মো: ফারুক, পেকুয়া:

পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সিকদার পাড়াস্থ মরহুম মাওলানা ছৈয়দুল হকের পুত্র সালউদ্দিন আহমেদ। কেন্দ্রীয় বিএনপির নীতি নির্ধারনী ফোরামের একজন। দায়িত্ব পালন করেন তৎক্ষানিক মন্ত্রী পরিষদে। বিএনপির কঠিন সময়ে হাল ধরে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বও পালন করেন। যাকে কক্সবাজার বিএনপির অভিভাবক হিসাবে ভাবা হয়। ক্লীন ইমেজ হিসাবে অধিক পরিচিত চকরিয়া-পেকুয়ার সাধারণ জনগণের কাছে। যার কারণে তিনিসহ তার স্ত্রী বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এ আসন থেকে। তাকে অসম্ভব ভালবাসার কারণে নিখোঁজ থাকাবস্থায় ব্যাপক আন্দোলন হয় চকরিয়া-পেকুয়াসহ কক্সবাজার জেলায়।

সেই সালাউদ্দিন আহমেদ ৬২দিন নিখোঁজ থাকার পর ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে একটি এলাকায় তাকে সনাক্ত করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৮ সালের ১১ মে পর্যন্ত ভারতে তিন বছর সময় পার করছেন মামলা জটিলতায়। কিছু সময় শারীরিক অসুস্থতা ও কিছু সময় ভাল সময় পার করলেও কক্সবাজার তথা বাংলাদেশ থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা তার সাক্ষাতে যাই। কথা বলেন জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে। বিশেষ করে খোঁজ খবর নেন কক্সবাজার ও চকরিয়া-পেকুয়াবাসীর। স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অধির অপেক্ষায় আছেন তাদের প্রিয় নেতা ফেরার জন্য। সালাউদ্দিন আহমদের সাক্ষাতে যাওয়া নেতাকর্মীদের বলেছেন দ্রুত সম্ভব তিনি দেশে ফিরতে চান। এ নিয়ে দৈনিক বাঁকখালীর সাথে কথা হয় তার সাক্ষাতে যাওয়া নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে।

ভারতে সালাউদ্দিন আহমেদের সাক্ষাতে যাওয়া পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আকিক মামুন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এলাকাবাসীর জন্য প্রিয় নেতার মন যে কান্না করে সাক্ষাতে না গেলে বুঝতে পারতামনা। নাম ধরে ধরে জিজ্ঞেস করেছেন চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ কেমন আছেন। দেশের মাঠিতে ফিরতে অসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বাংলাদেশে তার মৃত্যু হলেও ফিরবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আর নেতা ফেরার অপেক্ষায় আছি আমরা।

ভারতে সালাউদ্দিন আহমেদের সাক্ষাতে যাওয়া পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট জাহেদ হাসান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি প্রিয় নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ এর সাথে ভারতে গিয়ে দেখা করেছি। দেশে ফিরতে উদগ্রীব হয়ে আছেন নেতা। স্ত্রী সন্তান ও প্রিয় এলাকাবাসীকে অভাব বোধ করেন সব সময়। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলাবাসীর খোঁজ খবর নিয়েছেন আমার কাছ থেকে। বাংলাদেশে মামলা জটিলতায় যাই হওক তিনি দেশে ফিরবেন। বাংলাদেশে মৃত্যু হলেও নেতার কোন দুঃখ নাই আমাদের জানিয়েছেন। সাক্ষাতের ৬মাস শেষ হলেও ভারতে মামলা শেষ না হওয়ায় আমিসহ দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ। আশা করি তিনি নির্দোষ প্রমাণ হয়ে বীরের বেশে দেশে ফিরবেন।

সাক্ষাতে যাওয়া উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবদীন বলেন, আমিসহ বেশ কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মী ভারতে গিয়ে প্রিয় নেতার সাক্ষাত করেছি। তিনি কক্সবাজার জেলার অবিসংবাধিত নেতা। সারা বাংলাদেশে বিএনপিসহ লাখ লাখ জনতা তাকে দ্রুত ফিরে পাওয়ার আশায় আছেন। নেতাও তা জানেন। তিনিও দেশে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে আছেন। মামলা যেহেতু শেষ হয় নাই তাই ফিরতে পারছেনা। আমাদের সাথে আন্তরিকতা পরিবেশে কথা বলেছেন। চকরিয়া-পেকুয়ার বেশ কয়েকজন গুণী ব্যক্তির খোঁজ খবর নিয়েছেন। পেকুয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মরহুম জালাল আহমেদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন আমার কাছ থেকে। এছাড়াও পেকুয়ার প্রবীণ অনেক মানুষের নাম ধরে আমার কাছ জানতে চেয়েছেন তারা কেমন আছেন। অথচ এদের অনেক জনের নাম আমি পর্যন্ত জানিনা। তাদের কথা বলে তিনি কান্না পর্যন্ত করেছেন। নেতার মনের মাঝে পেকুয়ার সকল মানুষের অবস্থান। তার সাক্ষাতে না গেলে আমি জানতে পারতামনা। আমি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি সুস্থ অবস্থায় বীরের বেশে দেশে আসুক এবং আসবে।

সদর গোঁয়াখালী এলাকার প্রবীন ব্যক্তি সালাউদ্দিন আহমেদের সমর্থক লিয়াকত আলী, উজানটিয়ার আশেক এলাহি, মগনামার মো: আজিম, উজানটিয়ার বাসিন্দা উপজেলা যুবদলের সদস্য মো: এহেসান, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এফএম সুমন, উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জিনু, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামরান জাদিদ মুকুট, সভাপতি মোসলেম উদ্দিন, সদর প্যালেন চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম তাদের প্রতিক্রিয়ায় অভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ভারতে সালাউদ্দিন আহমেদ আপনা আপনি যায়নি। তাকে অপহরণ করে ৬২দিন গুম করে রাখা হয়েছিল। পরে শিলিংয়ে তাকে সনাক্ত পরবর্তি ৩ বছর শেষ হল। বাংলাদেশের একজন প্রিয় নেতা বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে কি ভাল থাকতে পারে। বাংলাদেশে তার যাই হওক আমরা আশা করছি দেশের নেতা দেশে ফিরে আসবে। দোয়া করি ভারতে দ্রুত তার মামলা শেষ হয়ে যাক। বীরের বেশে বরণ করার জন্য আমরা প্রস্তুত।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম. বাহাদুর শাহ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, গত ৩বছর ধরে আমরা দলীয় নেতাকর্মী ও চকরিয়া-পেকুয়াবাসী নেতার জন্য অপেক্ষা করছি। রাজনৈতি প্রতিহিংসার বলী হয়ে আজ তিনি ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছে। তিনি ফোন করার সাথে সাথে খবর নেন চকরিয়া-পেকুয়াবাসীর। দলীয় নেতাকর্মীরাও প্রিয় নেতার সাক্ষাতে যান। ভারতে মামলা শেষ পর্যায়ে। মামলায় নির্দোষ প্রমাণ হওয়ার সাথে সাথেই দেশে চলে আসবেন। এমন বার্তা তিনি আমাদের দিয়ে রেখেছেন। তাকে বরণ করার জন্য আমরাও প্রস্তুত। তিনি কক্সবাজারবাসী বিশেষ করে পেকুয়াবাসীর দোয়া চেয়েছেন।

সালাউদ্দিন আহমেদের পরিবারের একটি সূত্র জানিয়েছেন, সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমদ সন্তানদের নিয়ে বছরে চার পাঁচ বার শিলংয়ে দেখা করতে যান। মামলার খোঁজ খবরও নেন। মামলার সার্বক্ষনিক তদারকি করেন সালাউদ্দিন আহমেদের ভাতিজা সাংবাদিক সাফওয়ানুল করিম। তিনি জানিয়েছেন, ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে একটি মামলা দায়ের করে, উক্ত মামলায় তিনি নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছেন এবং তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। মেঘালয়ের সিনিয়র আইনজীবী এসপি মোহন্ত এ মামলা পরিচালনা করছেন। তিনি নামাজ দোয়া, কোরআন হাদিস, পত্র-পত্রিকা ও বই পড়ে মেঘালয়ের শিলং জীবন কাটাচ্ছেন। ওখানেই বসে এলাকার অসহায় মানুষদের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। অনলাইনে নিউজ, সাক্ষাতে যাওয়া নেতাকর্মী ও ফোনে এলাকাবাসীর খবর নেন। মামলা বর্তমানে আরগোমেন্ট পর্যায়ে আছে। তারপরও রায় হবে। আদালতে বিভিন্ন ডকুমেন্ট প্রদান করার পর চাঁচা আশা করছেন নির্দোষ প্রমাণ হয়ে দেশে ফিরবেন। এলাকাবাসীরও তার আশায় দিন গুনছেন।