– অধ্যাপক আকতার চৌধুরী
(৬ষ্ঠ-পর্ব)
তাওয়াফ শুরুর আগে ক্বা’বা ঘরের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে ৪টি কর্ণার যথা- হাজরে আসওয়াদ , রুকনে শামি , রুকনে ইরাকি ও রুকনে ইয়ামেনি কর্ণার । এ ছাড়াও আরো ৩টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হাতিম বা অর্ধ চন্দ্রাকৃতির স্থাপনা , কাবাঘরের দরজা এবং মকামে ইব্রাহিম। জমজম কূপে প্রবেশের জায়গাটা এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন পয়েন্টে পবিত্র জমজমের পানি পানের সুব্যবস্থা করা হয়েছে।
ওমরাহ ও হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাওয়াফ। ১ তাওয়াফ মানে ৭টি চক্কর। আবার প্রথম ৩টি চক্করকে রমল বলে । মানে বীরত্ব ভাব দেখিয়ে দ্রুত হাটা । তবে বীরত্ব ভাব দেখিয়ে কাউকে জোর পূর্বক ঠেলে , মাড়িয়ে হাটা নয় । শুধূ ভাব নেয়া । পরের ৪টি চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাটতে হয় ।
তাওয়াফকালীন কিছু বিষয় আগে থেকে জানা থাকলে ভাল হয় । এর মধ্যে একটি একটি বাক্য বেশী শুনবেন। যেমন , হয়তো কেউ বলছে ‘শোআইয়া শোআইয়া’- তখন আপনি যদি শোয়ে যান তো খবর আছে । তার মানেটা হল – একটু আস্তে আস্তে চলুন। অনেকে আছে গায়ের জোর খাটিয়ে তাওয়াফ করতে চান। এদের মধ্যে কাল চামড়ার লোকগুলো অন্যতম। এছাড়াও কোন গ্রুপ হয়ে যদি তাওয়াফ করতে দেখেন তাদেরকেও এভয়েড করে হাটা উচিত। ওরা আপনাকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে বাধাগ্রস্ত করবে। মাঝখানে ঢুকতে দেবে না। আবার কাউকে দেখবেন স্রোতের বিপরীতে হাটতে । এরাই বেশী বাধাগ্রস্ত করে। হয়তো তাদের ৭টি চক্কর শেষ হয়েছে । বের হয়ে যেতে হচ্ছে । তাই বলে স্রোতের বিপরীতে হাটতে যাবেন না। সব সময় আপনার ডানে চলতে চলতে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন।
প্রখর রোদে তাওয়াফ করলে দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে তাই সন্ধ্যার পর বা রাতে তাওয়াফ করা ভাল। তাওয়াফের সময় অনেক বেশী ধৈর্য্য বা সহনশীল হতে হয় । কাউকে কটু কথা বলতে নেই । অপরকে কষ্ট দেয়া যাবে না।
আমরা নামাজ পড়ার সময় সামনে দিয়ে কেউ হাটাচলা করলে রেগে যাই বা নিষেধ করি। কিন্তু ক্বা’বা শরীফে দেখবেন নামাজ পড়ার সময় আপনি সেজদার জায়গাও পাচ্ছেন না । এটাকেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হবে। হাতে সরিয়ে দিয়ে সেজদা দিতে হবে , সালাত আদায় করতে হবে। রাগারাগি করা চলবে না।
তাওয়াফের অনেক নিয়মকানুন বের হয়েছে । আলেমগণ অনেক মত ও পথের কথা বলেছেন । ৭টি চক্করের জন্য ৭টি নিয়তের কথাও বলা হয়েছে। কোন চক্করে কি কি দোয়া করবেন তাও অনেকে অনেকভাবে বর্ণনা করেছেন। আমি মনে করি, এত মত ও পথে না গিয়ে মৌলিক নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত। তাওয়াফ যেন সঠিক হয় সে জন্য তাওয়াফের নিয়ম-কানুন জানা জরুরি।
১. পবিত্র কাবা শরিফের যে কোনায় হাজরে আসওয়াদ স্থাপিত, সেই কোনা থেকে তাওয়াফের বৃত্তাকৃতির জায়গার ওপর দিয়ে মসজিদে হারামের দিকে একটা দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়া আছে সে বরাবর দাগের ওপর দাঁড়ানো। অথবা দাগ খুজে না পেলে সবুজ লাইট কোন জায়গায় আছে তা দেখে সেখান থেকে তাওয়াফ শুরু করা।
২. তাওয়াফ শুরু করার আগে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা অথবা স্পর্শ করা । সম্ভব না হলে দাগের ওপর দাঁড়িয়ে চলা শুরু করার সময় ২ হাত হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে মুখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে চক্কর দেয়া শুরু করা।
৩. হাজরে আসওয়াদ থেকে পবিত্র কাবা শরিফের দরজার দিকে অগ্রসর হওয়া। এর পর হাতিমে কাবার বাহিরে দিয়ে রুকনে শামি ও ইরাকি অতিক্রম করে রুকনে ইয়ামেনি বরাবর এসে তা স্পর্শ করা। যদি সম্ভব না হয়ে তবে হাতে ইশারা করা।
রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত আসতে এই দোয়া পড়া-
‘রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আ’জাবান নার।’ অর্থাৎ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়া এবং পরকালের কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আগুণ থেকে মুক্তি দান করুন।’
হাজরে আসওয়াদের কোনায় এসে আগের মতো আবারো স্পর্শ বা ইশারার মাধ্যমে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে চক্কর শুরু করা। এভাবে সাত চক্করের মাধ্যমে তাওয়াফ সম্পন্ন করা।
৪. যারা ইহরাম বেঁধে ওমরার জন্য ফরজ তাওয়াফ করবেন, তাঁদেরকে তাওয়াফের সময় অবশ্যই ইযতিবা করতে হবে। চাদরের মধ্যভাগ থাকবে ডান বগলের নিচে।
আর ফরজ তাওয়াফ না হলে সাধারণ তাওয়াফের বেলায় যে কোনো পোশাকেই তাওয়াফ করা যাবে।
৫. সম্ভব হলে হাতীমে ক্বাবায় দু’রাকাত নামাজ পড়ুন। এখানে কান্নাকাটি করে দোয়া করুন।
৬. মাকামে ইব্রাহীমকে বায়তুল্লাহ্ ও নিজের মাঝখানে রেখে দুই রাকাত নামায পড়ুন।
তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমে দু’রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। ভিড়ের জন্য যদি সম্ভব না হয় তাহলে আশে পাশে বা দূরবর্তী যে কোন স্থানে সহজ সম্ভব হয় পড়ে নিন।
প্রিয় পাঠক আশাকরি আমার অভিজ্ঞতা থেকে যে টিপসগুলো দেয়া হয়েছে, যারা নতুন ওমরাহ করতে যাবেন তাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে। এটাও বলে রাখি , জ্ঞান সল্পতার কারণে আমার লেখায় অনেক ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে । আপনাদের সু-পরামর্শ পেলে সাদরে গ্রহণ করা হবে।
(সুত্র : উইকিপিডিয়া)
চলবে….
একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (১ম পর্ব)
একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (২য় পর্ব)
একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (৩য় পর্ব)
একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (৪র্থ পর্ব)
একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (৫ম পর্ব)
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।