আলমগীর মাহমুদ :
বুকে আশাওয়ালা কলম সৈনিকের কাচারি ঘর ‘সিবিএন’ আমার এই লেখায় প্রাক্তন ছাত্র মেধু বড়ুয়া শিক্ষক, বৌদ্ধ বিহার ও সমাজ সুরক্ষা কমিটির সেক্রেটারি উখিয়া মন্তব্য দেখে সেদিন আর এদিনের ছাত্রের বৈপরীত্য আমারে বেশ নাঁড়া দেয়।তাই স্মৃতি আঁচড়ানো।
মেধু, খোরশেদ, মালেক, তারা আমার অর্জন।এদের কলম হাতে নেয়া মানে হৃদয়ে একফসলা ভালবাসার টর্ণেডো,কালবৌশাখী।আমার এই ছাত্রগুলো আলাদা বৈশিষ্ট্য ও গতিধারা ধারন করে।
একদিনের কথা।আমি প্লেটোর রিপাবলিক পাঠ দেব।ক্লাশে হাজির সবাই। শুরু করতেই খোরশেদের সাথে বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা চলছিল। আলোচনায় পুরো বইই শেষ।
ক্লাশ শেষে তাকে ধরলাম বেশ চেপে।
এখন সে আমারে জানায় স্যার গেলকাল বাজি হয়েছে।
যে আলমগীর স্যারকে ক্লাশে হারাতে পারবে তার জন্য ইনাম। গোশত পরটা। কে পারবে? আমি চ্যালেঞ্জ ঘোষনা দিলাম। যদি না পারি আমি সবাইরে খাওয়াব।
বাসায় গিয়ে ঘুম ঘুম ভাব প্রথমে হিসেব করি কতটাকা যায়? কম অইলে সবাইরে খাইয়ে দেব। আমি ঘুমিয়ে যাই।
দেখি সবাইরে ৭৩৫টাকা লাগবে।কি করি এতটাকা? ভাবলাম আলমগীর স্যারকে হারাতে দারুন কৌশল ছাড়া অসম্ভব।
এবার ভাবনায় এল প্লেটো রিপাবলিকের পাঠ কাল শুরু, স্যার দেখে আসবে শুরুর গুলো। আমি বইয়ের শেষ থেকে পড়া শুরু করি।এক্টু ঘুম পেলে মনেরে মনে করাই সাতশত পঁয়ত্রিশ টাকা?
সাথে সাথেই ঘুম চোখ থেকে পালায়।সেই সময়ে সাতশত টাকার বহুত কদর।রাত তিন্টায় পুরো বই আমার আয়ত্ত্বে।
পরদিন ক্লাসে উপস্তিতি জায়গা দিতে না পারার।ক্লাস শুরু করেছি খোরশেদ শুরু করল প্রশ্ন। দেখি খুবই জ্ঞানগর্ভ জটিল । সাথে সবাই তারে সহযোগিতায় প্রশ্নের ঢালপালা দিচ্ছে।
আদর্শ রাষ্ট্র ন্যায়ধর্ম। এককথায় পুরো বই।ক্লাস থেকে বের হয়ে ভাবছিলাম এই বই যদি আগে পড়া না থাকত আজ কি হতো আমার!
প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থা অধ্যায়টা আমার পৃথিবীর পছন্দের বিষয়ের একটি। বইটি অত্যন্ত প্রিয় ছিল।সাবসিডিয়ারি ক্লাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি অনেক অনেকবার।
সমাজচিন্তাও মতবাদ পড়াতাম ওদের ডিগ্রী ক্লাসে।২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ের ঘটনা।এরপর সমাজচিন্তা ও মতবাদের পুরো বই না পড়ে আমার ক্লাসে যাওয়া হতো না।
এমন ছাত্র থাকলেই শিক্ষকেরা ভাল ছাত্র থাকে।আজ এক যুগের ও বেশী সময় গেল। খোরশেদকে এখনো দেখলে প্লেটোর কথা মনে পড়ে যায়।সারাজীবন পড়বে।
কলেজে যাবার পথে গাড়ী থেকে যখন মেধু, মালেককে মডেল প্রাইমারীতে এসেন্বেলী ক্লাসে সাথে প্রধান শিক্ষক বন্ধুবর হারুনকে দেখি। সুখের শিহরনে প্রশ্ন জাগায় “কি আছে যে তোর আর পাবার?
১৯৯৫ ডিগ্রীর ব্যাচটিও ছিল নান্দনিক।তখনিই আমরা ভাজপত্র বের করতাম “চড়ুইভাতি নামে” কাজী ফরিদা ইয়াসমিন বুরির লেখা”শাড়ী বদলের মতো যদি বদল করা যেতো জীবন প্রচ্ছদ ভুলের পংক্তি গুলো ঝেড়ে ফেলে আমি জীবনটাকে শুরু করতাম প্রথম থেকে আরেকবার।”
খোরশেদ চুমকি হোটেল আবছারের ভাই “স্যার পাহাড়ে বসবাস করে কারা জানেন?
ভালমানুষ সে যুগে পাহাড়ের বাসিন্দা বনেনি। কোন না কোন অপরাধ তাঁদের গায়ে আছেই। সেটা ছোট হউক আর বড় হউক..
উখিয়ার পাহাড়ি জনপদের মানুষ আমরা।আমরা কোন না কোন অপরাধীর পরবর্তী বংশধর ‘। আমাদের কাছে বেশী ভাল ব্যবহার আশা করে মনে কষ্ট নিবেন না স্যার।রক্তে যাহ নেই তাহ আপনারে উপহার দিব কেমনে?
এখন আমারে ঠকাতে বাজি ধরার মানুষ নাই।যার ফলে যাহ জানতাম তাও গেছি ভুলে।
এখন যে মেধু মালেক,খোরশেদ, এ,টি,এম রশীদ,ফরিদা,রিংকি,বখতেয়ার স্যারের লাভলী, পূরবী রুদ্র,শংকর,সজীব রুদ্র,রাজীব রুদ্র,সোনালী ব্যাংকের আলী,সোহাগ চৌধুরী, ইয়াসমিন, লিটনের বাঁশি, রতন (জাপান)জ্যাতিসার ফ্রান্স,phd জ্যোতি রক্ষিত,phd( জাপান) অধ্যয়ন রত।জ্যোতি কল্যান( অনেকে)শংকর বড়ুয়া,জিয়া,বেবী,মুন্নী,সিরাজুল কবির বুলবুল,হারুন, আমিন,চুমকি হোটেলের খোরশেদেরা যে এখনকার দিনের বিরল প্রজাতি !!
লেখক:–বিভাগীয় প্রধান। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ উখিয়া কলেজ।
alamgir83cox@gmail.com
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।