শাহেদ মিজান, সিবিএন:
টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সপ্তাহ ধরে হওয়া এই ভারী বর্ষণে চকরিয়া, রামু, পেকুয়াসহ আরো অনেক এলাকায় বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত তিন লাখ মানুষ। প্লাবিত এলাকায় খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও অধিকাংশই ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। তবে রাতে জেলা প্রশানসনের নেতৃত্বে চারটি টিম শহরের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নিতে এলাকা যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণে কক্সবাজার জেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার হারবাং, কৈয়ারবিল, বরইতলী, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী, লইক্ষ্যারচর, পেকুয়ার কয়েকটি এলাকা, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ এবং রামু দক্ষিণ মিঠাছড়িসহসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এতে এলাকার গবাদি পশু, পাকা ধান, পানের বরজ, বর্ষাকালীন শাকসবজি ও বিভিন্ন জাতের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাধারণ মানুষ চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে। পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছে প্লাবিত এলাকার মানুষ।

অন্যদিকে মহেশখালীর ধলঘাটায় প্রায় ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপে বেড়িবাঁধে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।


কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, পানিতে জেলা সদরের বৃহৎ বানিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁও বাজারের প্রধান ডিসি সড়কসহ অলি গলি জুড়ে হাঁটু পরিমান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। বাজারের নিউ মার্কেট, বেদার মার্কেট, মাতবর মার্কেট, হাজী মার্কেট, হাসপাতাল সড়ক, চাউল বাজার সড়ক, স্বর্ণপল্লী এলাকা, বাজারের পশ্চিমগলি, শহীদ মিনার সড়ক, মসজিদ সড়ক, কাপড়ের গলি, মাছবাজার সড়ক, ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ঈদগাঁও উপ ডাকঘর ও তরিতরকারী বাজার প্লাবিত হয়েচে। ইসলামাবাদ ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রাম প্রবল বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে ২/৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দক।

আবার উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পোকখালীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামাঞ্চল ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে ৪/৫ শত পরিবারের প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার লোকজন পানিবন্দি রয়েছে। সে সাথে গোমাতলীতে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও পোকখালীতে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ির অনেক এলাকা পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। অতিবৃষ্টির সময়ে দক্ষিণমিঠাছড়ি কাড়ির মাথা এলাকার কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক পানিতে ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ছে।

ভারী বৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যেই কক্সবাজার শহরের ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ও ১২ নং ওয়ার্ডে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে সরে যেতে নির্দেশে দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। গত রোববার এক ‘জরুরি ঘোষণা’ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে তাদের সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কক্সবাজার আবহাওয়া সরকারি আবহাওয়াবিদ ফরমান আলী বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও তৎসংলগ্ন এলাকার জন্য ৩ নম্বর সংকেত বলৎবত রয়েছে। এ কারণে আরও দু-একদিন ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ মি. মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল পর্যন্ত ৪১.৬ মি. মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। মাছ ধরার নৌ-যান গুলোতে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত বেশি হলে ভূমি ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।’।


কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারি কেউ থাকতে পারবে না। তাদেরকে সরে যেতেই হবে। না সরলেও আমরা তাদের বাধ্য করবো। আজ (গতকাল) আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বসতির সরিয়ে নেবো।’

এছাড়াও ভারী বর্ষণে মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়ন, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ, রামু ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে বাঁকখালী নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব এলাকাগুলো আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।’