এম আবুহেনা সাগর, ঈদগাঁও: 

ককসবাজার সদরের ঈদগাঁওর কালিরছড়া – ভূতিয়াপাড়ার প্রায় ৯/১০ হাজার মানুষ দীর্ঘ তিন বছর ধরে চরম অপহরন আতংকে দিনাতিপাত করছে। অপহরন পূর্বক মুক্তিপন বানিজ্য কোনভাবেই থামছে না। এ নিয়ে এলাকার সর্বশ্রেনী পেশার লোকজনের মাঝে অজানা আতংক বিরাজ করছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, জেলা সদরের বৃহৎ বানিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নং ওর্য়াড় ভূতিয়াপাড়া – কালিরছড়ার পাহাড়ী এলাকায় বসবাস করছে ৪ থেকে ৫ শতাধিক পরিবারের প্রায় ৯/১০ হাজার লোকজন। এরা দিনের বেলায় স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করলেও সন্ধ্যা নামার পরপরই অন্যরকম আতংকে কাটে তাদের দিনকাল। অপহরন পূর্বক মুক্তিপন বানিজ্য মাথায় নিয়ে এলাকার কর্মজীবী, খেটেখাওয়া অসহায় লোকজন প্রতিনিয়ত দৈনিন্দিন কাজকর্ম করে যাচ্ছে। এমনকি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে পাঠাতে ভয় ও আতংক কাজ করছে অভিভাবকদের মাঝে।

ভুতিয়ার পাড়া এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুয়েক ব্যাক্তি জানান, এলাকা হতে ২/৩ কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে তাদের ২ থেকে ৩ ধুন ধানী জমি রয়েছে। কিন্তু এসব জমিতে ফসল ফলানো যাচ্ছে না। শুধু অপহরন চক্রের ভয় আর আতংকের কারনে। জমিগুলো বর্তমানে অনাবাদি পড়ে রয়েছে বলে জানান হতাশ কন্ঠে। একদিকে পাহাড়ের বন্যহাতি অন্যদিকে রাতের আঁধারে অপহরনকারী। দু সমস্যায় জর্জরিত এলাকার মানুষজন।

তবে সচেতন এলাকাবাসী জানান, ভূতিয়াপাড়া আর কালিরছড়ার পাহাড়ে বসবাসকারী অসংখ্য মানুষদের জীবনের নিরাপক্তা নেই। কখন যে কাউকে ছোবল মেরে অপহরনকারীরা পাহাড়ে নিয়ে যায় তার কোন নিদিষ্ট টিক টিকানা ও নেই। এসব থেকে কবে পরিত্রান পাবে এমন প্রশ্নের সঠিক উক্তর ও মিলছে না। কালিরছড়া আর ভূতিয়াপাড়ার পাহাড়ী এলাকায় বসবাসরত লোকজনের সার্বিক নিরাপক্তা নিশ্চিতকল্পে যৌথবাহিনী কিংবা র্যাবের বিশেষ টহল জোরদার করতে হবে। তাতেই অপহরনের মত জঘন্যতম অপরাদ নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব বলে মনে করেন এলাকার সাধারন মানুষজন।

এদিকে ভুতিয়ার পাড়ার ২/৩ কিলোমিটার পূর্বে গিরিন্ঞি পাহাড় নামক স্থানে বিগত ২৮ ডিসেম্বর সকালে আমান উল্লাহ ও আহমদ ছৈয়দ নামের দুই ব্যাক্তিকে অপহরন করে নিয়ে যায় অপহরনকারী চক্ররা। প্রথমে আমান উল্লাহকে অপহরনের দায় স্বীকার করে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে মুঠোফোনে জানালে আইনশৃংখলা বাহিনী নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছিল। পরপরেই পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশের টিম।

এদিকে ৩০ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে অপহৃত হওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে জৈনক এক মুরব্বীর ভুতিয়াপাড়া এলাকা হতে কয়েক কিলোমিটার পূর্বে গহীন অরন্যে অপহরনকারী চক্রের সদস্যদেরকে অর্ধলক্ষ টাকা মুক্তিপন দিয়ে আসে। মুক্তিপন পেয়ে অপহরনকারী চক্রের হাতে আটকে থাকা দুইজনকে ঐদিন রাত্রে ছেড়ে দেয়।

এ ব্যাপারে ৫ নং ওর্য়াড় মেম্বার মাহমুদুল হাসান মিনার এ প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে জানান, বিগত ৩/৪ বছর ধরে কালিরছড়ায় পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী অসংখ্য লোকজন নানাভাবে অপহরন আতংকে দিনপার করছে। তবে প্রসাশন যদি বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করে হয়তো আতংক কমে আসবে অনেকটা।

অন্যদিকে ৬নং ওর্য়াড় মেম্বার কামাল উদ্দিন জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষজন অপহরনের ভয়ে শান্তিতে নেই। আতংকে দিনাতিপাত করছে সর্বস্তরের লোকজন। প্রসাশনের বিশেষ অভিযান এখন সময়ের দাবী বলেও জানান।

 ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মিনহাজ মাহমুদ ভুইঁয়ার মুঠোফোনে সংযোগ না পাওয়ার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।