শাহেদ মিজান, সিবিএন:
আজ পুবাকাশে যে সূর্য উদিত হয়েছে তা দিয়ে নতুন বছরের সূচনা হলো। স্বাগতম-২০১৮। দেখতে দেখতে আমরা পেরিয়ে এলাম আরেকটি বছর। কালের আবর্তে মহাকালের গহ্বরে হারিয়ে গেল ২০১৭। নানা ঘটন-অঘটন, হাসি-কান্না ও সুখ-দুঃখের রঙমিশালীতে ভরা বিদায়ী ২০১৭ সালটি আজ থেকে ‘তুমি কেবলই স্মৃতি’। অতীতের মত এ বছরটিও সভ্যতার ইতিহাস থেকে শুধু উঁকি দিয়ে দেখবে আমাদের। এর ঝাঁপি খুলে সুখস্মৃতি খুঁজে নিতে হবে সবাইকে। হয়তো এসব স্মৃতি ভরা ‘পেন্ডুলাম’ দোলা দিয়ে যাবে অলস সময়ে…..।

অতীতের সুখ-দুঃখ, গ্লানি যাই থাকুক; সব মাড়িয়ে বর্তমান থেকে এগিয়ে যেতে আমাদের। তবে এও সত্য অতীতই প্রেরণার মুল উৎস। বিগত বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে চলমান বছরকে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য নিতে হবে দৃপ্ত শপথ; থাকতে হবে প্রবল স্বপ্ন। স্বপ্ন-শপথকে একীভূত করে কাজে লাগাতে হবে সময়কে। বদলে দেয়ার মানসে! বদলাব নিজেকে। বদলাবো চারপাশকে। তৃণমুল থেকে বদলের সুর তুলে, তা ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্ব প্রান্তরে।
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্রপীড়িত দেশ। বর্তমানে আমরা আস্তে আস্তে দারিদ্রকে জয় করতে চলেছি। আমরা দরিদ্র তবে আমাদের অনেক কিছু আছে। প্রকৃতির উদার হাতে ঢেলে দেওয়া সম্পদ; আছে ষোল কোটি মানুষের ৩২ কোটি দক্ষ হাত। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এভারেষ্ট জয় করেছে। ক্রিকেট বিশ্বে আমরা আলোচিত শক্তি। বিশ্ব ক্রিকেটের বরপুত্র সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজ আমাদের সন্তান। আছে নোবেল জয়ী কীর্তিমান পুরুষও। পৃথিবীর সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অক্সেফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্ববিবেক সৃষ্টির কারখানাগুলোতে কারিগর হিসাবে কাজ করছে আমাদের সন্তানেরা।

সব কিছু পাশ কেটে শুধু একটি জিনিস আমাদের নেই। সততা। সততা শূন্যতায় আমরা বার বার পিছিয়ে যাই। ধুলোয় মিশে যায় বড় বড় অর্জন। সততার শূন্যতার ধরুণ আমাদের একটি বৃহৎ জনশক্তি বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঘুষের অভাবে চাকরি না পেয়ে কুলির কাজ করে অসহায় মায়ের উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া সন্তান। ফকির-মিসকিনদের জন্য বরাদ্দ ‘গম’ মেরে দেয় তথাকথিত জনসেবকরা। কয়েক যুগের ভঙ্গুর রাস্তা সংস্কারে বারংবার বরাদ্দ হয়; টেন্ডার হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাস্তা সেই আগের চেহারায় থেকে যায়। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের বলি সাগরে করাল গ্রাসে নিমজ্জিত মানুষের কান্না তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। অসহায় মানুষের ভাগ্যেন্নয়ন ও ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষা অর্জনের কান্ডারি হিসাবে কাজ করে অহরহ এনজিও। তবুও এখনো শীত-বৃষ্টির রাত রাস্তায় পার করে এসব মানুষ।

ভাগ্যবিধাতা (!) এসব এনজিও’র কোটি কোটি টাকা মেরে দেওয়ার খবর মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে থেকে যায় তারা। দেদার চলে হরিলুট। টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না কোন সরকারি অফিসে। কোন অসহায় মানুষের উপর জুুলুমেও আমাদের আত্মা সঞ্চার হয় না। অহর্নিশ দুর্নীতি হয়। তবে দুর্নীতিবাজ সনাক্ত হয় না। হরিলুট করতে কাজ হয় নিম্নমানের। পুঁজি বাঁচিয়ে অনিরাপদ গার্মেন্টস থেকে বিপুল টাকা মুনাফা নেয় মালিক। মরে শুধু শ্রমিক। এমন ঘটনা নিত্যই ঘটছে। এতসব অনাকাংখিত অতীতের পরও আমাদের আছে সম্ভাবনার ভবিষ্যৎ। আমাদের আকাশে প্রতিদিন উদিত হয় নূতন দিনের স্বপ্ন। ‘বাঙ্গালী পারে’ এটাই আমাদের শক্তি। তবে এও সত্য শক্তির শেষ আছে। তাই তা শেষ হওয়ার আগে তা কাজে লাগাতে হবে। এখন শুধু প্রয়োজন সে সম্ভাবনাময় স্বপ্ন-শক্তিকে কাজে লাগানো। তার জন্য কাজ করতে হবে তরুণদের। যারা উজ্জ্বল আগামীর কর্ণধার। এখনই সজাগ হতে হবে তাদের । আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে। বর্তমান দেশের চালিকা শক্তি যে প্রজন্ম আমাদের মান ক্ষুন্ন করছে তাদেরকে আমরা ঘৃণাভরে বর্জন করবো। এর মধ্যে যেসব আলোকিত মানুষ, যারা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে উঁচিয়ে ধরেছেন তারাই হবে আমাদের ‘প্রেরণার উৎস’।

স্বপ্ন বাস্তবায়নে এখন থেকে আমাদের সততার চর্চা করতে হবে। স্বপ্ন-শপথে বলীয়ান হয়ে দীপ্ত পায়ে এগিয়ে যেতে হবে। জাগিয়ে তুলতে হবে ঘুণে ধরা সমাজকে। নূতন বছরের সূচনালগ্ন থেকেই নিতে হবে স্বপ্ন নির্মাণের এ শপথ। তুলতে হবে সমাজ পরিবর্তনের সুমধুর আওয়াজ। দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোড়ামী, পশ্চিমা সংস্কৃতি ও অপ-সংস্কৃতি বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। নির্বাসনে পাঠাতে হবে অপকর্মের নায়কদের। সমাজের অসহায়-ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উত্তরণে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। ‘আমরা পৃথিবীকে গড়বো সবার জন্য’ এ শ্লোগান হউক আমাদের স্বপ্ন-শপথ ও মুক্তির হাতিয়ার।