সিবিএন ডেস্ক:
কক্সবাজারের অবশিষ্ট সবুজ পাহাড় রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে, এমনকি সংরক্ষিত বনাঞ্চলও। একের পর এক পাহাড় এবং টিলা (উপগিরি) এলাকায় আবাসন কিংবা বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বরাদ্দ নেয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। পিডিবির আবাসন প্রকল্পের পর এবার কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের ঝিলংজা মৌজার শুকনাছড়ির সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৭০০ একর বিশাল পাহাড়ে ‘সিভিল সার্ভিস অ্যাকাডেমি’ গড়ে তোলার নাম দিয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কক্সবাজার থেকে প্রস্তাবনা তৈরি করে তা ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রস্তাবনাটি পাওয়ার পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিবেশ ও বন বিভাগের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। শুকানাছড়ির বনাঞ্চলের অবস্থান কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দক্ষিণে। মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে টেকনাফ যাওয়ার সময় কলাতলি পার হলে এই বিশাল পাহাড় চোখে পড়ে। মেরিন ড্রাইভ সড়কের একদিকে সমুদ্র অন্য দিকে পাহাড় দেখার সুযোগ একমাত্র এখানেই রয়েছে। বন মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালে শুকনাছড়ি বনাঞ্চলকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন (ইসিএ) এলাকা ঘোষণা করে এতে কোনো প্রকার স্থাপনা গড়ে তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উক্ত বনাঞ্চলে এক সময় বাঘের আনাগোনা ছিল। ছিল হরিণও। হরিণ এখনো মাঝেমধ্যে দেখা যায়। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) জরিপ মতে, শুকনাছড়ির বনাঞ্চলে রয়েছে ১২ প্রজাতির গাছ ও গুল্ম, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বানর, বন্য শুকর, অজগরসহ নানা ধরনের সাপ এবং পাখির অভয়াররণ্য। বিপন্ন প্রজাতির হাতিও এই বনাঞ্চলে গমনাগমন করে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র মতে, বেশ কিছুদিন আগে থেকে ওই বনাঞ্চলে প্রস্তাবিত অ্যাকাডেমির নামে সাইনবোর্ডও টাঙ্গানো হয়েছে।
সূত্র মতে, ২০১৮ সালের শেষের দিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা তৈরি করে পাঠিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিএস ক্যাডারদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য ভূমি বরাদ্দের প্রস্তাবনাটি পাঠানো হলেও তা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে কক্সবাজারে বনাঞ্চল ধ্বংস করে বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে তোলার বিরোধিতা করে আসছে। ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস)-এর প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুন বলেন, উক্ত এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হলে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এ ছাড়া নয়নাভিরাম এই বনাঞ্চল কক্সবাজার তথা বাংলাদেশের পর্যটনেরও একটা বড় সম্পদ। এটিকে কোনোভাবে নষ্ট করা অবিবেচকের কাজ হবে। কক্সবাজার দক্ষিণ বনাঞ্চলে ৬ হাজার একরেরও অধিক বনভূমি ইতোমধ্যেই ধ্বংস করা হয়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিতে গিয়ে। এ কারণে কক্সবাজারে জীববৈচিত্র্য একেবারে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ওইসব এলাকায় হাতি মানুষে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। হাতি চলাচল ও বিচরণের ভূমি হওয়ার কারণে এ পর্যন্ত ২৫ রোহিঙ্গা নারী ও শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া আবাস্থল ধ্বংস হওয়ায় কয়েক শ’ পাকপাখালি ও বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির পথে রয়েছে। উল্লেখ্য, গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কক্সবাজারে ঝিলংজা মৌজায় পাহাড় ও উপ পাহাড়ে বিদ্যুৎ বিভাগের (পিডিবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন। হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে এই আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। এতে সবুজপাহাড় আপাতত রক্ষা পেয়েছে তার চেহারা পরিবর্তনের অপচেষ্টা থেকে। এই প্রসঙ্গে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কক্সবাজার জেলার ১৭৫ একরের উক্ত পাহাড়টি একমাত্র অক্ষত পাহাড়। পিডিবি তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য আইন ভেঙে অক্ষত এ পাহাড়ের চার একর জায়গা অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল। আপিল বিভাগের আদেশের ফলে পাহাড়টি রক্ষা পেয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।