সায়ীদ আলমগীর, জাগো নিউজ, কক্সবাজারঃ
কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্য তিন পুষ্করিণী লালদিঘী, গোলদিঘী ও বাজারঘাটা (নাপিতাপুকুর) পুকুরটি পর্যটন কেন্দ্র করার উদ্যোগ চলছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের বেহাল চিত্র বদলে আধুনিকায়নকরণের উদ্যোগ হিসেবে পুকুরগুলোকে পর্যটনবান্ধব করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। এটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ।
তিনি বলেছেন, কক্সবাজারকে একটি পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়তেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছেন। সে মতেই উদ্যোগ নিয়ে হাঁটছে কউক। ইতোমধ্যে সৈকত এলাকা ও পুরো শহরে বিকল্প সড়কসহ নানা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এরমাঝে সৈকতের লাবণী রাস্তার মাথায় রূপচাঁদা ঝর্ণা, শরণার্থী ত্রাণ ভবন মোড়ে চাম্পান ঝর্ণা ও বিমানবন্দর রাস্তার মাথায় তারামাছ ও শামুক ঝর্ণার নান্দনিকতা উপভোগ করছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। অত্যাধুনিক বাতি লাগিয়ে রাতের বেলা আলোকিত করা হয়েছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এসবের সঙ্গেই যোগ হয়েছে শহরের ঐতিহ্য তিন পুষ্করিণী দৃষ্টিনন্দন করে পর্যটন কেন্দ্র করার প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে কক্সবাজার শহরের চিত্র।
কউক সূত্র মতে, কক্সবাজার শহরের লালদিঘী, গোলদিঘী ও বাজারঘাটার নাপিতা পুকুর পুনঃখননসহ ভৌত সুযোগ সুবিধার উন্নয়ন ঘটিয়ে আধুনিকায়ন করা হবে। প্রকল্পে রয়েছে, সবুজ বেষ্টনী, সাইকেল স্ট্যান্ড, পুকুরের পাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ, আলোকসজ্জা, বিদ্যুতায়ন এবং পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। ৩৬ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় নির্ধারত করে ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে প্রকল্প তিনটির কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জুনের দিকে প্রকল্প তিনটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের কাজ শুরু করার লক্ষ্যে কউক চেয়াম্যান ফোরকান আহমদ ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদের নিয়ে গত ১২ মার্চ সরজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় ও পর্যটকরা কী কী সুবিধা পেতে পারেন তা চিত্রপ্রদশর্নীর মাধ্যমে তুলে ধরেন কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পগুলোর পরিচালক ও কউক সদস্য লে. কর্নেল মোহাম্মদ আনোয়ার উল ইসলাম বলেন, দিঘী তিনটির আশপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও দিঘী তিনটির আধুনিকায়নের স্বার্থে সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করেই কাজ শুরু করা হবে।
কিন্তু অসমর্থিত একটি সূত্র বলছে, লালদিঘীর পূর্ব ও পশ্চিমপারে দুটি মসজিদ, দক্ষিণপারে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ছাত্র ইউনিয়ন অফিসসহ একাধিক স্থাপনার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল আনোয়ার বলেন, মসজিদ ও রাজনৈতিক দলের অফিসগুলো সমঝোতার মাধ্যমে অন্যত্র সরিয়ে নিতে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। এসব সৌন্দর্যবর্ধন রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, তাই শহরের উন্নয়নে সবাই সহযোগিতা করবেন বলে আশা করেন তিনি।
কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, কক্সবাজারকে সাজাতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দায়িত্বের তিন বছর পার করছি। প্রথম বছর পুরো জেলার সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো শনাক্ত করেছি। ২য় বছরে এগুলোর প্রকল্প তৈরি ও একনেকে অনুমোদনের জন্য সম্ভাব্য বাজেট চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে এবং কিছু কিছু প্রকল্প পাসও হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে আসার পর অনুমোদন ও বাজেট পাওয়া প্রকল্পগুলোর কিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। চলমান প্রকল্পের মাঝে রয়েছে কউকের বহুতল ভবন। আর তিন পুষ্করিণী আধুনিকায়ন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।