এম.আর. মাহমুদ :

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় ‘মেঘনায় কতজল’ প্রবন্ধটি পড়েছিলাম। তখন কোন ক্লাসের ছাত্র ছিলাম ঠিক মনে পড়ছেনা। যেটুকু স্মরণ আছে তা হচ্ছে বেশ ক’জন দুরন্তপনা কিশোর কৌতুহল বশতঃ ছোট নৌকায় করে মেঘনায় কতজল পরিমাপ করতে গিয়েছিল। সময়টা ছিল বৈশাখ মাসের বিকাল বেলায়। দূরন্ত কিশোররা মেঘনা নদীতে কি পরিমাণ পানি আছে তা পরিমাপ করার জন্য ব্যবহার করেছিল কলা গাছের ডগা। তাদের পক্ষে মেঘনায় জলের পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। দূর্ভাগ্যক্রমে কালবৈশাখীর তান্ডবে পড়ে নৌকা ডুবে দূরন্ত কিশোরদের প্রাণপ্রদীপ নিভে গিয়েছিল। মূল কথা হচ্ছে কলা গাছের ডগা দিয়ে যেমন মেঘনায় কতজল পরিমাপ করা ব্যর্থ প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। অনুরূপভাবে কক্সবাজার জেলার আলোচিত মাতামুহুরী নদীর বালু উত্তোলন বা ড্রেজিং করাও ‘মেঘনায় কতজল’ পরিমাপের মতই।

২২৮ কিঃ মিঃ লম্বা এ নদী উৎপত্তি স্থল বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন কুরুকপাতা নামক এলাকা থেকে। ওখান থেকে এ নদী আলীকদম-লামা-চকরিয়া ও পেকুয়া হয়ে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মহেশখালী চ্যানেলে মিলিত হয়েছে। এ নদীর পানিতে চারটি উপজেলার প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়ে আসছে এ নদী সৃষ্টির পর থেকে। আর বর্ষার পাহাড়ী ঢলে এ নদীর দু’পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দাসহ এসব উপজেলার সিংহভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বর্ষায় মাতামুহুরী নদীতে পানির অবস্থা দেখলেই মনে হয় এ নদী যৌবনপ্রাপ্ত হয় বর্ষায়। শুষ্ক মৌসুমে নদীর সিংহভাগ এলাকাজুড়ে বালুচর ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনা। হঠাৎ কেউ দেখলে মনে করবে এটা যেন মরা নদী।

একসময় এ নদীর উৎপত্তিস্থল থেকে চকরিয়া পর্যন্ত শতাধিক কুম (গভীর) ছিল। সেসব কুম এলাকায় এখন হাটু সমান পানিও নেই। পার্বত্য বান্দরবান জেলার আলীকদম-লামা ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার বেশিরভাগ পাহাড়ী এলাকায় বনজসম্পদ সমৃদ্ধ পাহাড় অবশিষ্ট নেই। বেশিরভাগ পাহাড় মানব আগ্রাসনে ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের মাটি নদীতে গড়িয়ে পড়ে। এভাবে পাহাড়ের মাটি নদীতে মিশে গিয়ে খরস্রোত মাতামুহুরী নদী ভরাট হয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি হলেই পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। যে কারণে বন্যার তান্ডব থেকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া উপজেলার বেতুয়া বাজার অংশে তিন কিঃ মিঃ ভরাট নদী ড্রেজিং চলছে। এভাবে ড্রেজিংয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। ড্রেজিং বাস্তবায়ন শেষ করতে করতে চলে আসবে বর্ষা, শুরু হবে বন্যার তান্ডব। পুনরায় ভরাট হয়ে যাবে ড্রেজিং করা অংশ। অথচ সরকারী কোষাগার থেকে ব্যায় হবে এ ধরণের একটি আজগুবি প্রকল্পে সাড়ে ৬ কোটি টাকা।

চকরিয়ার প্রবীণ ও সচেতন জনগোষ্ঠির মন্তব্য ড্রেজিং প্রকল্পটি কতটুকু সুফল বয়ে আনবে তা বর্ষার পরেই বুঝা যাবে। অনুরূপভাবে মাতামুহুরী নদীর চিরিংগা ব্রিজটি অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সর্বমহল থেকে নতুনভাবে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবী উঠলেও সওজের বিজ্ঞ প্রকৌশলীরা নতুন ব্রিজ নির্মাণের পরিবর্তে নিচে পিলার তৈরী করে ব্রিজটির ধ্বস ঠেকানোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কতটুকু সফলতা আসবে তা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগই ভাল জানবে। মাতামুহুরী নদীর পুরাতন ব্রিজের ধ্বস ঠেকাতে অতিরিক্ত পিলারের কারণে বন্যার পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে পুরো পৌর এলাকা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে বিজ্ঞজনদের অভিমত। এখানে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ব্যয় করছে প্রায় ২ কোটি টাকা। যা অনেকটা জলে যাবেও তাদের অভিমত।