হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা থেকে ফিরে :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সাক্ষী এই বাড়ি। এই বাড়ি বঙ্গবন্ধুর। ৩২ নম্বরের বাড়িটি হলো বাংলাদেশ সৃষ্টির সূতিকাগার। বাড়িটিকে ক্ষুদ্র সংস্করণের বাংলাদেশও বলা যায়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বাড়িটি তীর্থস্থান হিসেবেই বিবেচিত হবে। কেউ যদি বলেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যাই, তাহলে বুঝতে হবে তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে যাচ্ছেন। আর বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়া মানেই বাংলাদেশের কাছে যাওয়া। ৬০ এর দশক থেকে বাড়িটি একটি প্রতীক হয়ে আছে। আর সে প্রতীক হচ্ছে সাহস, দৃঢ়তা ও বিদ্রোহের।
এই বাড়িকে অবলম্বন করেই স্বাধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত। আর এ বাড়ি থেকেই তিনি দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা। সারাদেশের মানুষ প্রতিটি রাজনৈতিক নির্দেশনার জন্য তাকিয়ে থাকত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের এই বাড়িটির দিকে। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচন পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনের সময় এই ৩২ নম্বরের সামনে ভিড় জমে যেত। সবাই নেতার নির্দেশের অপেক্ষায় প্রহর গুনতেন। কখন বঙ্গবন্ধু তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন- সেই প্রত্যাশায় দিন কাটতো মুক্তিপাগল বাঙালির। যেন বাঙালির প্রাণভোমরা এইখানে, এই বাড়িতে। বাঙালির প্রাণের, প্রেরণার উৎস যে এই বাড়িটি তা খুব ভাল বুঝেছিল স্বাধীনতার শত্রুরা। তাই ’৭৫ এ এই বাড়িতেই হামলা করে তারা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। শিশু রাসেলও রক্ষা পায়নি ঘাতকদের হাত থেকে। তারা জানতো বঙ্গবন্ধুর পরিবারের একজন সদস্য বেঁচে থাকলে তাদের চক্রান্ত ভেস্তে যাবে। গেছেও। অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। কিন্তু সেই চক্রান্তকারীদের বিচার হয়েছে।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ বারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই বাড়িটির সবচেয়ে বড় গুরুত্ব হচ্ছে ১৯৭১ সালে। তখনকার অসহযোগ আন্দোলন এ বাড়িকে ঘিরেই পরিচালিত হচ্ছিল। ৩২ নম্বরের বাড়িটি জাতির স্পন্দনের কেন্দ্রে ছিল। পরে বঙ্গবন্ধু এই বাড়িতেই নিহত হন। সেটা আরেক স্মৃতি। বঙ্গবন্ধুর বাড়িটিকে ৩২ নম্বর যাতে না বলা যায় সে জন্য বাড়ির নম্বর বদলে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু ৩২ নম্বর বললে মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাড়িকেই বুঝে। মানুষ বঙ্গবন্ধুকেই মনে রেখেছে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না, সেটা বোঝা দরকার।
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। ধানমন্ডির লেক সার্কাসের পাশে ৩২ নম্বর গেলেই দেখা মিলবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। এই বাড়িতেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সপরিবারে ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
সড়ক-৩২, বাড়ি নম্বর-৬৭৭ আর নতুন ঠিকানা অনুযায়ী ধানমন্ডির সড়ক নম্বর ১১ আর বাড়ি নম্বর ১০। বাংলাদেশের মানুষের কাছে বাড়ির পরিচয় ৩২ নম্বরের বাড়ি। ধানমন্ডির এই বাড়ি বাঙালির আশা-আকাক্ষা ও দ্রোহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। এখন সেই বাড়িটি বাঙালির তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। অর্জন করেছে অমরত্ব। এই বাড়ি সম্পর্কে জানলে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস জানা হয়ে যায়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।