সাইফুল ইসলাম বাবুল

ভয়ংকর কিছু অভিজ্ঞতা জীবনে প্রথম। বান্দরবান শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হল থানচির বড় পাথর । যাওয়ার সময় কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। পেকুয়া উপজেলার কর্মরত সাংবাদিকরা ৮ মার্চ ২০১৭ সালের বুধবার দিনটির কথা কোনদিন ভূলবেনা।

পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ  রাজু এবং প্রথম আলোর চকরিয়া-পেকুয়ার প্রতিনিধি শেখ মো: হানিফের নেতৃত্বে ২টি চাঁদের গাড়ি নিয়ে সকাল ৮টায়  পেকুয়া থেকে আলিকদমের উদ্দেশ্যে রওনা হই। সেখান থেকে থানচি যাই অভিযাত্রী দল।

ছোট ছোট পাঁচটি নৌকা ভাড়া করে থানচি থেকে বড় পাথরের উদ্দেশে রওনা হই। প্রখর রৌদের মাঝেও গান গেয়ে কে কাকে হারাবে কিংবা কাদের নৌকা আগে যাবে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। কিছু দূর গিয়েই নৌকা থেকে নামতে হলো নৌকা ঠেলা দেবার জন্য। সাংগু নদীতে বেশি পানি নেই বলে একবার নৌকা ঠেলতে নামতে হলো। প্রায় দেড় ঘণ্টা স্রোতের বিপরীতে সংগ্রাম করার পর কাংক্ষিত স্থানে পৌঁছলাম।

পাহাড়ী নদীর বুকে বড় বড় পাথর দুই পাশে উচু পাহাড়। এক পাহাড়ের আবার খাড়া কিয়দাংশ নেই, অথা’ৎ ঐ পাহাড়ের শক্ত মাটি দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছিল যে, কোন এক অতীত কালে  পাহাড়টি ভরাট ছিল। এবং  পাহাড়েরটি কিছু অংশ নদীর বুকে পড়েছিল। সেই ভেঙে পড়া অংশ কালক্রমে শক্ত পাথরে রুপ নিয়েছে। আনন্দ ভ্রমন উৎসবমুখর পরিবেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি পর্যটন নগরী বান্দরবনে থানচি বড় পাথররে অনুষ্ঠিত হয়েছে আনন্দ হই হুল্লোড়ে পেকুয়ার সাংবাদিকদের মিলন মেলা।

জীবনে কোনদিন যাইনি লামা ,আলিকদম, বান্দরবন। উপজেলা চেয়ারম্যান রাজু ভাইেয়র সাহসী উাদ্যাগে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান থানচি বড় পাথর দেখার সৌভাগ্য হল আমার। এমন একটি জায়গা  দেখে প্রথমেই আমার মনে হয় আকাশের নীল আঁচল ছড়িয়ে দিয়েছে সবুজের জমিনে। ঝর্ণা, পাহাড় আর গুহার রাণী প্রকৃতি অকৃপণ হাতে ঢেলে সাজিয়েছে এই বান্দরবানকে। যেখানে হাত বাড়ালেই মেঘ ছুঁয়ে যায়।

 সবুজ শ্যামল এই বাংলাদেশের বেশিরভাগ সৌন্দর্য মন্ডিত স্থান রয়েছে পার্বত্য জেলায়। তার মধ্যে বান্দরবানের থানচি।  দেখতে পেলাম বড় বড় পাথর সাংগু নদীর মুখে দানবের মতো বসে আছে। দেখে মনে হলো, সাংগু নদী যেন বড় পাথরের আস্তানা বসিয়েছে। বড় পাথর গুলো জলের স্রোতেও দানবের মতো দাঁড়িয়ে আছে। পাথরের আকার আকৃতি সত্যিই বিস্ময়কর। দেখে মনে হয় যেন কোন শিল্পী কারুকার্য করে রেখে দিয়েছে। রাজা পাথর বলে পরিচিত পাথরকে কাছ থেকেই দেখলাম।

ভ্রমন পিপাসুদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। অপরূপ সৌন্দর্যের দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই। তবে    সেসবের মধ্যে যে স্থানটি সবার হৃদয়ে স্থান করেছে সেটি হলো তিন্দুর বড় পাথর। ঝর্ণার পানিতে বয়ে চলা নদীর মধ্যেই বিশাল বিশাল পাথর যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে । তার মধ্য দিয়ে নৌকায় করে যাওয়ার সময় যে অনুভূতি জাগে তা ভোলার নয়।দেশের মধ্যে এত অপরূপ দৃশ্য রয়েছে তা হয়তো অনেকেই জানেনা।বড় পাথর যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের মধ্যে দিদার,  ফারুক, ছিদ্দিক,ছগিরর, রিয়াজ এফ এম সুমনের মতন  আমার মনেও আহাজারি নদীর পাড়ে পাহাড়ী ঘরে থাকার ইচ্ছা ।

নদীর পাড়ে  ঘর দেখে এই ইচ্ছা যেন আকাশ ছুয়ে গেল। দেড়ঘন্টা পর বড় পাথরে নৌকা ভিড়ল। নৌকার মাঝি বলল এরমধ্য বড় পাথর দুইটি রাজা পাথর নামে পরিচিত।তখন শেষ বিকেলের আভা পাহাড়ে-পাহাড়ে ও নদীতে খেলা করছে। প্রকৃতি যেন মনে হচ্ছে বিয়ের আসরে সেজে গুজে থাকা কোন রুপবতী কনের লালচে আভাযুক্ত গাল। আমি তো তখন পুরা উদাস।সহযাত্রীদের নিষেধ উপেক্ষা করে আমার থেকে ডাবল খাড়া উচু এক পাথর(রাজা পাথর) অতি কস্টে উঠলাম। উঠেই একবার আল্লাহকে শুকরিয়া জানালাম, কারন পিছলে পড়লে নদীর ঐ জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথরে আমার মাথা ফিনিস।

হেঁটে হেঁটে রাজা পাথরের রাজ্যে ঘুরে বেড়ালাম। ঘুরতে ঘুরতে দদেখতে পেলাম শিমুল ফুল পাথরের ওপর শুকানো হচ্ছে। প্রশ্ন করে জানতে পারলাম, এগুলো তারা খায়। পাথরের ওপর বসে দেখলাম অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাহাড়-পাথর, সাংগু নদীতে নৌকায় ভ্রমণ, ঝর্ণার কলতান আর রাজু ভাইয়ের বাড়ি থেকে তৈরি করা কলা পাতা মোড়ানো বিন্নি ভাত (দুপুরের খাবার) খেয়ে সবাইকেই মুগ্ধ করেছে।

রওয়ানা দেই থানচির বাজারের উদ্দেশ্যে। ফেলে আসি সাংগু নদীর স্বচ্ছ পানি, থানচির পাহাড় আর পাথর। পেকুয়ার সকল সাংবাদিকের সাথে ছিল আলি কদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম ভাই । রাজু ভাইকে হাজারো ধন্যবাদ সাথে আলিকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম ভাইকে ও।