শাহেদ মিজান, সিবিএন:
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের জেলা কক্সবাজার। এই কারণে বিশ্বজুড়ে কক্সবাজার পর্যটনের এক সুপরিচিত স্থান। শুধু কী সমুদ্র সৈকত? বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ি ঝর্ণাসহ আরো কয়েকটি বিশ্বখ্যাত নয়নাভিরাম পর্যটন রয়েছে কক্সবাজারে। এতলো পর্যটন কেন্দ্রে সম্মিলন বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। তাইতো শুধু দেশ নয়; অনেক বিদেশী পর্যটকও ছুটে আসেন কক্সবাজারের পানে। দেশ-বিদেশ থেকে আসা এসব পর্যটক কক্সবাজার বেড়াতে এসে মনের আনন্দে বেড়ান, উপভোগ করেন এখানকার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য। নিজেকে ভাসিয়ে দেন সমুদ্রের ঢেউয়ের উর্মিমালায়। এতকিছুর মাঝেও হয়তো এতদিন কিছু একটা অপূর্ণ ছিলো!
তবে এত দিনেই সেই অপূর্ণতা পূর্ণ হয়েছে। এই অপূর্ণতা পূর্ণ করতে এগিয়ে এলেন রেডিয়েন্ট গ্রুপ। বলা হচ্ছে, রেডিয়েন্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠিত ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’র কথা। হরেক রকম মনোমুগ্ধকর মাছের পসরা নিয়ে কক্সবাজারের ঝাউতলায় অবস্থিত এই ফিস এ্যাকুরিয়ামটি কক্সবাজারের পর্যটনকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে! এটাকে ঘিরে কক্সবাজারে পর্যটন এক নবদিগন্ত পদার্পণ করেছে- এমনটিই মনে করেন পর্যটন বোদ্ধারা। শুধু কী তাই? আশার কথা হচ্ছে, অল্প সমেয়র মধ্যেই এ্যাকুরিয়ামটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। প্রতিষ্ঠার মাত্র তিনমাসের মধ্যেই সেই বার্তা পৌঁছে গেছে দেশে-বিদেশে। এতে আকর্ষণীয় সাড়া ফেলেছে ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ নভেম্বর যাত্রা করে ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’। যাত্রার শুরুতেই পর্যটক ও কৌতুহলী মানুষের আগ্রহে পরিণত হয়েছে এই ফিস এ্যাকুরিয়ামটি। এর মধ্যে বিদেশী পর্যটকও আকৃষ্ট করতে পেরেছে। পর্যটক ছাড়াও প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন এখানে। তবে ছুটির দিনগুলোতে একদম ভীড় লেগে যায়। পর্যটক ছাড়াও স্থানীয়া পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখতে আসছেন ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’। আরো বড় আশার কথা হলো- দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণার জন্য এই ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’-এ আসছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আগত দর্শনার্থীরা ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’র দর্শন করে অনেক আনন্দ পাচ্ছে। শিশু থেকে বয়স্ক সবাই এই আনন্দ উপভোগ করছে। কারণ এখানকার মাছসহ জলজপ্রাণীগুলো অসাধারণ মোহনীয়। মুহুর্তের মধ্যেই এক দর্শনার্থী মুগ্ধ না হয়ে পারেন না।
লক্ষীপুর থেকে আসা হাসান ছিদ্দিক বলেন, ‘পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। বলতে গেলে প্রতিবছর আসা হয়। কারণ কক্সবাজার আমাকে খুব টানে। এবার কক্সবাজার এসে ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’র খবর জানতে পারি। অনেক কৌতুহল নিয়ে সবাইকে সাথে নিয়ে তা দেখতে আসলাম। সত্যিই অসাধারণ। এরকম বিনোদন খুব মেলে। আগামীতে যতবার কক্সবাজার আসবো ততবার এখানে ঢুঁ মেরে যাবো’ বলে তিনি হেসে দেন।
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া দর্শনার্থী আবিদ মাশরুর বলে, ‘আমার বাড়ি কক্সবাজার শহরে রুমালিয়ারছড়ায়। আমার বন্ধুদের অনেকে তার মা-বাবার সাথে আগেই দেখে গেছে ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’। তারা স্কুলে এই বিষয়ে আমাদের কাছে নানা গল্প বলেছে। তার কাছে শুনেই অনেক ভালো লাগলো আমার। তাই এটা দেখতে আনার জন্য বাবাকে বলি। আর এসেই পড়লাম এবং দেখলাম। কি সুন্দর আসলে বর্ণনা করারও কঠিন!’
তথ্য মতে, ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’ বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ফিস এ্যাকুরিয়াম’। এরকম এ্যাকুরিয়াম পৃথিবীর পর্যটন সমৃদ্ধ উন্নত দেশগুলোতে রয়েছে শুধু। ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’ শুধু পর্যটকদের বিনোদন দানে সীমাবদ্ধ নেই। শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও নতুন প্রজন্মের জন্য এক আশ্চর্য্যের কৌতুলের বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা এই ফিসওয়ার্ল্ডে এসেই সহসায় দুর্লভ ও নানা প্রজাতির মাছের পরিচয় জানতে পারছে নতুন প্রজন্ম।
‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’র জেনারেল ম্যানেজার নিজামুল ইসলাম জানান, ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’-এ শতাধিক নানা প্রজাতির সামুদিক মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও আকর্ষণীয় সামুদ্রিক কয়েক প্রজাতির প্রাণীও রয়েছে। যা মানুষকে সহজেই মুগ্ধ করে। মাছের মধ্যে রয়েছে- হাঙ্গর, মানুষখেকো মাছ পিরানহা, শৈল মাছ, পিতম্বরী, আউস, শাপলা পাতা, সাগর কুচিয়া, বোল, পানপাতা, বোল, পাংগাস, চেওয়া, কাছিম, কাঁকড়া, জেলি ফিস, কুচিয়া, কচ্ছপ, কাঁকড়া সাগরের তলদেশের নানা কিট পতঙ্গ। এর মাঝে সাগরের তলদেশের গাছ পালা, লতা, পাতা, গুল্ম, ফুলও রয়েছে।
তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, জাপানের রাষ্ট্রদূত, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমসহ সংসদ সদস্য, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাইফুল্লাহ মকবুল মোর্শেদ, সুপ্রীম কোর্টের মাননীয় বিচারপতি এস এম ইনামুল হক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা মহা পরিচালক, বড় বড় রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন মন্ত্রাণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, উপসচিব, সহকারী সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি-শিক্ষক, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’ পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিদর্শনে এসেছেন। তারা এখানকার মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী নিয়ে নিরীক্ষা করেছেন।
রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড ঘুরে দেখতে গিয়ে আপনার হবে- মাটির নিচে তৈরি ফিস ওয়াল্ড অ্যাকুরিয়ামের ভেতর আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। দেখবেন, আপনার চারদিকে সামুদ্রিক প্রাণীর দৌড়ঝাঁপ। হাতের কাছে, মাথার ওপর চারদিকে। আপনি দাঁড়িয়ে অথবা হেঁটে এসব মন ভরে দেখলেন। মনে হবে, আপনি সমুদ্রের তলদেশে নেমে এ প্রাণিকুলের সঙ্গে খেলছেন। সাগরের পাহাড়, গুহা, তলদেশ উঁচু নিচু আর এলোমেলো সাগর পথ। তা পাড়ি দিতে দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হবে। এমন এ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ বিনোদনের এমন অকল্পনীয় বিনোদনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড’ এ্যাকুরিয়ামটি।
বৈদ্যুতিক আলোয় অ্যাকুরিয়ামের ভেতরের প্রাণীগুলোর দৌড়ঝাঁপ যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করবে। এখানে জীবিত মাছ ছাড়াও রয়েছে মৃত মাছও। ফিস ওয়ার্ল্ড দেখতে স্থানীয়রা তো আছেনই পাশাপাশি প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি পর্যটকও ভিড় করবেন এখানে।
রেডিয়েন্ট ফিসওয়ার্ল্ড এ্যাকুরিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, এটি মালেশিয়ার টেকনিক্যাল প্রকৌশলির সহায়তায় নির্মিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের এই এ্যাকুরিয়াম নির্মাণে সময় লেগেছে দুই বছর। তিনি বলেন, এটি শুধু কক্সবাজারের জন্য নয়- বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ এই এ্যাকুরিয়ামে বঙ্গোপসাগরের থাকা বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মৎস্য সংক্ষণ করা হয়েছে। অচেনা এবং বিলুপ্ত প্রায় অনেক মাছও রয়েছে। সাগরের বিলুপ্ত মাছ বিভিন্ন প্রাণী সংরক্ষণে একটি জাদুঘরও করা হচ্ছে। এটা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এটি সাগরের জীববৈচিত্র ও প্রাণী সম্পর্কে জানার একটি শিক্ষা কেন্দ্র।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।