প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

অবশেষে জাতীয় আদলে শহীদ মিনারের স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে রামুবাসীর। ঢাকা জাতীয় ও কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সাথে সংগতি রেখে নতুন শহীদ মিনার নির্মানের জন্য রামুর বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছিল। আজ সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে চলছে। সম্প্রতি নতুন শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন, জাতীয় সংসদের তথ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল। এ সময় রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লুৎফুর রহমান, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমলের বিশেষ অনুদান ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের বিশেষ বরাদ্দে শহীদ মিনারের বাস্তবায়ন করছে রামু উপজেলা প্রশাসন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, বিগত বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে রামু উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এ শহীদ মিনারটিতে শহীদ মিনারের প্রকৃত ভাবগাম্ভীর্য ফুটে না ওঠায় বিভিন্ন মহলে শহীদ মিনারটি নিয়ে বিতর্ক চলছিল। এমনকি রামুর শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহল থেকে এটি ভেঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে নির্মাণের দাবি ওঠে। বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটি ও সমন্বয় সভায় পুরনো শহীদ মিনার ভেঙ্গে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্বান্ত নেয় রামু উপজেলা প্রশাসন। অবশেষে রামু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শুরু হলো।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ লুৎফুর রহমান জানান, রামুবাসীর প্রাণের দাবি ছিলো রামু উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে জাতীয় আদলে একটি শহীদ মিনার নির্মানের। এ দাবির প্রেক্ষিতে আমরা কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় পুরনো শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে নতুন করে করার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি নির্মাণের জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের বিশেষ বরাদ্দ থেকে আটলাখ টাকা অনুদান পাওয়া গেছে। এ বরাদ্দ দিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে কাজ সম্পন্ন করতে সংসদ সদস্য মহোদয় ও জেলা পরিষদ থেকে আরো বরাদ্দ পাওয়ার আশ্বাস রয়েছে।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম বলেন, শহীদ মিনার মানেই বিন¤্র শ্রদ্ধায় মাথানত হয়ে আসা। কিন্তু উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে গত বিএনপি সরকারের আমলে যে শহীদ মিনারটি নির্মান করা হয়, এটি শহীদ মিনার হিসাবে চিনতেও মানুষ ভুল করে। কারণ এখানে শহীদ মিনারের যথাযথ ভাবগার্ম্ভীয ফুটে উঠেনি। তাই এ শহীদ মিনার নিয়ে বিতর্কের শেষ ছিলো না। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলের প্রাণের দাবি ছিলো জাতীয় আদলে শহীদ মিনার নির্মানের। তাই ঢাকা জাতীয় শহীদ মিনার এবং কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

গত শনিবার (৪ আগষ্ট) সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বর্তমান শহীদ মিনারটি যেখানে আছে, এর আরো একটু পশ্চিমে পূর্বমুখী করে নতুন শহীদ মিনারটি নির্মান করা হচ্ছে। ফলে যে কোনো জাতীয় দিবস বা অনুষ্ঠানে শহীদ মিনারসহ পুরোমাঠ ব্যবহার করা যাবে। পরিদর্শনকালে ইতিহাস বিকৃতির কথা বলে সমস্বর নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া বলেন, শহীদ মিনার বাংলা ভাষা, স্বাধীনতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ সর্বোপরি বাঙালির জাতীয় পরিচিতির প্রতীক। সারাদেশে এ প্রতীক অবশ্যই এক ও অভিন্ন হওয়া উচিত, ঢাকার জাতীয় শহীদ মিনারের মত। তবে স্থান অনুসারে ছোট-বড় হতে পারে। নয়তো নতুন প্রজন্মের কাছে অভিন্ন জাতীয়তাবোধ ও জাতীয় পরিচিতি বিকৃতরূপে দেখা দেবে। সত্যি বলতে কি, রামু উপজেলা পরিষদের শহীদ মিনারটি স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট একটি বিকৃত শহীদ মিনার। আমরা অনেক আগে থেকেই এটি ভেঙে নতুন করে গড়ার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। দীর্ঘদিন পর হলেও ঢাকার জাতীয় শহীদ মিনারের আদলে রামুতে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লুৎফুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই।

রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক তপন মল্লিক বলেন, মনগড়া একটি নকশা করে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। বাংলাদেশ ছাড়াও ইংল্যান্ড, কানাডা, জাপান, ফ্রান্স, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তৈরী শহীদ মিনার আমাদের ঢাকার জাতীয় শহীদ মিনারের আদলে তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু রামু উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে তৈরী শহীদ মিনারটির ঢাকার জাতীয় শহীদ মিনারের সাথে সামান্যতমও মিল নাই। শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি ও ইতিহাস আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিদ্যালয়ের বইয়ের মাঝে খুঁজে পায়। তিনি জানান, এ শহীদ মিনারটি তৎকালিন বিএনপি’র সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মো. শহীদুজ্জামান নিজের খেয়াল খুশিমত নির্মাণ করিয়েছেন। ওই সময় থেকেই আমরা এর পরিবর্তন করে ঢাকার জাতীয় শহীদ মিনারের আদলে নির্মাণ করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। মুলতঃ ইতিহাস বিকৃতির অংশ হিসেবেই বিএনপি সরকার রামুতে এ শহীদ মিনারটি নির্মাণ করে ছিলেন।