শনিবার, করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশসহ সাতটি দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেয় কুয়েতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস না থাকলেও কেন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় বাংলাদেশকে রাখা হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে কুয়েতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রধান কাউন্সিলর মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, এই সাতটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মানুষ কুয়েতে যায়।
আর দেশটির বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকার কারণে সতর্কতার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে কুয়েত।
“বিষয়টা করোনাভাইরাস আছে কি নাই সেটা না, বিষয়টা হলো করোনাভাইরাস বিমান বন্দরে পরীক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি নাই কুয়েতের,” বলেন মিস্টার আনিসুজ্জামান।
কুয়েতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের হিসাব মতে, দেশটিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। আর প্রতিমাসে অন্তত এক হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে যাওয়া-আসা করেন।
এই নিষেধাজ্ঞার কারণে, অনেকেই আকামা বা ভিসার সমস্যায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে কুয়েতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রধান কাউন্সিলর মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও যাতে ছুটিতে থাকা প্রবাসীরা ফিরতে পারেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা।
মিস্টার আনিসুজ্জামান বলেন, অন্য দেশের নাগরিকদেরও করোনা পরীক্ষা করা হবে।
এমনকি অন্য দেশে থাকা কুয়েতের নাগরিকরা দেশে ফিরতে চাইলে তাদেরকেও কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা জানিয়েছে দেশটি।
বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে মিসর, লেবানন, সিরিয়া, ফিলিপিন্স, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় বিমান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কুয়েত।
বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট বাতিল
এ নিষেধাজ্ঞার পর কুয়েতে দুটি ফ্লাইট বাতিল করার কথা জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসাইন জানান, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
“যেহেতু কুয়েত নাগরিকদের ঢুকতে দিচ্ছে না, তাই আপাতত ৭ তারিখ এবং ১০ তারিখে দুটি ফ্লাইট বাতিল করেছি আমরা”। এই দুই দিনের মাঝখানে অর্থাৎ ৮ ও ৯ মার্চ আর কোন ফ্লাইট নেই বলেও জানান মিস্টার হোসাইন।
বিপাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা
কুয়েতের এ পদক্ষেপের পর বেকায়দায় পড়েছে ছুটিতে দেশে ফেরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এমনই একজন ফেনীর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
১৯৮৭ সাল থেকে কুয়েত প্রবাসী মিস্টার জিন্নাহ বলেন, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। কুয়েতে ফেরার জন্য চলতি মাসের তিনি ৯ তারিখে এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সে টিকেট করেন।
পরে তিনি জানতে পারেন যে, কুয়েতে ফিরতে হলে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।
“এরপর আমি এয়ারলাইন্সে গেলাম আর মধ্যপ্রাচ্যের অনুমোদিত সেন্টারগুলোর সাথে যোগাযোগ করলাম। কিন্তু তারা আমাকে বললো যে তাদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার মতো সক্ষমতা নেই” তিনি বলেন।
এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা ভীত হয়েই এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের সাথে যোগাযোগ করে বিমানের টিকেট দুদিন এগিয়ে নিয়ে আসেন তিনি।
সে হিসেবে আজ ৭ই মার্চ শনিবার ভোর ৫ টার ফ্লাইটে কুয়েতে ফেরার কথা ছিল তার। সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যান তিনি।
কিন্তু তারপরও, কুয়েত নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বিমানবন্দরে গেলেও বোর্ডিং পাস দেয়া হয়নি তাকে।
“তারা আমাকে বোর্ডিং কার্ড দেয় নাই এবং আমার মতো আরো যাত্রীদেরকে দেয় নি” মিস্টার জিন্নাহ বলেন।
তাদেরকে জানানো হয় যে, বাংলাদেশসহ আরো সাতটি দেশের সব ফ্লাইট আগামী এক সপ্তাহর জন্য বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে কুয়েত।
মিস্টার জিন্নাহ বলেন, “প্রবাসী যারা দেশে আসে তাদের সবারই নির্দিষ্ট বাজেট থাকে দেশে খরচ করার। সেটা শেষ হয়ে যায়। আর নির্দিষ্ট সময় কাজে যোগ দিতে হয়। এমন অবস্থায় বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলে আমাদের মধ্যে উদ্বেগ অনেক বেশি তৈরি হয়”।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।