হাবিবুর রহমান সোহেল, নাইক্ষ্যংছড়ি:

বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির পার্শ্ববর্তী রামুর কচ্ছপিয়ার দৌছড়ি এলাকার বাকঁখালী নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন জনপদে আবারও ভয়াবহ ভাঙনের তান্ডব শুরু হয়েছে। এতে ভয়াবাহ ভাঙনের কবলে পড়েছে ওই এলাকার হাজারও মানুষ। চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা এক সপ্তাহ ধরে অভিরাম ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি কমে যাওয়ার পরপর নদীর তীরে দৌছড়ি পয়েন্টে শুরু হয়েছে ভাঙনের খেলা। তাতে ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ১০টি বসতঘর। বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে আরো শতাধিক বসতঘর, দোকান-পাট, মসজিদ মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে ভাঙনে আতঙ্কে বর্তমানে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ওই এলাকার জনসাধারণ। এ অবস্থার কারনে বাঁকখালী নদীর তীর লাগোয়া এলাকায় বসবাসরত প্রায় এক হাজারেরও বেশি জনসাধারণ নদীর ভাঙনে চরম আতংকে ভুগছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া পরিসংখ্যান মতে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিগত দুই দশকে ভিটেবাড়ি হারিয়ে কমপক্ষে ৫ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছেন। এসব পরিবার বেঁচে থাকার তাগিদে ঠাঁই নিয়েছে পাহাড়ি এলাকায়।

গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নে বাঁকখালী নদীর তীর এলাকায় প্রায় ৬হাজার মানুষের বসবাস। নদী ভাঙনের ফলে ইউনিয়নের বেশিরভাগ জনগনের মাঝে বিরাজ করছে চরম আতংক। শুষ্ক মৌসুম যেমন তেমন বর্ষাকালে বেড়ে যায় আতঙ্কের মাত্রা। ভাঙন অব্যাহত থাকলে বর্ষাকালে যে কোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে এলাকার ফসলী জমি- বলেন তিনি।

কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইসমাইল মোঃ নোমান বলেন, প্রতিবছর বর্ষাকালে বাঁকখালী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারনে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে নদীর তীর এলাকার বিপুল জনবসতি ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হচ্ছে। এবছরও বর্ষাকালের শুরুতে কয়েকদফা বন্যায় তার ইউনিয়নের দৌছড়ি এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কটি বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কয়েকবছরের মধ্যে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের আয়তন ছোট হয়ে যাবে। এতে এলাকার অনেক পরিবার ভিটেমাটি হারাবে।

কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ও সমাজ সেবক নাছির উদ্দিন সোহেল সিকদার বলেন, চলতি মৌসুমের বর্ষা কালে কচ্ছপিয়ার বিভিন্ন জনপদে বিশেষ করে দৌছড়ি এলাকায় বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙনের শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দৌছড়ি দক্ষিন কুলের দৌছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের পয়েন্টের বিশাল এলাকা নদীতে তলিয়ে গেছে। অন্তত ১০-১২টি বসতঘর এবারের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

জানা গেছে, ১৯৯১সালে প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ের পর রামুর বাঁকখালী নদীতে ভাঙ্গনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এখনো প্রতিবছর বর্ষাকালে নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের প্রবল স্রোতের টানে অব্যাহত রয়েছে নদী ভাঙনের ভয়াবহতা। এই ভয়াবহতার কবলে পড়ে গেল দুই দশকে উপজেলা ও কচ্ছপিয়া গর্জনিয়া এলাকার প্রায় ১০হাজার পরিবার ভিটেবাড়ি হারিয়ে গৃহহারা হয়েছে।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা (এসও) তারেক বিন সগীর বলেন, বাকঁখালী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে পাউবো ইতোমধ্যে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছেন। বিশেষ করে নদীর ঝুঁকিপুর্ণ পয়েন্টে বসানো হচ্ছে সিসি বক্ল দ্বারা টেকসই স্পার।

তিনি বলেন, নতুন করে যেসব এলাকায় নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে তা সনাক্ত করে সমীক্ষার মাধ্যমে অর্থ বরাদ্ধের জন্য উধর্বতন দপ্তরে সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে। অর্থ বরাদ্ধ প্রাপ্তি সাপেক্ষে উপজেলার সবখানে ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।