির থেকেই দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে দেয়। তার মা আর বোন সেখানে মরা অবস্থায় পরে আছে, দেওয়াল ভেঙে সে পালিয়ে যায়।
সে কি ধর্ষিত হয়েছিল? ‘ আমি বেহুশ ছিলাম, কিছুই জানিনা তারা আমাকে কি করেছে’। আরো জানাল কেউ একজন পরে তার কাপড় ঠিক করে দিয়েছিল।
টানা ৪ দিন বনে জংগলে হেটে শফিকা বাংলাদেশে আসে, তার পিঠ,বাম হাত আর দুপা পুড়ে গিয়েছে,ঔষধ কেনার টাকা নেই।
আমি খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম কথা বলার সময়ে সে যদি আবার মানসিক ভাবে ভেঙে পরে কিন্তু সে আমাকে তার কাহিনী বলার জন্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল।
‘ আমি চাই সারা দুনিয়া এই কাহিনী জানুক, আমি বলতে চাই মায়ানমারে কি হচ্ছে’।
যে ৩ জন মানুষের কাহিনী আমি এখানে বললাম,নুর, ১০, হাসিনা যার বাচ্চকে আগুনে পুড়া হয়েছে আর আগুনে পুড়া শফিকা, তারা সবাই এখানে আমার দেখানো ম্যাপের একই গ্রামের, নাম তুলাতুলি।
এরুপভাবে প্রত্যেক গ্রামই ট্রাজেডির শিকার।
তারা যা বলেছে তা কতটুকু সত্য?
কয়েক দশক ধরে কাজ করে আমার অভিজ্ঞতা বলছে, অনেক সময় অপরাধীদের মত নির্যাতিতরা ও মিথ্যে বলে, অত্যাচার অনেক সময় বাড়িয়ে বলে, গুজব অনেক সময় চোখের দেখার মত হয়ে যায়। কিন্তু তুলাতুলির এই বর্বরতা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মানবাধিকার সংস্থা ডকুমেন্ট করেছেন, এমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফরটিফাই রাইটস, তাদের দেখানো ঘর পুড়ে ফেলার স্যাটালাইট ইমেজ এসব প্রমাণ করে।
আমি ভিন্ন ভিন্ন ৭ জনের সাথে কথা বলেছি, যারা তুলাতুলির গণহত্যা থেকে বেচে যায়, তাদের সব বর্ননা একে অপরের সাথে হুবহু মিলে যায়।
এই গণহত্যা বন্ধের সুরাহা এখনো কিছুই হয়নি, কিছুইনা, কিন্তু জওয়াবদিহিতার বদৌলতে আন্তর্জাতিক আদালতে মায়ানমারের এই মিলিটারি জেনারেলদের বিচার করার জরুরি তাগিদ দেওয়া উচিত,তখন বিচারকগন মানবতার বিরুদ্ধে এই অপরাধকে গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করবেন।
৫৮ টি সংঘটনের একটি খোলা চিঠিতে মায়ানমারের অফিশিয়ালদের উপর নিষেধাজ্ঞার আহবান করা হয়েছে। মার্কিন সংসদ এই মাসেই ‘ বংশগত নিধন ‘ ঘোষনা করে একটি রেসুলেশন পাশ করবে। তবে সিনেটে মায়ানমার অফিশিয়ালদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাবটি এখনো ঝুলে আছে, এটি পরে আইনে পরিণত হবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়।
সেক্রেটারি অফ স্টেইট র্যপক্স টিলারসন বলছেন এটি একটি ‘ বংশগত নিধন ‘ এই হত্যাকান্ড দেখে বিশ্ব অলস ভাবে বসে থাকতে পারেনা। ‘ কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে তাই হচ্ছে’।
মায়ানমার হয়ত বলতে পারে,তাদের এই গণহত্যা সফল, মায়াকান্না করা কিছু সাংবাদিকদ আর মানবাধিকার দলগুলোর বাড়াবাড়ির চাপে হলেও রোহিঙ্গাদের অত্যন্ত অধ্যেককে সাবাড় করা হয়েছে।
আমরা জানি যে একমাত্র আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাই পারে মায়ানমার জেনারেলদের চাপে ফেলতে, তখন তারা অত্যাচার বন্ধ করবে আর নির্বাচনের ডাক দিবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এই ভয়ংকর নিপীড়ন থেকে বাচানোর যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
কিভাবে সাহায্য করা যায় এনিয়ে চিন্তিত সবাই। BRAC,DOCTORS WITHOUT BORDERS, SAVE THE CHILDREN, HOPE FOUNDATION FOR WOMEN AND CHILDREN OF BANGLADESH, এরুপ চমৎকার কয়েকটি সংঘটন ক্যাম্পে কাজ করে যাচ্ছেন । সাথে আছে সহযোগী হিসেবে Foetify Rights,Human Rights Watch আর Amnesty International।
আমার টাইমসের এক কলিগ জিজ্ঞেস করছিল, মানবতার উপর আস্থা রেখে আমি কিভাবে এই বীভিষিকার রিপোর্ট করতে পারি? আমার উত্তর, আমি শুধু শয়তান দেখেনি, আমি দেখেছি বেচে যাওয়াদের চোখে সাহস আর স্থিতিশীলতা। আমি দিলবার,হাসিনা আর শফিকাদের শারীরিক আর মানসিক শক্তি দেখে অবাক, কিভাবে তারা পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে আসল আর তাদের উপর যৌন নিপীড়ন তাদের নিস্তব্ধ করে দিতে পারিনি।
হয়তবা হাসিনা তার শিশুকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত, কিন্ত তার এই নির্মলতা বিশ্বের নেতাদের জন্যে এক অনুকরণীয়।
‘ তারা আমার পরিবারকে মেরে ফেলেছে, আর সেখানে আমার পৃথিবীও শেষ ‘ যখন আমি আমার কাহিনী বলি সবাইকে তখন আমার খুবই খারাপ লাগে, আমি নিজে নিজেই কেঁদে উঠি ‘ কিন্তু আমরা বিচার চাই, এতেই আমাদের কিছুটা লাঘব হবে’ বলল হাসিনা।
তার মত সাহসী নারী আমাদের নিশ্চিত করছে যে আমরা আর অপেক্ষ করবনা, ‘ হায় আমিরা যদি আগে থেকে জানতাম এসব, আর আমরা এখন জানি।
(অনুবাদক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একজন ফিক্সার আর ট্রান্সলেটর।).
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।