হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তিন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচনের বাকি আর দুদিন। প্রচারণাও তুঙ্গে। চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শেষ মুহূর্তের প্রচারণায়। কর্মী-সমর্থকেরা নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের মন জয় করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটাররাও এখন ব্যস্ত চুলচেরা বিশ্লেষণে।
ভোটাররা বলছেন- বিএনপির কোন দলীয় প্রার্থী না থাকায় লড়াইটা আওয়ামী লীগের মধ্যেই হচ্ছে।
১৪ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির তিন ইউনিয়ন—সদর, সোনাইছড়ি ও ঘুমধুম ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সদর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তসলিম ইকবাল চৌধুরী ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আবছার চেয়ারম্যান প্রার্থী। এর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। এ ইউনিয়নে সদস্যপদে ১১ জন নারী ও ২৯ জন পুরুষ প্রার্থী রয়েছেন।
সোনাইছড়ি ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের
সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান বাহান মারমা ও সাধারণ সম্পাদক এ্যানিং মারমা চেয়ারম্যান প্রার্থী। তাঁরা সম্পর্কে দাদা-নাতি। এ্যানিং মারমা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। সেখান সদস্য পদে ৭ জন নারী ও ২৫ জন পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঘুমধুম ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ, বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ আহমদ ও স্বতন্ত্র সালেহ আহমদ চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে সদস্যপদের ১০ জন নারী ও ৩৫ জন পুরুষ সদস্য রয়েছেন।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রার্থীদের প্রচারণার মাইকিংয়ে মুখর নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগে ব্যস্ত প্রার্থীরা। কেউ কুশল বিনিময় করছেন। কেউ দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি।
ইসলামপুর গ্রামের গণসংযোগের সময় কথা হয় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’ বৃহস্পতিবার নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের বিভিন্ন গ্রামে নৌকার পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং পুত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রবিন বাহাদুর প্রচারণা চালিয়েছেন। এ কারণে ভোটাররা উৎফুল্ল। তসলিম ইকবাল চৌধুরী ভোটারদের কেন্দ্র গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
একই ইউনিয়নের ফুলতলী গ্রামে গণসংযোগের সময় কথা হয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আবছারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হলে বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা গ্রামের ভোটার নূর হোসেন বলেন, ‘প্রার্থীরা তো ভোটের আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোটের পর আর খবর থাকে না। তাই দেখেশুনে ভোট দেব, যাঁকে ভোটের পরেও পাব।’
এ ছাড়া অন্য দুই ইউনিয়নেরও চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাত-দিন সমানে চলছে প্রচারণা।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শফিউল্লাহ বলেন- মন্ত্রী বীর বাহাদুরের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সদরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তসলিম ইকবাল চৌধুরীর জয়ের ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। বাকি দুই ইউনিয়নেও নৌকার প্রার্থীরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কারণ বৃহৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলের প্রার্থীর জয় ছাড়া বিকল্প উপায় নেই। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃড় পদক্ষের জন্য সরকার তথা আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্তা বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন শফিউল্লাহ।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ বলেন- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রশাসনের যাবতিয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ১৪ অক্টোবর নির্বাচনকে ঘিরে নাইক্ষ্যংছড়ির তিন ইউনিয়নে দশ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও তিন জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চার প্লাটুন বিজিবি, পুলিশির নয়টি দল ও র্যাবের ছয়টি দল টহলে থাকবে। পাশাপাশি বহিরাগত ঠেকাতে পুলিশের বারটি অস্থায়ী তল্লাশিচৌকি বসবে।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ১২৩টি। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ৫ হাজার ৪৬৭টি আর পুরুষ ভোটার ৫ হাজার ৬৫৬টি। ঘুমধুমে মোট ভোটার ৯ হাজার ৩০১টি। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ৪ হাজার ৬১৯টি আর পুরুষ ভোটার ৪হাজার ৬৮২টি। সোনাইছড়িতে মোট ভোটার ৩ হাজার। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১ হাজার ৭২৩টি এবং পুরুষ ভোটার ১হাজার ৭৭৫টি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।