বিশেষ প্রতিবেদক:

প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করে রোহিঙ্গা যুবকরা অসংখ্য বাংলাদেশী যুবতিদের সর্বনাশ করার চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদের অনেকেই বাংলাদেশী পাসপোর্টে বিদেশে গিয়ে নাম পরিবর্তন করার মত তথ্যও জানাগেছে।

এ ধরণের প্রতারণার শিকার মহেশখালীর এক ভদ্রঘরের মেয়ে আয়েশা ছিদ্দিকা। রোহিঙ্গা যুবক এনায়েত উল্লাহর প্রতারণার শিকার হয়ে এখন সে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে।

আয়েশা ছিদ্দিকা মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা এলাকার সহজ সরল নাসির উল্লার মেয়ে।গোরকঘাটা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ার সময় অষ্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে এনায়েত উল্লাহ আয়েশা ছিদ্দিকাকে বিয়ে করে।

আয়েশা ছিদ্দিকা সাংবাদিকদের জানায়, এনায়েত উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা যুবক টেকনাফের বাসিন্দা চট্টগ্রামে বসবাস করে বলে পরিচয় দিয়ে অষ্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাকে বিয়ে করে। এই বিয়েতে মা-বাবার সম্মতি না থাকলেও মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাধ্য হয়ে তারা সম্মতি দেয়। গত ৭ মার্চ ২০১৫ ইং ১২ লাখ টাকার মোহরানা নির্ধারণ করে ৫ লাখ টাকা নগদ ও ৭ লাখ টাকা বাকিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ের সময় এনায়েত উল্লাহ চট্টগ্রামের হালিশহরের ঠিকানা ব্যবহার করে। নিকাহ রেজিষ্ট্রার মতে তার ঠিকানা লেখা হয়, এনায়েত উল্লাহ পিতা আব্দুল খালেক, মাতা জুবেদা খাতুন, বাসা নং ৮, রোড নং ২, লেইন নং ১, বি ব্লক, হালি শহর, হ: ষ্ট্যাট, হালি শহর চট্টগ্রাম।

সে এই ঠিকানা ব্যবহার করলেও জানাগেছে, এনায়েত উল্লাহ আসলে রোহিঙ্গা। ১৯৯৪ সালের দিকে ওরা বাংলাদেশে আসে। প্রতারণা করে এই সময়ে সে এনায়েত উল্লাহ নামে বাংলাদেশী ন্যাশনাল আইডি কার্ড করে, এনায়েত উল্লাহ নামে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে সে অষ্ট্রেলিয়া চলে যায়। সেখানে গিয়ে তার প্রতারণার সুবিধার্থে নাম পরিবর্তন করে আব্দুল হাকিম নাম ধারণ করে। সেখানে সে আরো অনেককে প্রতারণা করে চলেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

আয়েশা ছিদ্দিকা আরো জানায়, বিয়ের পরে এনায়েত উল্লাহর আচরনে পরিবর্তন আসে। যৌতুকের দাবীতে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। ৫ লাখ টাকার যৌতুকের জন্য বার বার চাপ দিতে থাকে। আর যৌতুক না দিলে তাকে তালাক দেয়ার হুমকি দিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে রাখে।এখন সে কোন যোগাযোগ তো রাখছেইনা। ফোন করলে সে বিয়েই অস্বীকার করছে।

ইতোমধ্যে ২১ নভেম্বর ২০১৭ ইং তাদের ঘরে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। ওই সময় এনায়েত সর্বশেষ দেশে এসেছিল।

কিন্তু তার যৌতুকের নেশা ছাড়েনি। ৫ লাখ টাকার যৌতুকের দাবীতে আয়েশাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে গত ৯/১২/২০১৭ ইং কক্সবাজারের বাসা থেকে বের করে দেয়।

এর প্রতিকার চেয়ে আয়েশা ছিদ্দিকা প্রথমে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করতে যায়। কিন্তু সেখানে মামলা না নেয়ায় বিলম্বে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করে। মামলার নং সি/পি/৪৯৩/১৮।

জানাগছে, এনায়েত উল্লাহ এভাবে অষ্ট্রেলিয়ার প্রলোভন দিয়ে প্রতারণা করে টাঙ্গাইলের আরো এক সুন্দরী মেয়ের সর্বনাশ করেছে। একইভাবে অষ্ট্রেলিয়ায় আরো কয়েকজন মেয়েকে বিয়ে করার কথা বলে তাদের ইজ্জত সম্মান নষ্ট করছে বলে জানাগেছে।

এদিকে খবর নিয়ে জানাগেছে, এভাবে অসংখ্য রোহিঙ্গা যুবক বাংলাদেশী সেঁজে প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশী যুবতীদের বিয়ে করে বা বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তাদের সর্বনাশ করছে। এছাড়াও কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ও বিদেশে রোহিঙ্গাদের নানা অপকর্মে বাংলাদেশী মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

কক্সবাজারের মানুষ রোহিঙ্গাদের এসব অপকর্ম ও প্রতারণার প্রতিকার চায় প্রশাসনের কাছে।