টেকনাফ সংবাদদাতা:
মিয়ানমারের বিদ্রোহী নেতা আবদুল হাকিম প্রকাশ হাকিম ডাকাত এখন অনেকটা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। চাঁদা দাবী করছে স্থানীয়দের কাছ থেকে। অন্যথায় মেরে ফেলার হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন আতœগোপনে থাকা হাকিম ডাকাতের প্রকাশ্যে বিচরণের খবরে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। -অভিযোগ স্থানীয় সুত্রের।
সুত্র জানিয়েছে, হাকিম ডাকাত পাহাড়ের গোপন আস্তানা থেকে টেকনাফের বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দিয়েছে। ‘খেয়ে দেয়ে’ নিতে বলেছে। এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে নতুন করে আতংক তৈরী হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের ভাষ্য, হাকিম ডাকাতের কোন অবস্থানের বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারেনি। হুমকির বিষয়টিও তাদের জানা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, টেকনাফের পুরান পল্লানপাড়া পাহাড়ে আস্তানা গড়েছে হাকিম ডাকাত। কয়েক হাজার একর পাহাড় দখল করে সেখানে রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়, অস্ত্র প্রশিক্ষণসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা সে করেনা। হাকিম ডাকাতের রয়েছে নিজস্ব অস্ত্রধারী চৌকস ফোর্স। সৃষ্টি করেছে নিজস্ব বাহিনী, কর টেক্স আদায়কারী ও সমন্বয়ক। তার বাহিনীর কাছে জিম্মি টেকনাফের মানুষগুলো। প্রশাসনও তার সঠিক কোন তথ্য পাচ্ছেনা। পাহাড়ের এই রাজার কাছে অনেকটা ‘অসহায়’ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তার কারণে এলাকা ছাড়া হয়েছে শত শত পরিবার। ঝরেছে অনেক তাজা প্রাণ। হাকিম ডাকাতের অন্যতম সহযোগি হিসেবে রয়েছে আপন সহোদর নজির আহমদ, কবির আহমদ, বশির আহমদ। এরা সবাই মিয়ানমারের মংডু জেলাধীন দক্ষিণ বড়ছরা এলাকার বাসিন্দা জানে আলম ওরফে আবদুল জলিলের ছেলে। এই বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়েছে পল্লানপাড়ার সুলতানের ছেলে পাগলা ইউনুছ। স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ডাকাত বাহিনী কিছুদিন ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকলেও গত ২৫ আগস্টের পর নতুন করে রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গে সঙ্গে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠে।
স্থানীয়রা বলছে, ক্ষমতাধর কয়েক নেতার ছয়ছায়ায় আবদুল হাকিম ডাকাতের নেতৃত্বে পাহাড়ে অবস্থান করে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। পুরান পল্লানপাড়া, জাহালিয়াপাড়া, বাহারছড়া, লেদা নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকার লোকজন তাদেরকে সহযোগিতা করে।
জানা গেছে, মাত্র ৮ বছর আগে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ উপজেলার শাহপরীরদ্বীপে চলে আসে আবদুল হাকিম ডাকাত। এর কয়েক বছর পর ৫ ভাই বশির আহমদ, কবির আহমদ, নজির আহমদ, হামিদ হোছনকে নিয়ে আসে এপারে। এরপর আবদুল হাকিমের নেতৃত্বে সাগরও নদীতে ডাকাতি শুরু করে। এ ঘটনা শাহপরীরদ্বীপের জানাজানি হয়ে গেলে ৬ ভাই টেকনাফে এসে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। এর মধ্যে ডাকাত আবদুল হাকিম যোগ দেন ‘আল অ্যাকিন’ নামক রোহিঙ্গা বিদ্রোহী জঙ্গি সংগঠনে। এ সংগঠনের সামরিক প্রধান প্রশিক্ষণ দায়িত্ব নিয়ে উপজেলা সংলগ্ন পুরান পল্লানপাড়ার জহির আহমদের মেয়েকে বিয়ে করে টেকনাফ বন রেঞ্জের উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের উত্তর-পশ্চিম দিকের আনুমানিক এক কিলোমিটার পর্যন্ত বনভূমি দখল করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিনিয়ত ডাকাতি, চাঁদাদাবী, চাঁদা না দিলে অপহরণ করে। খুনের পর গুম করার ঘটনাও রয়েছে।
আবদুল লতিফের ছেলে নুরুল কবির, সিএনজি ড্রাইভার মো: আলী হত্যা, মুন্ডি সেলিম, নতুন পল্লানপাড়ার সিরাজ মেম্বার হত্যা, আবদুল হাফিজ ও তোফায়েল হত্যাসহ অহরহ ঘটনার জন্ম দেয় আবদুল হাকিম ডাকাত। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
থানা সুত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, হাকিম ডাকাতের বিরুদ্ধে ডজনাধিক মামলা রয়েছে। সেখানে উল্লেখযোগ্য হলো- টেকনাফ মডেল থানার মামলা নং-১০/১৬ (তারিখ-৫/৭/১৬ইং), মামলা নং-৪৩/১৬ (তারিখ ১৯-০৬-১৬ইং), মামলা নং- ৪৪/১৬ (তারিখ ১৯/০৬/১৬ইং), মামলা নং- ৪৬/১৬ (তারিখ ২০-০৭-১৬ইং), মামলা নং- ৪৭/১৬ (তারিখ ২০-০৭-১৬ইং), জিআর মামলা নং-৪১৫/১৫ (তারিখ ১২/০৬/১৫ইং),অপহরণ মামলা সিআর ৯৪/২০১৭ইং। এছাড়া টেকনাফ মডেল থানায় অপর একটি বৈদেশিক নাগরিক আইন, মাদক মামলা রয়েছে ।
সচেতন মহলের প্রশ্ন, রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিমের বিরুদ্ধে আনসার ক্যাম্পে অস্ত্র লুট ও আনসার হত্যার অভিযোগ ও অর্ধডজন মামলা থাকার পরও তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছেনা?
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, আবদুল হাকিম ডাকাতের অত্যাচারে পুরান পল্লানপাড়া ও নাইট্যংপাড়ার মানুষ নিরাপদ নয়। সে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও ধরা পড়ছেনা কেন? তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানান এই জনপ্রতিনিধি।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া বলেন, স্থানীয় এক জনপ্রনিধিকে হাকিম ডাকাত পরিচয়ে ফোন করলে আমরা ‘ট্রেকিং’ করে দেখি, সেরকম কোন তথ্য মেলেনি। হাকিম ডাকাত ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামী। তার ব্যাপারে প্রশাসন খুবই এলার্ট।
শুধু হাকিম ডাকাত নয়, তার কোন সহযোগির খোঁজ পেলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি রনজিত।