ডেস্ক নিউজ:

ফ্রান্সের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নামছে ইউরোপের পরাশক্তি বেলজিয়াম। ‘পরাশক্তি’ কথাটা গেল ১৮ বছর আগেও বেলজিয়ামের গায়ে লাগাতে ভয় পেতো সবাই। আর সেই বেলজিয়াম এখন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। প্রত্যেকটি দলের আজকের এই পর্যায়ে আসার পেছনে রয়েছে কিছু কৌশল, কিছু দিক নির্দেশনা। বেলজিয়ামও ঠিক এর ব্যতিক্রম নয়। রাতারাতি তো আর বেলজিক ফুটবলের এতো আমূল পরিবর্তন আসেনি। নিশ্চয়ই কিছু পদক্ষেপ, কিছু কৌশল সঙ্গে সেগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আজকের লুকাকু, ডি ব্রুয়েন, এডিন হ্যাজার্ডরা বিশ্বকাপের মত আসরে সেমিফাইনাল খেলছে।

বেলজিয়ামের উত্থানের কথা বলার আগে তাদের কিছু ইতিহাস জেনে নেওয়া জরুরি। নাহলে ঠিক বোঝা যাবে না কতটা সংগ্রাম, কতটা শ্রমের বিনিময়ে তারা এমন উৎকর্ষিত সাফল্য পেয়েছে।

১৮৬০ সালের দিকে বেলজিয়ামের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ছিল রাগবি। কালের বিবর্তনে বিংশ শতাব্দীতে এসে সেটি আস্তে আস্তে ফুটবলে চলে আসে। বড় আসরগুলোতে বেলজিয়ামের সর্বোচ্চ সাফল্য ১৯৮০ সালে ইতালিতে হওয়া ইউরো কাপের রানার্সআপ। বিশ্বকাপে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল তারা। পরবর্তীতে ফ্রান্সের সঙ্গে তৃতীয় নির্ধারণী ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপে চতুর্থ হয় বেলজিয়ামের সর্বশেষ সোনালি প্রজন্মটি। এরপর যেন কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছিল বেলজিয়াম ফুটবল।

১৯৮৮-১৯৯৬ পর্যন্ত তিনটি ইউরো কাপের কোনটিতেই সুযোগ পায়নি তারা। বিশ্বকাপে খেলতে পারলেও ১৯৯০-২০০২ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল দ্বিতীয় রাউন্ড। এরপর ঠিক কী এমন ঘটলো যে ১৬ বছর আজ তারা সেমিফাইনালে এত শক্তিশালী দল গঠন করতে সক্ষম হলো! এর পেছনে রয়েছে কিছু মানুষের কঠোর শ্রম, মেধা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সেগুলোর বাস্তবায়ন।

b

২০০০ সালে বেলজিয়াম দলটি ছিল তারুণ্যে ভরপুর। দলে ছিল প্রতিভার ছড়াছড়ি। কিন্তু ইউরোপের বড় মঞ্চে রাজত্ব করার মত তা যথেষ্ট ছিল না। ২০০০ সালে ইউরো কাপটি ঘরের মাঠে হওয়াতে অনেকে নিশ্চিত ছিল তারা পরের রাউন্ডে চলে যাবে। শেষ ম্যাচে তুরস্কের সঙ্গে ড্র করলেই গ্রুপ পর্বে উৎরাতে পারতো তারা। কিন্তু হাকান সুকুরের তুর্কি বাহিনীর কাছে ২-০ ব্যবধানে হেরে ইউরো কাপের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় বেলজিয়াম। তারপরেই যেন টনক নড়ে রেড ডেভিলদের।

মিশেল সাবলন। বেলজিয়ামের আজকের এই উত্থানের নেপথ্যের নায়ক। ১৯৮৬। ১৯৯০, ১৯৯৪ সালে বেলজিয়ামের দ্বিতীয় কোচের ভূমিকায় দেখা গেছিল তাকে। সাবলন যখন ১৯৮৬ সালে বেলজিয়ামের সর্বশেষ সোনালি প্রজন্মের সহকারী কোচ ছিলেন তখন গোলরক্ষক ইয়ান মারিয়ে ফাফ এবং মিডফিল্ডার এনজো স্কিফো যাকে ‘লে পেতিত পেলে’ বলা হতো তারা বেরিয়ে এসেছিলেন।

‘আপনাকে জানতে হবে যে, নব্বইয়ের শেষের দিকে বেলজিয়াম ইন্ডিভিজুয়াল মার্কিং, কখনো সুইপার হিসেবে খেলতো। এটা অনেকটা ৪-৪-২, অনেক সময় এটা ৩-৫-২ হয়ে যেত। আমরা এ দলের হয়ে অনেক ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছিলাম কারণ আমরা গোছালো খেলেছিলাম। কিন্তু এটা খুব রক্ষণাত্মক কৌশল ছিল যারা কাউন্টার এটাকে পারদর্শী তাদের জন্য।’ ২০১৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে সাবলনের ভাষ্য।

২০০০ সালের ইউরোতে বেলজিয়ামের ভরাডুবির পর সাবলন নিজ উদ্যোগে কাজ শুরু করেন। মূলত কাজ শুরু হয় ২০০২ সালে। প্রথমেই তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্ষত স্থান থেকেই কাজ শুরু করতে হবে’। তিনি টানা দুই বছর বেলজিয়ামের যুব প্রতিযোগিতার ম্যাচগুলো মাঠে বসে দেখেন। এরপর ফ্রেঞ্চ এবং ডাচ ফুটবল দলের ম্যাচগুলো নিয়ে স্টাডি করেন। উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরেছেন। গিয়েছেন আয়াক্স এবং বার্সেলোনাতেও। যে যুব ফুটবলারদের ম্যাচগুলো দেখেছেন সেসব ম্যাচের ভিডিও সংগ্রহ করে লিউভান বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০০ ঘন্টা ব্যয় করে সাবলন ভবিষ্যৎ পাল্টে ফেলার মত এক টোটকা পেলেন।

b

বেলজিয়ামের বিভিন্ন পর্যায়ের কোচদের একটা মিটিংয়ে ডাকলেন। তিনি তখন সবাইকে বলেন, ‘এ কারণেই আমরা প্রথম থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিশ্লেষণ করেছি। যদি আমরা ক্লাবকে দেখাই কিশোররা যাদের বয়স ৯ কিংবা ৮ এর নিচে তারা আধা ঘন্টায় মাত্র ২ বার বলে টাচ করে, সেটা খুব ভালোভাবে নিবে না তারা। আমাদেরকে প্রমাণ করতে হবে, আমাদের টাচের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। এবং মানুষ এটাকেই ফুটবল হিসেবে জানবে। ভেরনার হেলসেন এই বিশ্লেষণগুলো করেছেন যিনি কিনা সেকেন্ড ডিভিশনের একজন কোচ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরও।’

তার সতীর্থ এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা বললেন ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলাতে এবং ভিন্ন ধাচের খেলোয়াড় তৈরি করতে। ৪-৩-৩ ফরমেশনে আসাটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত ছিল। সাবলন একাডেমির পেছনে টাকা ঢাললেন। বেলজিয়াম এর তুবিজে একটা জাতীয় ফুটবল সেন্টার খুললেন। সেখানে ফরমেশন কী হবে, কীভাবে খেলাতে হবে সবকিছু নিয়ে আলোচনা করলেন। ‘আমাদের বসে থাকলে চলবে না। আমরা থামবো না। আমরা সকাল থেকে শুরু করবো এবং রাতে শেষ করবো। প্রত্যেকদিন এটা করতে হবে আমাদের।’

২০০৪ সালে তিনি প্রথম মাস্টার প্লান প্রকাশ্যে আনেন যেটাকে ফ্রেঞ্চ ভাষায় সংক্ষেপে বলা হয় ‘জি-এ-জি’ যার অর্থ গ্লোবাল-এনালিটিক-গ্লোবাল। এটি ফ্রেঞ্চ এবং ডাচ ভাষার সমন্বয়ে গঠিত টেকনিক।

সাবলনের এই ট্যাকটিসের ক্ষেত্রে এনালিটিকের ফ্রেঞ্চ অর্থ মূলত ছিল শারীরিক শক্তি এবং কৌশলগত দক্ষতা। প্রথম গ্লোবালের ডাচ অর্থ ছিল স্বপ্নময় কৌশল এবং দ্বিতীয় গ্লোবালের অর্থ ছিল নতুন ধরণের উত্তেজনাপূর্ণ এবং আক্রমণাত্মক খেলা উপহার দেওয়া। সাবলনের ভাষ্য মতে, তার এই চিন্তাধারা অনেকটা আজগুবি ছিল কিন্তু এই আজগুবি জিনিসটাকে তিনি কাজে লাগিয়ে সাফল্যে পেয়েছেন।

b

অনুশীলনে, জি-এ-জি অর্থ হলো খেলোয়াড়দের মান নির্ধারণ। প্রত্যেক স্কুল, যুব একাডেমি এবং গ্রাম পর্যায়ে ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলানো হতো। যাদের বয়স ৭ বছরের নিচে তারা ২ বনাম ২ ম্যাচ, যাদের ৯ বছরের নিচে তারা ৫ বনাম ৫, যাদের ১১ বছরের নিচে তারা ৮ বনাম ৮ ম্যাচ খেলতো। ১২ বছর হলেই তখন তাদের ১১ বনাম ১১ ম্যাচে নামানো হতো।

মূলত তিনটি ধাপে তিনি সমস্যাটা সমাধান করার চেষ্টা করেন। প্রথম ধাপ হলো, প্রত্যেক দলের একটি করে ক্যাডেট ক্যাটারী থাকবে যাদের বয়স হবে ১৪-১৫ বছর এবং তারা সবসময় ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলবে।

দ্বিতীয় ধাপ, যাকে বলা হয় আলেভিন (১০ থেকে ১১ বছর বয়সীরা) এবং ইনফ্যান্তাইল বা বাচ্চা সুলভ ( ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সীরা)। এই দুই ক্যাটাগরির ছেলেদের প্রধাণ কাছ ছিল কারিগরী যে সামর্থ্য রয়েছে তাদের সেগুলোকে আরো শাণিত করা। আলেভিনরা খেলবে ৫ বনাম ৫ ম্যাচ এবং ইনফ্যান্তাইলরা খেলবে ৭ বনাম ৭ ম্যাচ।

তৃতীয় ধাপ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বেলজিয়াম যারা প্রবাসী হিসেবে বসবাস করে তাদের দিকে নজর দেওয়া হতো। সাবলন সবসময় রাস্তা কিংবা অলি-গলিতে যেসব ফুটবলার ছিল তাদেরকে খুঁজতেন। যাদেরকে পরবর্তীতে সমাজের সবার উপযোগী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতেন সাবলন নিজেই। এই প্রজেক্ট শুরুর আগে হাতে গোনা কয়েকজন ফুটবলার এসেছেন যারা বিদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার।

অপেশাদার কিংবা মাঠ পর্যায়ে এখান থেকে সাফল্য পাওয়াটা খুব সহজ ছিল না। বেশিরভাগ সময়েই যেকোন ম্যাচে তারা অফসাইডের ফাঁদে পড়তো। কিন্তু এটা নিয়ে ভাবেননি সাবলন। ৫-৬ বছরের ব্যবধানে সব কিছু ঠিক করে ফেলেছেন তিনি। ২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিনে, ‘তারা আক্রমণাত্মক খেলতো, তারা হারতো, কিন্তু সেটা আমাদের কোন সমস্যা না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল খেলোয়াড়দের উন্নতি হচ্ছে কি না সেটা দেখা। আমাদের কাছে সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’

b

একদিন ফেডারেশন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে সাবলন বলে বসেন, “আমি প্রেজেন্টেশন শুরু করবো না। সে বললো, ‘কেন?’ আমি বললাম, আমি ক্লাবগুলোকে বলেছি এই ছোট বাচ্চাদেরকে আপনারা র‍্যাংকিংয়ের ভেতর ফেলবেন না। আপনি কি বুঝতে পারছেন এখানে উপস্থিত ৩০০ জনের ভেতর এটা কী রকম প্রভাব ফেলবে? র‍্যাংকিং দেখিয়ে খেলানোটা হচ্ছে সবচেয়ে বাজে। প্রথমে তাদের উন্নতিতে নজর দেন এটাই আমাদের প্রথম কাজ।”

সাবলনের পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও অনেক সাহায্য করেছে বেলজিয়ামের ফুটবল উন্নয়নে। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সরকার এক জরিপে দেখা যায় দেশের ৮টি স্কুলে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের পড়াশুনার পাশাপাশি সপ্তাহে চারদিন দুই ঘন্টা করে সকালে ফুটবল খেলিয়েছে তারা। সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে ফেডারেশনের কোচদের পাঠানো হয় তাদের উন্নতি সাধনের জন্য। পরবর্তীতে তারা সাবলনের প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনুশীলন করতে থাকে।

রোমেলু লুকাকু ২০০৭ সালে বেলজিয়ামের পার্পল ট্যালেন্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে উঠে আসে। পরবর্তিতে সে বেলজিয়ামের এন্ডারলেখট ক্লাবের যুব স্কুলে যোগ দেয়। সেখানে সপ্তাহে তিনদিন এক ঘন্টা করে অনুশীলন করানো হতো। সাবলন লুকাকু সম্পর্কে বলেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিল কিশোর ফুটবলারদের পেছনে আরো বেশি সময় উন্নতির জন্য ব্যয় করা। লুকাকু সম্পর্কেই বলি, আপনারা হয়তো জানবেন আমরা তাকে অনূর্ধ্ব-১৩ পর্যায়ে তুলে নিয়ে আসি। সে ভালো খেলোয়াড় কিন্তু টেকনিক্যালি সে অতো ভালো না। সে শক্তিশালী এবং দ্রুতগতির কিন্তু আমাদের তাকে পালিশ করে আরো চাকচিক্য বানাতে হবে।’

এরপর কাজ শুরু করলো বেলজিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। তারা অঠেল টাকা ঢালতে থাকলো এই প্রজেক্টের ছেলেদের পেছনে। এবং ক্লাবগুলোর পেছনে। স্টান্ডার্ড লিয়েজা নামক বেলজিয়ান এক ক্লাব ১৮ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে একটি একাডেমি বানালেন। টাকার অংকটা খুব বেশি মনে হচ্ছে? তখনকার প্রেক্ষাপটে খুব কমও না। কিন্তু একটা খেলোয়াড় বিক্রি করেই এর বেশি টাকা তখন ইনকাম করেছিল একাডেমিটি। ২০০৮ সালে মারুয়েন ফেলাইনিন এখান থেকে ১৯ মিলিয়ন ইউরোতে ইংলিশ ক্লাব এভারটনে যোগ দিয়েছিলেন। যা খরচ করেছিল এক খেলোয়াড়েই তার বেশি উঠে গেল।

b

এই প্রজেক্টকে আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে উভয় সংকটে পড়ে গেলেন সাবলন। তখন তিনি চিন্তা করলেন, খেলোয়াড় বের হচ্ছে কিন্তু ওই রকম প্রতিভা বের হচ্ছে না। আমাদের প্রতিভা বের করে আনাটা জরুরি। তখন তার প্রজেক্টের ভেতর যেসব বাচ্চারা ছিল এবং নতুন আগত সবাইকে প্রতিভা বিকশিত করার দিকে নজর দিতে বললেন। এতে করে দুইটা কাজ হবে। প্রথমত, বেলজিয়াম ভালো ভালো খেলোয়াড় পাবে এবং দ্বিতীয়ত, তারা ভালো খেলোয়াড়দের বিদেশি ক্লাবের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে লাভবানও হতে পারবে।

ডাচ লিগ, ফ্রেঞ্চ লিগ এবং ইংলিশ লিগ তরুণ এবং উদীয়মান খেলোয়াড়দের দিকে বেশি নজর দিয়ে থাকে। সাবলনের এই প্রজেক্টের মাধ্যেম উঠে আসা এডিন হাজার্ড মাত্র ১৪ বছর বয়স ফ্রেঞ্চ ক্লাব লিলেতে যোগ দেন। ইয়ান ভার্টঙ্ঘেন ১৬ বছর বয়সে ডাচ ক্লাব আয়াক্সে যোগ দেন।

বেলজিয়াম তরুণ প্রতিভায় ভরপুর হয়ে উঠলো। এমনকি বিদেশি বংশোদ্ভূত বেলজিয়াম যেমন লুকাকু, কম্পানি (কঙ্গো), ফেলাইনি, চ্যাডলি (মরক্কো), কারাসকোর (স্প্যানিশ) মতো প্রতিভাবান ফুটবলাররা বের হয়ে আসলো।

প্রতিভা বের হলেই তো হবে না, সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। ২০১০ বিশ্বকাপে বাছাইপর্বই উৎরাতে পারলো না তরুণ বেলজিয়াম দলটি। ২০১২ সালের ইউরোতেও অংশ নিতে পারেনি তারা। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে দীর্ঘ ১২ বছর পর সুযোগ পায়। কিন্তু মার্ক উইলমটের অধীনে কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নেয়। ২০১৬ ইউরো কাপেও ওয়েলসের কাছে হেরে কোয়ার্টার থেকে বিদায় নিয়েছিল বেলজিয়াম।

b

মার্ক উইলমটের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। তিনি ছিলেন বেলজিয়াম দলের প্রধান প্রেরণা জোগানদাতা। দলকে হয়তো ভালো কিছু উপহার দিতে পারেননি কিন্তু সব খেলোয়াড়দের মাঝে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তিনি।

উইলমটের বিদায়ে দায়িত্ব আসে তরুণ কোচ রবার্তো মার্টিনেজের কাঁধে। দায়িত্ব নিয়েই সহকারী কোচ হিসেবে নিয়ে আসেন ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তী থিয়েরি অরিকে। মার্টিনেজের কোচ হয়ে আসার পরের প্রথম কথাই ছিল, ‘জেতার মানসিকতা থাকতে হবে, শৃঙ্খলাবোধ থাকতে হবে, বল ছাড়াও প্রবল দৌড়াতে হবে।’

অরি এসে দলের স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকুকেই যেন পাল্টে দিয়েছেন। অরির আগে ৫১ ম্যাচে মাত্র ১৭টি গোল করেছিলেন এই ম্যান ইউ তারকা। আর অরি থাকাকালীন ২২ ম্যাচে করেছেন ২৩ গোল! ভাবা যায়? বলের সঙ্গে কীভাবে দৌড়াতে হবে, কীভাবে কোন মুভটা করলে ডিফেন্ডাররা ভরকে যাবে সব অরির থেকেই পেয়েছেন এই স্ট্রাইকার।

যদি রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে বেলজিয়াম নাও খেলে তবুও তাদের এই ‘প্রজেক্ট বেলজিয়াম’ যেকোন দেশের জন্যেই অনুকরণীয়। জুলাইয়ের ১৫ তারিখেই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। সেদিন হয়তো বিশ্ব ফুটবলের সেরা পরাশক্তিদের কাতারে বিজয়ীর বেশেই দেখা যাবে বেলজিয়ামকে।