শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তি উৎসব


মো: ছফওয়ানুল করিম,

শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয়। পেকুয়া উপজেলার শীর্ষস্থানীয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পেকুয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল শিলখালীতে অবস্থিত এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৮ সালে। স্কুলটির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল স্কুল প্রাঙ্গনে বসেছিল প্রাণের মেলা। এ মেলায় দীর্ঘদিন পরে স্কুলের পুরোনো বন্ধুদের দেখা পেয়ে তৈরী হয় এক আনন্দঘন পরিবেশের। পুরো স্কুল জুড়েই তৈরী এক অন্যরকম পরিবেশ। ব্যাপক আয়োজনে ঝাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুবর্ণ জয়ন্তি পালন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন এ্যালামনাই এসাসিয়েশন। সকাল ১০ টায় শুরু হয়ে ৩ পর্বে রাত অবদি চলে অনুষ্ঠান। সবশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল উপভোগ করার মতো। ভোরে স্কুল প্রাঙ্গন থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য র‌্যালী। এরপর শুরু হয় মূল আলোচনা অনুষ্ঠান। দুপুরের পরে ২য় পর্বে শুরু হয় স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের স্মৃতিচারণ। সুবর্ণ জয়ন্তি উপলক্ষে “শিউবি যেখানে স্বপ্ন বোনা” নামে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। এ স্কুলের প্রাক্তণ ছাত্ররা প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর শওকত আলম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক, পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, স্কুলের প্রথম ব্যাচের ছাত্র দলিলুর রহমান, প্রাক্তন ছাত্র যমুনা অয়েলের ডিজিএম প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, শিউবি এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল ইসলাম, ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো: মনছুর উদ্দিন, প্রাক্তন ছাত্র শরীফ নাজমুল হুদা মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন প্রমূখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুবর্ণ জয়ন্তি উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. মোহাম্মদ মোস্তাফা কামাল। সুবর্ণ জয়ন্তির বিশেষ বক্তব্য রাখেন ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন আহমদ। প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন, দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইব্রাহীম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবির উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশকে নিয়ে পৃথিবীর বুকে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের নাম নতুন করে উঠে এসেছে। কথা হচ্ছে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে। যুগে যুগে মীর জাফররা এদেশকে ধ্বংস করতে ব্যার্থ প্রচেষ্ঠা করেছে কিন্তু ইতিহাস বড়ই কঠিন ও নির্মম। এদেশীয় মীরজাফররা ভেবেছিলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে টুঙ্গিপাড়ায় রেখে বাংলাদেশকে স্তব্দ করে দেয়া যাবে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশ এগিয়েছে। বাংলদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র।” তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। ধর্মহীন মানুষ হয় না। তাই ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। কিন্তু ধর্মান্ধতা কোনভাবেই কাম্য নয়। ধমান্ধতা থেকে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে চরিত্রবান ও আদর্শবান হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই তারা রাষ্ট্রের সম্পদে পরিণত হবে।”

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, ৫০ বছর ধরে শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয় এতদঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। একসময় শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয় ছিল বেড়ার ঘর। কিন্তু নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষার ফলে আজ সেই স্কুলের শিক্ষার্থীরাই দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে স্থান করে নিয়েছেন। আর এ কারণেই শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয় উদহারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।