ইমরান হোসাইন, পেকুয়া
থানায় মানুষ বেড়াতে যায় না, যায় বিপদে পড়লে। এ দেশের চিরচেনা প্রবাদ এটি। কিন্তু এর ব্যত্যয় দেখা মিললো কক্সবাজারের পেকুয়া থানায়। প্রতিদিন বিকেল হলেই মানুষের ভীড় বাড়ে থানার ভেতরে। তবে অধিকাংশ মানুষ বিপদে পড়ে যায় না সেখানে। যায় বেড়াতে। পেকুয়া থানার বর্তমান পরিবেশ এতটা সুন্দর এবং মনোরম যে, যেকেউ তাতে আকৃষ্ট হন। প্রশান্তির জন্য থানায় ঢুঁ মারেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ !
রোববার বিকেলে পেকুয়া থানায় দেখা যায় এ চিত্র। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কয়েকজন গৃহিনী ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বেড়াতে গিয়েছেন সেখানে।
থানায় আগত দর্শনার্থীরা জানান, সুন্দর মনোরম পরিবেশের কারণে তারা বিকেল বেলার অবসর সময় কাটাতে থানায় আসেন। থানার ভেতরে সময় কাটিয়ে পান প্রশান্তি।
দর্শনার্থী শারমিন আক্তার বলেন, থানার ভেতরের বাগানে সূর্যমুখি, গাঁদা, রেড সিলভিয়াসহ দেশী বিদেশি নানা জাতের ফুলের বাগান রয়েছে। ফুলের বাগান ঘিরে আছে উন্নত টাইলসে বাধানো সুপরিসর বসার স্থান। তাছাড়া খোলা মাঠ আর পুকুর ঘাটেও রয়েছে আধুনিক স্থাপত্যের ছাপ। পুরো থানা এলাকা জুড়ে করা হয়েছে নান্দনিক আলোকসজ্জা। যা যেকোনো মানুষের মন জুড়িয়ে দেয়। তাই বান্ধবীদের সাথে নিয়ে থানায় বেড়াতে এসেছি। থানার ভেতর ঘুরে আমি আর আমার বান্ধবীরা খুবই প্রফুল্ল। সুন্দর পরিবেশে নিজদের অনেক ছবি তুলেছি।
পেকুয়া উপজেলার সচেতন সমাজের প্রতিনিধি ও রিপোর্টার্স ইউনিটি পেকুয়ার সভাপতি মোঃ ফারুক বলেন, ওসি কামরুল আজম পেকুয়া থানায় যোগদানের পর থেকে মূলত থানার চেহারা পাল্টাতে থাকে। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাত্র পাঁচ মাসে পেকুয়া থানা এখন শুধুমাত্র দর্শনীয় স্থান নয়, সেবাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশি সেবার মান বেড়ে এখন শতভাগ। দায়িত্বশীল আচরণে থানা পুলিশ বর্তমানে পেকুয়ার সর্বস্তরের মানুষের আস্থার স্থান। নিরহ, অসহায়, নির্যাতিতদের শেষ ভরসাস্থল।
পেকুয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ পরিদর্শক কামরুল আজম পেকুয়া থানায় ওসি হিসেবে গত ২৯ আগস্ট যোগদান করেন। যোগদানের প্রথম সপ্তাহ থেকে তিনি থানার অবকাঠামোগত উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। ইতিমধ্যে বাউন্ডারি ওয়াল, বারান্দা, অফিসার রুম, ডিউটি অফিসার রুম ও সিড়ি নতুনভাবে রং করা হয়েছে। নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে স্যালুটিং ডায়াস, সাইড ওয়াল, পুকুর ঘাট, গোল ঘর, ক্যান্টিন, গভীর নলকূপ। পুরো থানা এলাকা আনা হয়েছে সিসিটিভির আওতায়। স্থাপন করা হয়েছে ১৬টি সিসি ক্যামেরা। তৈরি করা হয়েছে ফুল বাগান, খেলার মাঠ। পুকুর সংস্কার করে দেয়া হয়েছে মাছ। পুকুর পাড় আর খেলার মাঠের পাশে লাগানো হয়েছে নানা ফলদ গাছের চারা। যার মধ্যে রয়েছে পেপে, আমড়া, জলপাই, আমলকি, বরই, আম ও পেয়ারা গাছ। তৈরি করা হয়েছে গাড়ির গ্যারেজ, পুলিশ সদস্য থাকার কক্ষ, সংস্কার করা হয়েছে পুরাতন রান্নাঘর। টাইলস লাগানো হয়েছে থানার নিচের বারান্দা, টয়লেট, উপরের তলা, অফিসার কক্ষ, ডিউটি অফিসার কক্ষ ও পুলিশ সদস্যদের গোসল খানায়। নান্দনিক নানা লাইট স্থাপন করা হয়েছে পুরো থানা এলাকায়। থানার চারপাশে ও মুল ফটকে বসানো হয়েছে লাইট বক্স। নিমার্ণ কাজ চলমান রয়েছে ওমেন হেল্প ডেস্কের।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মডেল পুলিশিং কার্যক্রমের সবটাই এখন পেকুয়া থানায় দৃশ্যমান। কোনরকম হয়রানি ছাড়া মানুষ পাচ্ছে কাঙ্খিত সেবা। একজন ওসির সদিচ্ছায় যে পুলিশিং সেবার চেহারা পাল্টে দিতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজম। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এইটুকু আমার মূল্যায়ন।
পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজম বলেন, আমি বিশ্বাস করি সুন্দর পরিবেশ মানুষকে ভালো কাজে প্রভাবিত করে। তাই আমি পেকুয়া থানায় এসে চেষ্টা করেছি পরিবেশটা সুন্দর করতে। তারচেয়ে বেশি চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষকে যথাযথ সেবা দিতে। নিশ্চিত করেছি পুলিশের সেবা যেন প্রান্তিক পর্যায়ে পৌছায়। কারণ এটাই আমাদের দায়িত্ব। সেটাই নিশ্চিত করতে আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।