শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর :

অবশেষে পরিচয় মিলেছে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওর কলেজ ব্রিজ এলাকার খালপাড় থেকে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি মরদেহের। মরদেহের হাতে থাকা আংটি তার পরিচয় নিশ্চিতে ভূমিকা রাখছে। তামায় তৈরি সেই আংটির সূত্র ধরেই অনুসন্ধানের মরদেহটি টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পুরাতন পল্লান পাড়ার সাইফুল ইসলামের (২৮) বলে জানিয়েছে পুলিশ।আংটিটি সনাক্ত করে এটি সাইফুলের বলে দাবি করেন তার স্ত্রী সাবেকুন্নাহার (২২) ও বড় ভাই সৈয়দ আলমও। তাই আরও নিশ্চিত হতে নিহতের ডিএনএ টেষ্ট করছে পুলিশ। পরীক্ষায় সাইফুলের তিন মেয়ের ডিএনএ মিল আছে কিনা সেটিই পরখ করে দেখার উদ্যোগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।জানা যায়, এ বছরের ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও কলেজ গেইট ব্রিজের পশ্চিমে খালপাড় থেকে আনুমানিক ২৮ বয়সী এক যুবকের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২০ এপ্রিল রাতে মরদেহটি ঝিলংজা ইউপির খরুলিয়া ঘাটপাড় এলাকার আবদুল খালেক (২৮) হিসেবে চিহ্নিত করে খালেকের স্বজনরা। ২১ এপ্রিল তাকে খালেক হিসেবে শোকাহত পরিবেশে ঘাটপাড় এলাকায় দাফনও করে। কিন্তু দাফনের ঠিক এগার দিনের মাথায় খালেককে সীতাকুন্ড থেকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর পুলিশ বস্তাবন্দী সেই মরদেহটির পরিচয় নিয়ে বিপাকে পড়ে।তবে সেই জটলা খুলে দিয়েছে মরদেহের হাতে পাওয়া আংটি। সেই আংটির সূত্র ধরেই পরিবারের সদস্যদের সনাক্তে মরদেহটি টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পুরাতন পল্লান পাড়ার মৃত রশিদ আহমদের ছেলে সাইফুল ইসলামের (২৮) বলে একপ্রকার নিশ্চিত হয় পুলিশ।এ বিষয়ে সাইফুলের বড় ভাই সৈয়দ আলম বলেন, ‘১৭ এপ্রিল রাত ৯টায় পুরাণ পাড়া জামে মসজিদের সামনে থেকে একদল ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুলকে অপহরণ করে। অপহরণের পর তাকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। এ ঘটনায় ২৪ এপ্রিল টেকনাফ থানায় একটি সাধারন ডায়রি করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও অপহরণকারীদের বসতবাড়ি ও নানা জায়গায় যোগাযোগ করেও তাদের এবং আমার ভাইয়ের সন্ধান মিলেনি। এ কারণে ৩০ এপ্রিল টেকনাফ থানায় টেকনাফ ও লোহাগাড়ার ৮ ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করি।’তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে অপহরনকারীদের ব্যবসায়ীক লেনদেন ছিল। আমার ভাইয়ের পাওনা টাকা আত্মসাতের জন্যই তাকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। আমার ভাই বাম হাতের মধ্যমায় একটি তামার রিং পরত। সেই একই ধরণের রিং ঈদগাঁওয়ে থেকে উদ্ধার হওয়া মরেদেহের আঙ্গুলে পাওয়া গেছে। তাই আমি নিশ্চিত এটি আমার ভাইয়ের মরেদেহ। তারপরও আইনি জটিলতা এড়াতে আমরা ডিএনএ টেস্ট করতে সম্মতি দিয়েছি।’অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টেকনাফ থানা পুলিশের এস আই মহির উদ্দিন খান বলেন, ‘রিংয়ের মাধ্যমে মরদেহটি সাইফুলের বলে সনাক্ত করেছে ভিকটিমের ভাই, স্ত্রী ও সন্তানরা। পুলিশের কাছেও একই ধরণের ক্লু রয়েছে। তারপরও ডিএনএ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। তিনি বলেন, ৩ মে সাইফুল অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আধুনগরের ৮নং ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়ার ছিদ্দিকের ছেলে জানে আলমকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়। টেকনাফ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া কক্সবাজার নিউজকে বলেন, ‘ইয়াবা লেনদেনের টাকা আত্মসাত এবং নিহতের পরকীয়া প্রেমের জের ধরে ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই তদন্ত কাজ চালাচ্ছি আমরা।’ ওসি বলেন, ‘সাইফুলের সঙ্গে এজাহারভুক্ত আসামিদের ইয়াবা লেনদেনের টাকা নিয়ে বিবাদ ছিল। গতবছর সীতাকুন্ড থানায় ইয়াবা নিয়ে আটকও হয়েছিল সাইফুল। এছাড়া সাইফুল দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম বউয়ের সাথে ডিভোর্স হওয়ার পরও তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। চট্টগ্রাম জেলার বায়োজীদে তারা প্রায়ই সময় মিলিত হত। ওই প্রথম বউয়ের দ্বিতীয় স্বামী হলো ঈদগড়ের জনৈক মোজাম্মেল। যার বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধারের স্থানের দুরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার।’ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ধৃত জানে আলমের কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।