নুরুল কবির,বান্দরবান / মো. নুরুল করিম আরমান, লামা :

প্রবলবর্ষণ জনিত কারণে পাহাড়ধসে বান্দরবান পৌর এলাকা এবং লামায় শিশুসহ ৪জন নিহত হয়েছেন। জেলা শহরের কালাঘাটায় পাহাড়ধসে নিহত হন মিলন দাশের স্ত্রী প্রতিমা রানী দাশ(৪৫) এবং লামা উপজেলার দুর্গম সরই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কালাইয়া আগা গ্রামের কৃষক মো.হানিফ (৩০), তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম(২৫) এবং তাদের শিশু কন্যা হালিমা আক্তার (৪)।

লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-এ জান্নাত রুমি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বাড়িতে ঘুমন্তবস্থাতায় পাহাড়ের মাটি ধসে ঘর চাপায় নিহত হয় মো.হানিফ,তার স্ত্রী রাজিয়া এবং শিশু কন্যা হালিমা। ইউএনও,ইউপি চেয়ারম্যান,পুলিশ দল,সেনাবাহিনী,দমকল বাহিনীসহ জন প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে রওয়ানা দিয়েছেন বলেও পুলিশ সুত্র বলেছে। নিহতদের মৃতদেহ স্থানীয়রা বিকেল ৩টায় উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফ আলী। নিহত হানিফের ঘর থেকে প্রায় ৫০০ ফুট দুরে অবস্থিত পাহাড়টি প্রবল বর্ষণে আকস্মিক ভাবে ধসে পড়ে হানিফের মাটির ঘরটি চাপা দেয়,ফলে তারা তিনজনই ঘুমন্ত অবস্থায় মাটি চাপা পড়ে নিহত হন বলে প্রতিবেশি শহিদুল ইসলাম ওয়াড কমিশনারকে জানিয়েছেন। জেলা শহরের কালাঘাটার বড়–য়ারটেক এলাকায় পাহাড় ধসে নিজঘরে নিহত গৃহবধু প্রতিমা দাশের মৃতদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানায়, রোববার থেকে বান্দরবানে অবিরাম ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গত চব্বিশ ঘন্টায় বান্দরবানে ১১২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে

বান্দরবান-রুমা উপজেলার সড়কের দৌলিয়ন পাড়া এলাকায় সড়কের ওপর পাহাড়ধসে পড়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা সদরের সাথে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা শহরের বালাঘাটার পুলপাড়ার কাছে বেইলি সেতুসহ আশেপাশের এলাসাকাসমুহ বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বান্দরবানের সাথে রাংগামাটির সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। জেলার সাংগু, মাতামুহুরী এবং বাঁকখালী নদীতে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জেলা শহরের হাফেঘোনা, বরিশালপাড়া, আর্মিপাড়া, ইসলাম পুর,কাশেমপাড়া,এলাকা এবং মধ্যমপাড়ার নিচু এলাকাসমুহ বানের পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক মো.আসলাম হোসেন, পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী এবং জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বান্দরবান পানি সংরক্ষণ ও মৃত্তিকা অফিসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: মাহাবুবুল রহমান বলেন, পাহাড়ে মাটি ধরে রাখার মতো গাছ নেই। নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়কে ন্যাড়া করে চাষও করা হচ্ছে। যার ফলে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসের কারণে প্রাণনাশের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনে দিনে। এতে করে প্রতিবছর পাহাড়ধসে প্রাণনাশের গঠনা ঘটছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেন জানান, পাহড় ধসে নিখোজ ৪জনের উদ্ধার করা হয়েছে। রুমা উপজেলা এবং রাঙ্গামাটির জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঝুকিপূর্ন পাহাড় এবং ঘরবাড়ি থেকে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। জেলার সাতটি উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।