জিনাত সোহানা চৌধুরী 

মেয়েরা ছাড়া মানুষ শব্দটিই অসম্পূর্ণ। মেয়েরাই আজ পুরুষের কাঁধে হাত রেখে সমান তালে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে, আমি মেয়ে তাই আমি গর্বিত, ছেলেদের সমান নয়, আমি মানুষের উচ্চতায় উঠতে চাই।

নারীর ক্ষমতায়ন, সমসুযোগ, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নারী-পুরুষ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। রাজনীতিতে নারীর সম্পৃক্তায়ন নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম ধাপ। বিশ্ব রাজনীতিতে নারীদের অবস্থান আজ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এটি একদিকে যেমন নারী জাতির অস্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ, তেমনি নারীর ক্ষমতায়নের বিশেষ দিক।

পৃথিবীর পরিবর্তনে তথা উন্নয়নের ধারায় আজ নারীদের অবস্থান সর্বস্তরে। রাজনীতিতে তাদের প্রবেশাধিকার নারীদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একটি গোড়াঘেঁষে বলতে গেলে যুগ যুগ ধরেই নারীদের নিজ প্রতিভাবলে বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটে আসছে এবং এর ইতিবাচক দিক হলো এটি ক্রমবর্ধমান। বর্তমান সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও নেতৃত্বে নারী উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, কূটনীতি, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, শান্তিরক্ষা মিশনসহ সর্বক্ষেত্রে নারীর সফল অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ ক্রমান্বয়ে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

নারীর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় নারীর ক্ষমতায়নে শক্ত ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে নারী ক্ষমতায়নে একটি রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকার নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা ও দারিদ্র্য বিমোচনকে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় অগ্রভাগে স্থান দিয়েছে। সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎসবে পার্বণে, নারী থাকবে সবখানে, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় আমাদের অনেক ভালো আইন আছে। এখন আইনগুলোর প্রয়োগের জায়গায় জোর দেওয়াটা জরুরী নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ কতটা হচ্ছে, আইনসমূহ কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়মিতভাবে তদারক করা প্রয়োজন। নারী নির্যাতন মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না, তা তদারক করা ও জবাবদিহির বিষয়টি খুবই দরকার।

বর্তমানে আমাদের জনসংখ্যা ১৬ কোটির ওপরে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক নারী। তাই এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষর, অবহেলিত ও অদক্ষতায় পেছনে রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন। পাশাপাশি সমাজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীদের অবস্থান দৃঢ় হয়। পরিবারে তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারেন। এ জন্য দরকার শুধু নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা। বাংলাদেশে চলছে এখন তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব বর্তমান সরকার ই-কমার্স ও ই-মার্কেটে দেশের নারী সমাজের সক্ষমতাকে যুক্ত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে-যা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ঊর্ধ্বমুখী করবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। শুধু অংশগ্রহণ বাড়েনি, মেয়েরা এখন অনেক বেশি মেধার পরিচয়ও দিচ্ছে। অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের আইটি সেন্টারের প্রধান হিসেবে এখন কাজ করছে নারীরা। নারীকে মানুষ হিসেবেই দেখতে হবে, নারী হিসেবে নয়। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এর অগ্রদূত জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে নারীদের সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ এর প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগুচ্ছে সব ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে তাহলেই জাতীয়,অর্থনৈতিক,সামাজিক,রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ,অসাম্প্রদায়িক উন্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ।

লেখকঃ
এডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী
সমন্বয়ক সুচিন্তা বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিভাগ।