সিবিএন ডেস্ক:
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগটিকে এতোদিন দুই ধারায় ভাগ করা হলেও এটি আসলে পাঁচটি আলাদা ধারার রোগ বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা এমন দাবি করেছেন। তারা বলছেন, রোগীদের পাঁচটি আলাদা গুচ্ছে ভাগ করে আলাদা চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। দ্য ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রিনোলজিতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি খবরটি জানিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে প্রতি ১১ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এ রোগ হলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, অন্ধত্ব, কিডনির অকার্যকারিতা এবং পঙ্গুত্বের ঝুঁকি বাড়ে। রক্তে অনিয়ন্ত্রিত গ্লুকোজের মাত্রা সংশ্লিষ্ট এই রোগকে বর্তমানে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ এ দুই ধারায় ভাগ করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। টাইপ ১ ডায়াবেটিস আসলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাজনিত সমস্যা। এটি দেহের ইনসুলিন উৎপাদনকে ব্যাহত করে। এর কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না। আর টাইপ ২ ডায়াবেটিস দেখা দেয় অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে। এতে দেহের চর্বি ইনসুলিন উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
তবে সুইডেনের লান্ড ইউনিভার্সিটি ডায়াবেটিস সেন্টার এবং ইনস্টিটিউট ফর মলিকিউলার মেডিসিন ফিনল্যান্ড এর যৌথভাবে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগটি আসলে ৫টি ধারায় বিভক্ত। এগুলো হলো-
ক্লাস্টার ১: এটি তীব্র মাত্রার অটোইমিউন ডায়াবেটিস। মূলত এটি টাইপ ১ ডায়াবেটিসের মতোই। তরুণ বয়সীরা এতে আক্রান্ত হয় এবং দেহে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না।
ক্লাস্টার ২: এক্ষেত্রেও দেহে ইনসুলিনের অভাব তীব্র আকারে দেখা দেয়। এটা অনেকটা ক্লাস্টার ১ ডায়াবেটিসের মতোই। রোগী তরুণ থাকে, স্বাস্থ্যবান থাকে কিন্তু ইনসুলিন উৎপাদনে হিমশিম খেতে হয়। তবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি থাকে না।
ক্লাস্টার ৩: এ ধারার রোগীদের ওজন বেশি হয় এবং তারা ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে। তবে তাদের দেহ তা আর কাজে লাগাতে পারে না।
ক্লাস্টার ৪: ওজন অনেক বেশি হলেও এদের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে স্থূলতার ভূমিকা কম। ক্লাস্টার ৩ এর চেয়ে তারা স্বাভাবিক থাকে।
ক্লাস্টার ৫: বয়স সংশ্লিষ্ট ডায়াবেটিস। অন্য ক্লাস্টারের চেয়ে এক্ষেত্রে বয়স বেশি হয়ে থাকে এবং রোগের অবস্থা হালকা হয়।
সুইডেনের লান্ড ইউনিভার্সিটি ডায়াবেটিস সেন্টার এবং ইনস্টিটিউট ফর মলিকিউলার মেডিসিন ফিনল্যান্ড এর এই যৌথ গবেষণার অংশ হিসেবে ১৪ হাজার ৭৭৫ জন রোগীর রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ গবেষণা ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস চিকিৎসায় যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিবর্তন সহসা আসবে না বলে মনে করেন তারা।
গবেষকদের একজন অধ্যাপক লিফ গ্রুপ। বিবিসিকে তিনি জানান, এখানে ক্লাস্টারগুলো বিবেচনা করে রোগীকে আগেভাগেই বিশেষ চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। যেমন- ক্লাস্টার ২ এর রোগীরা অন্ধত্বের ঝুঁকিতে থাকেন। আর ক্লাস্টার ৩ এর রোগীদের কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।