বিশ্বজিৎ চৌধুরী, চট্টগ্রাম:
একটি বছর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসছে খুশির ঈদ। আর মাত্র কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবান। আর এই ঈদে কার না মন চায় আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে মনের আনন্দে হারিয়ে যেতে। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে থাকে নতুন পোশাক, মজার মজার খাবার, সুন্দর পরিবেশে বেড়ানোর পরিকল্পিত নানা আয়োজন। খুশির এই ঈদে চট্টগ্রাম নগরের বুকে পাহাড় আর সবুজের বেস্টনীতে জেগে উঠা বিশাল জলরাশিতে ভরপর অরণ্যের মাঝে আনন্দ ভাগ করে নিতে নগরবাসী ও দেশী বিদেশী পর্যটকদেরকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে ফয়’স লেক কমপ্লেক্স যেখানে সব বয়সী মানুষের আনন্দ বিনোদনের জন্য রযেছে এ্যামিউজমেন্ট পার্ক. ওয়াটার পার্ক সী-ওর্য়াল্ড, ফয’স লেক রির্সোট ও বাংলো। ফয়’স লেক কমপ্লেক্স-এ ভ্রমণে আগত দর্শনার্থী পায় বাড়তি অনন্দ কেননা এখানে রয়েছে বিনোদনের সকল উপকরণ আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারের সকলকে নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে ঈদের দিন হতে পরবর্তী দশ দিন উপচেপড়া ভিড় থাকে নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো। চট্টগ্রাম শহরেবেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্র থাকলেও বেড়ানোর জন্য নগর বাসীর প্রধাণ আর্কষণ থাকে ফয়’স লেক। দেশের অন্যতম আর্কষণীয় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এখানে রয়েছে এ্যমিউজমেন্ট পার্ক, ওয়াটার পার্ক সী ওর্য়াল্ড, ফয়’স লেক রির্সোট ও বাংলো ।
এ্যমিউজমেন্ট পার্ক:
প্রাচ্যের রাণী খ্যাত ট্টগ্রাম শহরের বুক চিরে গড়ে ওঠা সবুজে ৩৩৬ একর জাযগা জুড়ে অবস্থিত নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক । প্রায় পাঁচ কিলামিটার জুড়ে আকাবাকা ফয়’স লেক। প্রবেশের পথ শেষে দেখা যাবে বিশাল এক তোরণ আর এই তোরণ পাড় করে ভেতরে প্রবেশ করলেই সিড়ি ভেঙ্গে উপড়ে উঠলেই দেখা মিলবে ফয়’স লেকের।
আর্কষনীয় এই বিনোদন কেন্দ্র দুই ভাগে বিভক্ত-এ্যমিউজমেন্ট পার্ক ও সী ওর্য়াল্ড। অ্যমিউজমেন্ট পার্ক সাজানো হয়েছে অনেকগুলো রাইড নিয়ে উল্লেখযোগ্য রাইড গুলোর মধ্যে রয়েছে সার্কাস সুইং,বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, ফেরিস হুইল,পাইরেট শিপ, কফিকাপ, রেড ড্রাইস্লাইড, ইয়োলো ড্রাই-স্লাইড, বাগ বাউন্স ইত্যঅদি। লেক ভ্রমনের জন্য আছে বোট, স্পিড বোট, ইঞ্জিন বোট, ওয়াটার-বি। খাবার-দাবারের জন্য অনকগুলো রেষ্টুরেন্ট যেখানে পাওয়া যায় দেশী-বিদেশী নানা রকম খাবার। এ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড রেষ্টুরেন্ট ঠিক পাশেই দেখা মিলবে হরেক রকম মাছের খেলা। লেকের উপড় ভেসে থাকা ফ্লোটিং রেষ্টুরেন্ট। পাহাড়ের ঠিক উপড়েই আছে ফটো কর্ণার যেখানে দেখা মিলবে নানা ভঙ্গিতে হরেক প্রাণীর ভাস্কর্য। লেকের গা-ঘেঁষেই তৈরি করা হয়েছে সমুদ্রিক প্রাণীদের ভাস্কর্য নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পিকনিক স্পট এ্যাকুয়াটিক জোন। ফয়’স লেকের দু-পাশে শুধুু যেন সবুুেজর সমারহ। জৈব বৈচিত্র্যে ভরপুর লেকের দুপাশ জুড়ে রয়েছে সারি সারি গাছ আর ঘন সবুজ। এখানকার বিভিন্ন পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে অরুণিমা, জলটুঙ্গি, গোধুলি, অস্তাচল, আকাশমণি.,বনশ্রী, হিমঝুরি, আসমানি, গগণদ্বীপ, উদয়ণ প্রভৃতি। এসব পাহাড়ে নানা প্রজাতির গাছগাছালির মধ্যে রয়েছে সেগুন, গর্জন, কড়াই, একাশিয়া, আগর, সোনালু, কনকচূড়া, রাধাচূড়া, কাঠবাদাম, ডুমুর, পাম, থাইকড়াই সহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ। ঔষধি গাছের মধ্যে রয়েছে বসাক, নিম, অর্জুন, বিশল্যকরণী, পাথরকুচি, দারুচিনি, স্বর্ণগন্ধা, মতমূলি সহ নানাপ্রজাতির গাছ। ফুলের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, রঙ্গন,জুঁই, চম্পা, করবী, বকুল, নয়নতারা, চেরি ইত্যাদি। এই সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে সব বয়সী মানুষদের জন্য কনকর্ড এন্টারটেইন্টমেন্ট কো: লি: গড়ে তুলেছে বিনোদন কেন্দ্র।
ওয়াটার পার্ক সী ওর্য়াল্ড:
ফয়’স লেকের বোট ষ্টেশন থেকে ইঞ্জিন বোটে দশ মিনিটের পথ পেরোলেই দেখা মিলবে দেশের সর্ববৃহৎ ওয়াটার পার্ক সী-ওর্য়াল্ড। ফয়’স লেকের একপ্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে জলের রাজ্যে এক রোমাঞ্চকর এই পার্ক। দিনভর সকলকে নিয়ে জলেকেলি উৎসবে মেতে উঠার জন্য রোমাঞ্চকর সব রাইডে গড়ে তোলা হয়েছে এ জায়গাটি। এখানকার সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থান কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত যা ওয়েভ-পুল নামে পরিচিত। সাগড়ের ঢেউয়ের মতোই ঢেউ খেলা করে এখানে। টিউবে চড়ে ঢেউয়ের তালে ভেসে বেড়ানো যায় ইচ্ছেমতো, ডুবে যাওয়ার ভয় থাকেন না এখানে। ওয়েভ-পুলের ঠিক পাশেই রয়েছে ড্যান্সিং জোন। কৃত্রিম বৃষ্টি, নানা রঙ্গের আলো আর মন মাতানো মিউজিক তালে তালে নেচে উঠে আগত দর্শনার্থীরা। চিলড্রেন পলটি সাজানো বাচ্চাদের উপযোগী অনেকগুলো রাইড নিয়ে যা দিয়ে অনায়াসে উপভোগ করতে পারে তাদের জন্য গড়ে তোলা এ স্বপ্ন রাজ্যটি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে মজা করার জন্য আছে ফ্যামিলি পুল। সামান্য উচু থেকে নিচের দিকে খুব দ্রুত নিচের দিকে পানির নিচে পড়ে মজা পায় দর্শনার্থীরা। বেশ উচু জায়গা থেকে আঁকাবাকা পথ পেরিয়ে পুলে ধপাস করে পড়ার মজা পাওয়া যাবে এখানকার স্লাইড ওর্য়াল্ডে । এছাড়াও মাল্টি স্লাইড, ডোম স্লাইড, প্লে-জোনের মতো মজার সব রাইড। ঈদের দিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত চলবে ডি-জে শো। ডি-জে মিউজিক আর পুলের ঢেউয়ে নেচে গেয়ে উঠার মজার তুলনা হয় না। তাই তরুণ তরুণীদের কাছে চট্টগ্রামের আনন্দ বিনোদনের সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় ওযাটার পার্ক সী ওর্য়াল্ড।
ফয়’স লেক রির্সোট:
ভিন্ন পরিবেশে ঈদের লম্বা ছুটি কাটাতে জন্য সঠিক গন্তব্য হতে পারে ফয়’স লেক রির্সোট ও বাংলো। রির্সোট যাওয়া ও আসার জন্য নৌপথ ব্যবহার করতে হয়। ওয়াটার পার্ক সী-ওর্য়াল্ড লাগোয়া রির্সোটে রয়েছে শীততপ নিয়ন্ত্রিত পাহাড়মুখী ও হ্রদমুখী কক্ষ যেখান থেকে উপভোগ করা যাবে সবুজ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। নিরিবিলি পরিবেশে লেকের পাশেই পাহাড়ের কোল ঘেষে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলো। এখানে থাকলে মনে হবে এ বুঝি জন মানবহীন নির্জন এক দ্বীপ। বাংলোর ঝুলন্ত বারান্দা থেকে প্রকৃতির স্পর্শ পাওয়া যায় সহজেই। রির্সোট্ ও বাংলোয় আগত পর্যটকদের খাবার-দাবারের জন্য রয়েছে মান সম্পন্ন রেষ্টুরেন্ট যা চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকে কাবার পরিবেশনের জন্য। অর্ডার দিলে পাওয়া যায় দেশী-বিদেশী সব মজাদার খবার।
ঈদের দিন থেকে দশ দিন দর্শনার্থীদের জন্য নানা রকম আয়োজনে খোলা থাকবে পুরো কমপ্লেক্স। ঈদের দশ দিন পর্যন্ত চলবে নানারকম আয়োজন। দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে গেম শো, মিউজিক্যাল শো এবং ছোট সোনামনিদের জন্য থাকছে ম্যাজিক শো। ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডে অনুষ্ঠিত হবে ডিজে শো। এত সব আয়োজনে ফয়’স লেক কমপ্লে´ হতে যাচ্ছে অনিবার্য গন্তব্য। প্রতি বছরের মতো এবার ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ঈদ উদযাপনের জন্য আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই ঈদ আনন্দে অনবিার্য গন্তব্য হতে চলেছে ফয়’স লেক কমপেক্স। তাই ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণ করতে মনে রাখুন ফয়’স লেক-এর কথা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।