তাজুল ইসলাম পলাশ,  সিবিএন, চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামে সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিন (১৬) হত্যা কি প্রেমের কারনে না দূর্বত্তের হাতে ধর্ষণের পর হত্যা এ নিয়ে এখনো কোন কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, তদন্তের স্বার্থে এ মুহুর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ( ৩ এপ্রিল) তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন বাদী হয়ে নগরের পতেঙ্গা থানায় তাসফিয়ার বয়ফ্রেন্ড আদনান মির্জাকে ১ নং আসামি করে ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর খুলশী থানার জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাকে (১৬) আটক করে। আটকের পর ওইদিন রাতে আদনানকে নিয়ে পুলিশ তার বাসায় যায়। সেখানে আদনানের ল্যাপটপসহ মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াইটঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপসের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানের তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে জানান, নগর পুলিশের কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. জাহেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আদনানের সাথে তাসফিয়ার সম্পর্ক বেশি দিনের নয়। একদিন আগেও তারা দু’জনের নগরীর একটি রেষ্টুরেন্টে নাস্তা করেছিলেন। আদনানকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তদন্ত এগিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও তদন্তের স্বার্থে সব কিছু এই মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, ‘তাশফিয়া সন্ধ্যা পযর্ন্ত আদনান মির্জার সাথে থাকার ভিডিও ফুটেজসহ তথ্য আমরা পেলেও সন্ধ্যার পর তাশফিয়া কীভাবে কার সাথে চট্টগ্রাম নগরী থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা নেভাল রোডে গেল এবং সেখানে গিয়ে কীভাবে সে নিহত হলো, সেটা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করছি বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

পুলিশ ও তাসফিয়ার পারিবারিক সূত্র জানায়, এক মাস আগে আদনান মির্জা নামে এক তরুণের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় তাসফিয়ার। এর সূত্র ধরেই আদনান মঙ্গলবার পবিত্র শবেবরাতের দিন বিকেল ৫টায় তাসফিয়াকে ঘর থেকে কৌশলে বের করে। বন্ধুত্বের মাসপূর্তি উদযাপনে চায়নিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর প্রলোভন দেয়। বিকাল পাঁচটার দিকে তাসফিয়া যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিল তখন তার (তাসফিয়ার) মা আছরের নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ থেকে উঠে তাসফিয়াকে না পেয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে।

পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে গোলপাহাড়ের মোড়ে অবস্থিত চায়না গ্রিল রেস্টরেন্ট থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা হয়। ওই রেস্টুরেন্ট থেকে তাসফিয়া ও আদনানকে একসঙ্গে বের হতে দেখা যায়। এ সময় আদনানকে বিল দিতেও দেখা যায়। ওই ভিডিও ফুটেজটি ঠিক কোন মুহুর্তের তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

রেস্টুরেন্টের বয় উজ্জ্বল জানান, মঙ্গলবার শবেবরাত ও মে দিবসের ছুটির কারণে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রেস্টুরেন্ট খোলা হয়। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর অর্থাৎ ৫টা ২০ মিনিটের দিকে রেস্টুরেন্টে আসে এক তরুণ তরুণী যুগল। তারা রেস্টুরেন্টের ৮নং কেবিনে বসে। এরপর খাবার অর্ডার নিতে গেলে শুধুমাত্র ২টা আইসক্রিম অর্ডার করে তারা। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়েই তাসপিয়াকে একটি সিএনজি অটোরিকশাতে তুলে দেয় আদনান। পরে আরেকটি সিএনজি অটোরিকশাটি যোগে আদনানও স্থান ত্যাগ করে।

নাম জানাতে অনিশ্চিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তাসফিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আদনানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু ঘটনার দিন সে তাসফিয়াকে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গাড়ি ঠিক করে দিয়েছিল। কিন্তুু তাসফিয়া কি করে পতেঙ্গা সমূদ্র সৈকতের পাড়ে গিয়েছিল সেটি ঘোলাটে মনে হচ্ছে।

তাসফিয়ার চাচা নুরুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, মাসুম মেয়েটাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এরপরই তাকে হত্যা করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন দেখা গেছে। তাসফিয়ার চোখেমুখে আঁচড়ের চিহ্ন ছিল।

উল্লেখ্য, বুধবার (০২ মে) সকালে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ১৮ নম্বর ব্রিজঘাটের পাথরের ওপর থেকে সানসাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। পরে একই দিন সন্ধ্যায় নগরের খুলশী থানার জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাকে (১৬) আটক করে। আটক আদনান মির্জা বাংলাদেশ ‍এলিমেন্টারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মির্জার ছেলে।