হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর:
২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তমাখা ইতিহাসের গৌরবদীপ্ত স্মারক। ১৯৭১সালের এই দিনে সূচিত হয়েছিল আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির মুক্তি সংগ্রাম। স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে অকাতরে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার মুক্তিকামী আবাল-বৃদ্ধ, বনিতা। তবে আমাদের স্বাধীনতার জন্য রক্তদানের ঘটনা এটিই প্রথম নয়; ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ, ১৮৩১সালের ঐতিহাসিক বালাকোটের যুদ্ধ, ১৮৫৭ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লব তথা আযাদী আন্দোলন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে নিবেদিত আত্মত্যাগ ও তাজা রক্তের স্রোতধারায় আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জনের পথ সুগম হয়। শাণিত হয় স্বাধিকার চেতনা।
ইতিহাস বলে, কালের আবর্তে যখন বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়ে যায় আর বৃটিশ-বেনিয়ারা ক্ষমতার মসনদে আসীন হয় তখন ঈমানদীপ্ত দেশপ্রেমিক ওলামায়েকেরামই হারানো স্বাধীনতা পূনরুদ্ধারে জীবনবাজি রেখে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৮৫৭ সালে আযাদীর সংগ্রামে ১ম সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন আল্লামা জাফর থানেশ্বরী রহ. , ২য় সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহ.। এ যুদ্ধে সাড়ে একান্ন হাজার ওলামায়েকেরাম শাহাদাৎ বরণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় শাণিত হয় ব্রিটিশ -বেনিয়াদের কবল থেকে ভারতবর্ষের আযাদীর সংগ্রাম। শায়খুল হিন্দ
আল্লামা মাহমদুল হাসান দেওবন্দী রহ. ও তাঁর শিষ্য আওলাদে রাসুল স.আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. সহ খ্যাতনানা ওলামা-মশায়েখ আযাদী আন্দোলনে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ ২০০বছর পর ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের জিঞ্জির থেকে মুক্ত হয় পুরো ভারতবর্ষ। উড্ডীন হয় স্বাধীনতার পতাকা। পশ্চিম পাকিস্তানে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন, আল্লামা শিব্বির আহমদ ওসমানী রহ., পূর্ব পাকিস্তানে ( আজকের বাংলাদেশ) স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন, আল্লামা যফর আহমদ ওসমানী রহ.।
কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী সেই স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ থেকে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করার হীন প্রয়াস পেয়েছিল। তাদের এই অন্যায় -বৈষম্যের অবসান ঘটানোর বিপ্লবী চেতনা
থেকে ১৯৭১ সালে নজীর বিহীন আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে। একথা সর্বজনবিদিত যে, সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে বৃটিশের কবল থেকে ভারতবর্ষ মুক্ত না হলে পাকিস্তানী জালিম শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষন থেকে আমাদের মাতৃভূমিও এত অল্প সময়ের যুদ্ধের বিনিময়ে স্বাধীন হতোনা। পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী যুগের পর যুগ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে সেখানে মাত্র ৯ মাসের লড়াইয়ে স্বাধীন দেশের অভ্যূদয় বিরল ও
ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত। ওলামায়ে দেওবন্দের নেতৃত্বে রেশমী রুমাল আন্দোলন, হাজী শরীয়তুল্লাহর ফরায়েজী আন্দোলন, শহীদ তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার আন্দোলনও আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নবদিগন্ত উন্মোচন করে।

লেখক-
সাধারণ সম্পাদক
রামু লেখক ফোরাম।