শাহেদ মিজান, সিবিএন:
পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে বর্তমানের ভর মৌসুমেও পর্যটক মন্দা বিরাজ করছে। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবারেও আশানুরূপ পর্যটক মিলছে না। রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রভাবে পর্যটকেরা কক্সবাজার আসছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ভরমৌসুমে পর্যটক খরা বিরাজ করায় হতাশ হয়ে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অক্টোবর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। ওই সময় থেকে আস্তে আস্তে কক্সবাজারে পর্যটক আসা শুরু করে। কিন্তু পর্যটনের ভর মৌসুম শুরু হয় ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে। বর্ষবিদায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে পর্যটকেরা বেড়াতে আসেন। এর মধ্যে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের প্রাক্কালে ‘থার্টিফাস্ট নাইট’ উপলক্ষ্যে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষ্যে সমুদ্র সৈকতের প্রতিবছর আয়োজন হওয়া বীচ কার্ণিভাল, কনসার্টসহ কোনো হোটেল-মোটেলসহ কোথাও বড় কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পর্যটকেরা কক্সবাজার বিমুখ হয়েছেন। এই কারণে বিগত বছরগুলোতে এই সময়ে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটকে ভরপুর থাকলেও চলতি মৌসুমে তার অর্ধেকই নেই।
টুয়াকের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাফ উদ দৌলা আশেক জানান, পর্যটকেরা ভ্রমণের বের হওয়ার দু’মাস পূর্বেই বাৎসরিক ভ্রমণের পরিকল্পনা করে নেন। কিন্তু ওই সময়ে কক্সবাজারে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এক মারাত্মক পরিস্থিতি বিরাজ করেছিল। সে কারণে সারাদেশের পর্যটকেরা ইচ্ছে থাকলেও তাদের বেড়ানোর পছন্দের স্থান থেকে কক্সবাজারকে বাদ দিয়েছে। সেই কারণে বর্তমানে কক্সবাজারের পরিস্থিতি পুরোপুরি অনুকূলে থাকলেও পর্যটক আসছে না।
সৈকত ঝিনুক মার্কেটের ব্যবসায়ী মাহমুদুল হক জানান, ডিসেম্বরের শুরুতেই কিছু কিছু পর্যটক আসা শুরু হয়। এরপর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে কিছুটা পর্যটক সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু তা গত বছরের মতো ছিলো না। তবে হতাশার কথা হলো- থার্টিফাস্ট নাইটেও প্রত্যাশার অর্ধেক পর্যটক এসেছিল। জানুয়ারি পুরো মাস পর্যটনের সুসময় চলে গেছে। কিন্তু আশানুরূপ পর্যটকের দেখা মেলেনি। এখনো একই অবস্থা বিরাজ করছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকলেও কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের তেমন দেখা মেলেনি। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে স্থানীয় দর্শনার্থী ও পর্যটক মিলে কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে তেমন ভিড় নেই ছিলো না বলে জানা গেছে।
কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্ট ব্যবসায়ী সবুর আলম জানান, পর্যটনের ভরমৌসুমেও আশানুরূপ পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা যা হচ্ছে তা খুবই কম। এই বেচাকেনায় পোষাচ্ছে না ব্যবসায়ীদের। আগামীতেও এভাবে মন্দা গেলে ব্যবসায় লাভের মুখ দেখা মিলবে না।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে পর্যটকের আগমণ প্রত্যাশার ২০ ভাগও হচ্ছে না। সেই কারণে হোটেল-মোটেলগুলোতে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। আর শুক্রবার ও শনিবার কিছুটা পর্যটক আসলেও রুম ভাড়াও কম দামে দিতে চাচ্ছে। এভাবে চলছে সব হোটেল-মোটল ও গেস্টহাউজকে লোকসান গুণতে হবে।
টুয়াকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও আহ্বায়ক এম.এ হাসিব বাদল বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটক না আসায় আমরা হতাশ হয়ে গেছি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে দেখেছি- বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ায় রোহিঙ্গা নিয়ে একটা ভয় ছিলো পর্যটকদের। সে কারণে অধিকাংশ পর্যটক চলতি মৌসুমে তাদের পছন্দের বেড়ানোর জায়গা থেকে কক্সবাজার বাদ দিয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, আমাদের পার্শ্ববর্তী বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে পর্যটকে ভরে উঠেছে। সেখানকার প্রতিটি স্পটে পর্যটকদের হৈ-হুল্লোড় চলছে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।